সাধু, আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমার নাম সালাম শাহ্। আমি লালন একাডেমির একজন সাবেক খাদেম। এই ছেঁউড়িয়ারই ছেলে। অনেক বছর যাবৎ লালন মাজারে থাকি। নিয়মিত গান-বাজনা করি। আগে খাদেম ছিলাম, ঐ দরজায় বসে থাকতাম। পরে আমি নিজেই একসময় বলি স্যার আমাকে বাদ দিয়ে দেন! আমি শিল্পী মানুষ, সারা দেশে গান বাজনা কররে বেড়াই।
আজকে যে উৎসব চলছে এটা দোল পূর্ণিমা। বারো মাসে বছর, কিন্তু দোল পূর্ণিমা একটাই। এই দোলের দিনে লালন সাঁইজি ভক্তবৃন্দ নিয়ে তাঁর আমলে উদযাপন করতেন। সেই ছিলছিলায় এখনো যাঁরা সাধুগুরু আছেন সবাই মিলে লালন একাডেমির লোকজনসহ এবং প্রশাসনিক সহায়তায় নিয়মিত এই দোল পূর্ণিমা সুন্দর পরিবেশে পালন করা হয়।
আপনি তো ছেঁউড়িয়ারই ছেলে। আপনি কীভাবে লালন সাঁইজির সাথে পরিচিত হলেন?
ছোটকাল থেকেই এখানে আমার ওঠা-বসা। আমার পরিবারের কেউ জড়িত নাই এর সাথে। আমি এখানে আসার পর প্রবীণ শিল্পী যারা ছিলেন যেমন মকসেদ সাঁই, খোদা বক্স ওনাদের সঙ্গে বসে গান শুনতাম। তখন গাইতাম না। ওনাদের পাশে বসে শুধু শুনতাম। এখন তাঁদের কেউ আর বেঁচে নেই!। এভাবে আস্তে আস্তে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হলো, যে আমি লালন সাঁইজিকে ভালোবেসে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই করিনি। শুধু গান করি।
লালন সাঁইজির গান কেবল কুষ্টিয়া জেলা না। ঢাকা, চিটাগং, রংপুর, সিলেট, বগুড়া, দিনাজপুর, খুলনা এমন সব জেলাতেই আমি গান গেয়ে থাকি। সাঁইজির গানের কথা আমার খুব ভালো লাগে। মানুষের জন্য লালনের এই দর্শন খুব দামি জিনিস। যে না বোঝে তার কাছে কিছুই না। আর যে বোঝে তার কাছে সোনার মেডেলের চাইতেও অনেক দামি। উনাকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।
আমার গুরু ছিলেন নিজাম শাহ্। লালন সাঁইজির মাজার প্রাঙ্গণে তাঁর দেহ রয়েছে। উনিও অনেক আগে এই মাজারের খাদেম ছিলেন। উনি প্রায় একটানা ত্রিশ বছরেরও বেশি খাদেমের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লালনের তত্ত্ব-কথা দর্শন, সাঁইজি জীবিত থাকাকালীন কি ঘটেছে এই এলাকায় সেগুলো আমার গুরুর কাছ থেকেই আমার নোট নেওয়া।
সাধু আপনার সংসার জীবন আছে?
জ্বি, আমি বিবাহিত। আমার তিনটা মেয়ে, একটা ছেলে। আমি তাদের এই লাইনে আনিনি। কারণ বাস্তবতা হলো তাতে ওদের চলতে কষ্ট হবে।
লালন সাঁইজির একটা কালাম ধরে যদি আমাদের কিছু কথা শোনাতেন।
সাঁইজির যেমন প্রচলিত গান আছে, তেমন অনেক অপ্রচলিত গান আছে। আমি অনুরোধ করবো সেগুলো সবাই শুনবেন। এছাড়া খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, মিলন হবে কতদিনে, সত্য বল সুপথে চল, অপার হয়ে বসে আছি এই জনপ্রিয় গানগুলো শুনতে থাকুন। শোনার মতো শোনা হলে একসময় এখান থেকেও মর্ম উপলব্ধি হবে।
ধন্যবাদ সাধু আপনাকে।
ধন্যবাদ হ্যালো বাংলাদেশের পাঠকদের।