কী নামে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় তাহসানকে? পুরো নাম তাহসান রহমান খান, ‘ব্ল্যাক’ ব্যান্ড দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ধীরে ধীরে তা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রং ও রূপে। অফবিট নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু তার, আবার উপস্থাপনাতেও দেখা গেছে হরহামেশা। বিশেষ করে মঞ্চে কোনো আয়োজন হলেই দেখা যেত তাকে। আন্তর্জাতিক মানের কোনো শিল্পী দেশে এলেই তিনি হতে মাস্টার অব সেরেমনি। ইউ গট দ্যা লুকের একাধিক আসর তিনি সঞ্চালনা করেছেন। আবার কর্পোরেট জগতেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সেখান থেকে শিক্ষকতা। পাশাপাশি একক সঙ্গীত জীবন। সবকিছু মিলিয়ে তাহসান খান একটি এমন নাম যা দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে বাংলাদেশের বিনোদন জগতকে চাঙা করে রেখেছেন।
সম্প্রতি তিনি খবরের শিরোনামে এলেন শাকিব খানের প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। সেই আয়োজনের ফাঁকে ‘হ্যালো বাংলাদেশ’র মুখোমুখি হন তাহসান।
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বরাবরই খোলামেলা কথা বলা তাহসান জানান, মেঘে মেঘে বেলা বয়ে গেছে অনেক। এখন বয়সও হয়ে গেছে। এই সময়ে আসলে ভালো কাজের জন্য মনটা মুখিয়ে থাকে।
ক্যারিয়ারের ২৫ বসন্ত শেষে ২৬তম বসন্তের শুরুতে খানিকটা শিক্ষতার সুরেই কথা বলা শুরু করেন তিনি। বলেন, ১৯৯৯ সালে ব্ল্যাকের মাধ্যমে মিডিয়াতে আমার প্রবেশ। এখন পর্যন্ত যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি দর্শকের কাছ থেকে তা আসলে আশীর্বাদের মতো। কোনো অর্থ, কোনো স্ট্যাটাস দিয়ে এর তুলনা হতে পারে না।
তাহসান খান বলেন, এত বছর কাজের পরে একটি সিনিয়রিটি চলে আসে। সেই সিনিয়রিটি দিয়ে শুধু সালাম বা বসার জন্য সামনের চেয়ার পাওয়ার ব্যাপারটা থাকে না। বরং ভালো কাজ করার একটা তাগিদও মনের মাঝে তৈরি হয়।
ভালো কাজের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তাহসান। তিনি বলেন, মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া খুব সহজ নয়। তারচেয়েও কঠিন ব্যপার হলো মৌলিক কাজ দিয়ে মানুষের মনে টিকে থাকা।
তাহসান জানান, ২০২৪ সালে তার জন্য খুব দরকার ছিল ‘আজ মন খুশি’ গানটির শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়া। তাসনিয়া ফারিণের সাথে গাওয়া গানটি এ বছরের অন্যতম আলোচিত একটি গান। একারণেই রিমার্ক-হারল্যানের সাথে তিনি জুটি বেধে এমন কাজ করতে যাচ্ছেন যেন তার এই কাজের গতি বেড়ে হয় কয়েকগুন।
এই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হওয়াতে প্রতি মাসে একটি করে নতুন গান তৈরি করে নিজের ইউটিউবে রিলিজ করবেন তাহসান খান। এর পৃষ্ঠপোষকতায় থাকবে প্রতিষ্ঠানটি। শাকিব খানকে তিনি এই জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
তাহসান বলেন, শাকিব খানের সাথে আমার কাকতালীয় কয়েকটা মিল আছে। যেমন- তার আর আমার জন্ম সাল একই। আবার তার প্রথম ছবি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে, ব্ল্যাকেরও তাই। এবার একটু দেরিতে হলেও শাকিবের সাথে তার কাজ করার শুরুটা হয়েছে, এটাও বড় পাওয়া।
আলাপের ফাঁকে তাহসান বলেন, অনেক কিছুই তো এখনও করা হয়নি। যেমন এই যে মেগাস্টার শাকিব খান, তার জন্য কখনও প্লেব্যাক করা হয়নি আমার।
হ্যালো বাংলাদেশের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনি (শাকিব খান) যেহেতু আমাকে তার প্রতিষ্ঠানের সাথে একাত্মতা প্রকাশে ডেকেছেন, হয়তো ভবিষ্যতে তার জন্য গানও করা হতে পারে। কোনো সম্ভাবনাকেই পেছনে ফেলার নেই।
এর আগে তাহসানের প্লেব্যাক ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে এই মন’ গানটি শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে দিয়েছিল। এতে তার গানে লিপসিং করেন আরিফিন শুভ। তাহলে কি আসছে নতুন গান শাকিব ও তাহসান জুটিতে? উত্তরে স্বভাবসুলভ হাসি দিলেন তাহসান। রহস্য থাকতে থাকতে আরেক প্রশ্ন, আর বড় পর্দায়? একইভাবে উত্তর দিলেন তাহসান, ওই যে, কোনো সম্ভাবনাই ফেলে দেবার নয়। মেগাস্টার চাইলে কি না হয়, বলে শাকিবের দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি।
সব শেষে তাহসান খান বলেন, আবারও শিক্ষকের মতোই বলতে হয়, দীর্ঘদিন কাজ করলে দেশ ও মানুষের জন্য যে দায়বদ্ধতা তৈরি হয়, সেই দায়বদ্ধতাই মাথায় রেখে কাজ করে যাব। কারণ আমি এই দেশেরই মানুষ। আর দেশও আমাকে ভালোবাসে বলেই তারা আমার কথা শুনতে চায়, গান উপভোগ করতে চায়।