ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ বর্তমানে উদ্বেগজনক স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এর প্রকোপ আরও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।
ছত্রাকের সংক্রমণ কেন বাড়ছে এর প্রতিরোধ এবং সতর্কতাসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এভার কেয়ার হাসপাতালের কনসালটেন্ট, ডার্মাটোলজি ও ভেনোরোলজি বিভাগের প্রফেসর ডাঃ হাসিবুর রহমান।
কেন বাড়ছে ছত্রাকের সংক্রমণ?
ফাঙ্গাস বা ছত্রাক সংক্রমণ বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে জানান এই কনসালটেন্ট। তিনি বলেন, প্রতিদিনই আমরা নতুন নতুন ছত্রাকজনিত সংক্রমণের রোগী পাচ্ছি। বিশেষ করে ত্বক ও নখের ছত্রাকের প্রকোপ বাড়ছে। অনেক রোগী নিজে থেকে ওষুধ খেয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করে ফেলছেন। ফলে চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বেশিরভাগ সময় রোগী বুঝতে পারেন না যে এটি ছত্রাকজনিত রোগ। শুরুতে চিকিৎসা না নিলে এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে ফুসফুস, সাইনাস ও চোখে ছড়িয়ে মিউকরমাইকোসিস (ব্ল্যাক ফাঙ্গাস)-এর মত মারাত্মক অবস্থা তৈরি করতে পারে।
ত্বক ও নখের ছত্রাকের প্রকোপ বাড়ছে, ছবি: বডি অ্যান্ড সোল
অতিরিক্ত জীবাণুনাশক ব্যবহার
কোভিড মহামারির সময় জীবাণুনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে ফেলেছে। ফলে শরীর সহজেই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন
গরম ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ফাঙ্গাস দ্রুত বাড়ে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত ঘাম ও ভেজা পোশাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
আক্রান্ত ত্বকের সংস্পর্শ
ফাঙ্গাল ইনফেকশনযুক্ত ব্যক্তির ত্বকের সঙ্গে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শে এলে সহজেই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ে।
ডায়াবেটিস ও অন্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ
ডায়াবেটিস রোগীদের শরীর ছত্রাক সংক্রমণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। এছাড়া ক্যান্সার, এইচআইভি কিংবা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর যেসব রোগী ইমিউনো-সাপ্রেসিভ ওষুধ সেবন করেন, তারা এই সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করেন। যা ফাঙ্গাসকে ওষুধ প্রতিরোধী করে তোলে। ফলে সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদি ও কঠিন হয়ে পড়ে।
সঠিক চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলুন, ছবি: বডি অ্যান্ড সোল
প্রতিরোধের সহজ উপায়
ফাঙ্গাল সংক্রমণ এক সময় শুধু সাময়িক চর্ম রোগ বলেই বিবেচিত হতো। কিন্তু বর্তমানে এটি প্রাণঘাতী সংক্রমণে পরিণত হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতা বাড়ানোই হতে পারে একমাত্র প্রতিরোধ। নিচে কয়েকটি উপায় দেয়া হলো।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা
শরীরের ভেজা অংশ দ্রুত শুকিয়ে ফেলুন এবং পরিষ্কার রাখুন। বর্ষাকালে পায়ে নিয়মিত পাউডার ব্যবহার করুন ও খোলা জুতা পরুন ।
আঁটসাঁট পোশাক পরিহার
ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরিধান করুন। যাতে ঘাম শুষে নেয় এবং বাতাস চলাচল করতে পারে।
ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ভাগাভাগি করবেন না
চিরুনি, তোয়ালে, জামাকাপড় ইত্যাদি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করুন। এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারের উপকরণ ভাগাভাগি করলে ছত্রাকজনিত রোগ বাড়ে।
আক্রান্ত ত্বকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
ফাঙ্গাল ইনফেকশনযুক্ত ব্যক্তির ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ নয়
সঠিক চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলুন। নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিস বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকলে নিয়মিত চেকআপ করান।
ফাঙ্গাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা ও সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললে এই সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
