স্বাদের কারণে লিচুর চাহিদা যেমন তুঙ্গে, তেমনি এতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী নানা উপাদান। গ্রীষ্মের এই সময়ে এই ফল শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সব ধরনের ভিটামিন আর খনিজে ভরপুর এই ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানির উৎস। তবে এই মিষ্টি ফলের কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে। যা অনেকেই জানেন না। এর টক্সিন মস্তিষ্কে চলে গেলে জ্বর, খিঁচুনি, মস্তিষ্কে প্রদাহ, পেটের সংক্রমণ হতে পারে। তাই ফলটি কীভাবে খাবেন ও কখন খাবেন, তা জেনে নেওয়া ভাল।
বিভিন্ন জাতের লিচুতে ভরপুর ফলের দোকান। গরমের দিনে আম-লিচু না খেলে কি আর চলে! তবে এর মধ্যে এমন সব বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা শরীরে গেলে মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেন, সিজনাল এই ফলের টক্সিন মস্তিষ্কে চলে গেলে জ্বর, খিঁচুনিসহ পেটের সংক্রমণ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি শিশু ও বয়স্কদের। তাই সাবধান হওয়া জরুরি।
এই ফলের ভাল দিক
লিচু খুব উপকারী ফল। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ। যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে। যা শরীরের জন্য ভাল। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে অলিগোনল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ নাইট্রিক অক্সাইড থাকলে হার্টে রক্ত চলাচল ভাল হয়। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

লিচুতে ক্যালোরি কম, ফাইবার বেশি, ছবি: ইন্টারনেট
এতে ক্যালোরি খুব কম, ফাইবার বেশি। তাই পরিমিত পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ফলটির এক কাপে ক্যালোরির পরিমাণ ১২৫। তাই চট করে ওজন বেড়ে যাবার ভয় নেই। এতে থাকে ফ্ল্যাভেনল, যা শরীরের প্রদাহ কমায়।
লিচুর খারাপ দিক
লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন ও মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন (এমসিপিজি) নামক কিছু টক্সিনও থাকে। এই দুই রাসায়নিক বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। যদি অধিক পরিমাণে খাওয়া হয় ও খালি পেটে খাওয়া হয়, তা হলে এই দুই রাসায়নিকের প্রভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমে যেতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর থেকে জ্বর, ঘন ঘন বমি, খিঁচুনি, মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হতে পারে। খাদ্যনালিতে সংক্রমণও হতে পারে। রোগের বাড়াবাড়ি হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
লিচুর টক্সিন থেকে লিভারের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যাঁরা লিভারের কোনও জটিল অসুখে ভুগছেন, তাঁদের এই ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেনার সময় নজর রাখুন
কাঁচা বা আধপাকা, পচন ধরে যাওয়া ফল কিনলে বিপদ হতে পারে। অপরিপক্ব ফলে হাইপোগ্লাইসিন এর মাত্রা বেশি থাকে। যা শরীরে শর্করা তৈরি করতে বাধা দেয়। এর প্রভাবে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাছাড়া এর বীজ ও শাঁসে এমসিপিজি রাসায়নিক থাকে। যা থেকে এনসেফেলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
লিচু কখন ও কীভাবে খাবেন
খালি পেটে কখনোই লিচু খাওয়া যাবে না। দিনের বেলায় কিছু খাবার খেয়ে তার পর খেতে হবে। রাতের বেলায় লিচু খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
দিনে ৭-৮টির বেশি খাওয়া ঠিক নয়। ডায়াবিটিস থাকলে ভরা পেটে ৬টি খাওয়াই যথেষ্ট। বিকেলের পর আর লিচু খাবেন না।
শিশুদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুদের খালি পেটে কখনো এই ফল খেতে দেওয়া যাবে না। হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে শিশুর শরীরে হঠাৎ করে শর্করার অভাব দেখা দেয়। কিছু টক্সিন তৈরি হয়। টক্সিনগুলো মস্তিষ্কে চলে যায়। ফলে শিশুর মাথাব্যথা, বমি, ঘাম, খিঁচুনি হতে পারে এবং শিশু অচেতন হয়ে পড়তে পারে। আধ-পাকা ও কাঁচা ফলে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এভাবে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি শিশু মারা যায়। তবে যেসব শিশু বেশি অপুষ্টির শিকার, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই ফল খাবার সময় শিশুর খদ্যনালিতে যাতে বিচি আটকে না যায় সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
তাই শিশুদের খাওয়ানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। লিচু যেন পাকা হয় এবং শিশু যেন অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার পরে না খায়। ২-১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।