দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো ব্রেকফাস্ট বা সকালের নাস্তা। এটি শরীরের শক্তি যোগায়, মেটাবলিজম সক্রিয় করার পাশাপাশি দিনভর কর্মক্ষম রাখে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ঝাল না মিষ্টি ব্রেকফাস্ট কোনটি স্বাস্থ্যকর? এ নিয়ে নানা গবেষণা হয়েছে। প্রতিটি বিকল্পের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই নিবন্ধে থাকছে ঝাল-মিষ্টি নাস্তার নানান খুঁটিনাটি।
ঝাল ব্রেকফাস্টের উপকারিতা
- ঝাল খাবারে সাধারণত প্রোটিন, ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। যেমন- ডাল-পরোটা, ভেজিটেবল উপমা বা ডিম-রুটি খেলে শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি বজায় থাকে।
- ঝাল খাবারে থাকা মসলা যেমন-হলুদ, আদা, রসুন ও জিরা হজম সহায়ক। এগুলো অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি করে হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- গবেষণায় দেখা গেছে যে ঝাল খাবারে উপস্থিত ক্যাপসাইসিন (যা মরিচে থাকে) বিপাক হার বাড়ায়, ফলে ক্যালোরি দ্রুত পোড়ে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ঝাল খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে এবং এতে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

সঠিক পুষ্টির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ ব্রেকফাস্ট গুরুত্বপূর্ণ, ছবি: দ্য় ভিগান বেব
মিষ্টি ব্রেকফাস্টের উপকারিতা
- ওটমিল, ফল, মধু বা দই জাতীয় মিষ্টি খাবার দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- গবেষণায় দেখা গেছে যে কম পরিমাণ প্রাকৃতিক চিনি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ফলে পরীক্ষার আগে বা মানসিক চাপের সময় হালকা মিষ্টি ব্রেকফাস্ট ভালো হতে পারে।
- দই, চিয়া সিড ও ওটস হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে, কারণ এতে উচ্চমাত্রার প্রোবায়োটিক ও ফাইবার থাকে।
- চকলেট, ফল বা মধুর মতো মিষ্টি উপাদান ডোপামিন ও সেরোটোনিন নিঃসরণ ঘটায়, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

ঝাল নাকি মিষ্টি কোন ব্রেকফাস্ট স্বাস্থ্যের ভালো, ছবি: মাহিয়াই ট্যাবল
কোনটি বেশি উপকারী?
সঠিক পুষ্টির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ ব্রেকফাস্ট গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন স্পাইক ঘটিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অপরদিকে, অতিরিক্ত ঝাল খাবার গ্যাস্ট্রিক বা অম্লতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে ঝাল ব্রেকফাস্ট দীর্ঘক্ষণ শক্তি প্রদান করে, হজমে সহায়তা করে এবং বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। অন্যদিকে, মিষ্টি ব্রেকফাস্ট দ্রুত শক্তি যোগায় ও মানসিক স্বস্তি দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদরা সকালে ঝাল ব্রেকফাস্ট খাওয়ার পরামর্শ দেন।
সকালে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখা অনেক উপকার বয়ে আনে—এবং এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের কোষগুলোকে নিউরন বলা হয়। তারা রক্তে শর্করার ওঠানামার প্রভাব শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই অনুভব করে। এর মাত্রা বেড়ে গেলে নিউরন প্রদাহ, গ্লাইকেশন (চিনির কারণে কোষের ক্ষতি) এবং ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের শিকার হতে পারে, যা ব্রেইন ফগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি আমাদের স্মরণশক্তি, মনোযোগ, ভাষাগত দক্ষতা বা যুক্তির ক্ষমতা হ্রাস করে এবং আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে ঝাল ব্রেকফাস্ট খাওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: ভোগ ও শিকাগো ওয়াফেল