Home স্বাস্থ্য জেনে নিন এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

জেনে নিন এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

হ্যালো বাংলাদেশ ডেস্ক
৬৮ views

করোনার মতো হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস বা এইচএমপিভি নামের এক ভাইরাস মানুষের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। শুরুতে  চীন ও জাপানে সংক্রমণ দেখা যায়, পরে ভারতেও সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ভারতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা সাত। অনেক বিশেষজ্ঞ এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণে মহামারির আশঙ্কা করছেন। তবে এটি বড় কোনো হুমকি নয় বলে জানিয়েছে চীন।

এইচএমপিভি ভাইরাস কী

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে তারা এই ভাইরাস সম্পর্কে জানিয়েছিল। এটি শ্বাসতন্ত্রের ওপর ও নিচের অংশকে সংক্রমিত করে। শিশু, প্রবীণসহ সবাই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের এই ভাইরাসে বেশি সংক্রমিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি।

এইচএমপিভি সংক্রমণের লক্ষণ

করোনার মতো এই ভাইরাস সংক্রমণেরও প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—জ্বর, সর্দি ও কাশি। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে লক্ষণ দৃশ্যমান হয়।

যেভাবে ছড়ায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি, কাশি, হ্যান্ডশেক, স্পর্শের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের মতো নাক, চোখ ও মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই কোভিড–১৯ প্রতিরোধের মতোই এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা ও আক্রান্ত বা উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এইচএমপিভির চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

আমেরিকান লাংগস অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, এইচএমপিভি ভাইরাস সংক্রমিত হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর নিজে থেকেই সেরে যায়। তাই এ ভাইরাসের চিকিৎসায় মূলত উপসর্গ প্রশমনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উপসর্গ প্রশমন করে রোগীকে কিছুটা আরাম দেওয়ার যেতে পারে যেসব উপায়ে—

–ব্যথা ও জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
–নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতে ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার ব্যবহার করা যেতে পারে।
–শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ন্ত্রণ করতে বা গুরুতর শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে সাময়িক ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ ছাড়া রোগীর অবস্থা বিবেচনায় প্রয়োজনে চিকিৎসক স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, যেমন—প্রেডনিসোন সুপারিশ করতে পারেন। প্রিডনিসোন হলো একটি গ্লুকোকোর্টিকয়েড ওষুধ, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অতি সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রধানত হাঁপানি, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) এবং রিউমাটোলজিক রোগের মতো প্রদাহজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।

প্রতিরোধের উপায়

এইচএমপিভি ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে এবং অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে কোভিড–১৯–এর মতোই সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা হাতের কনুই দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে। বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরতে হবে। বাইরে থেকে এসে ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তবে যারা জটিল শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত বা দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ যেমন—সিওপিডি, অ্যাজমা বা পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত, তাঁদের সুরক্ষার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এ ছাড়া অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মতো টিকা নিতে হবে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সাবেক পরিচালক ও গুরগাঁওয়ের মেদান্তা ইনস্টিটিউট অব ইন্টারনাল মেডিসিন, রেসপিরেটরি এবং স্লিপ মেডিসিনের চেয়ারম্যান ড. রণদ্বীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, এইচএমপিভি ভাইরাস (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই।

তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসটি নতুন নয়। এটি সাধারণত মৃদু সংক্রমণ ঘটায়। অনেক দিন ধরেই এই ভাইরাস রয়েছে। এর সংক্রমণে সাময়িক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তবে নবজাতক, শিশু, প্রবীণ ও যাঁরা কো–মরবিডিটির (উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ, রক্তস্বল্পতা, স্থূলতা) সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের নিউমোনিয়া হতে পারে। বেশি শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।’

ভারতের কর্ণাটক, গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে এখন পর্যন্ত সাতজনের মধ্যে এইচএমপিভি ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের বয়স ৩ মাস থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত। তবে যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, কারণ এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ