কেউ কোন বোকামি বা ভুল করলে তাকে ‘গাধা’ বলে কটাক্ষ করার চল শুধু আমাদের দেশেই না, সারাবিশ্বেই আছে। অথচ আমরা অনেকেই জানি না প্রাণী হিসেবে গাধা কতটা গুরুত্ব বহন করে। আজ ৮ মে বিশ্ব গাধা দিবস। প্রাণিবিজ্ঞানী আর্ক রাজিক ২০১৮ সালে এই দিবসের সূচনা করেন। মরুভূমির প্রাণী নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, গাধারা মানুষের জন্য অসংখ্য কাজ করলেও তাদের যথাযথ স্বীকৃতি মেলে না। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করেন এবং সেখানে এই প্রাণী সম্পর্কিত নানা তথ্য ও সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন।

গাধার চামড়ার নিচে থাকা একটি বিশেষ আঠালো পদার্থ ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করা হয়, ছবি: ফ্রিপিক
ইতিহাস অনুযায়ী, গাধা প্রায় ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই মানুষের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Equus africanus asinus। এরা মূলত আফ্রিকার বন্য গাধার বংশধর। গাধার দুটি প্রধান প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো উভয়ই আফ্রিকান বন্য গাধার উপপ্রজাতি—এরা হলো সোমালি বন্য গাধা এবং নুবিয়ান বন্য গাধা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গাধা রয়েছে চীনে। সেদেশে গাধার গাধার চামড়ার নিচে থাকা একটি বিশেষ আঠালো পদার্থ ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করা হয়, যা অ্যাজমা থেকে শুরু করে ইনসোমনিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে ওষুধ শিল্পে গাধার এই ব্যবহারের ফলে দেশটিতে ধীরে ধীরে প্রাণীটির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
চলুন আজ বিশ্ব গাধা দিবসে এই প্রাণীটিকে নিয়ে এমন আরও ১০টি চমকপ্রদ তথ্য জেনে নেই-
- গাধার ইতিহাস ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এরা প্রথম গৃহপালিত হয় প্রাচীন আফ্রিকায়, বিশেষ করে মিশরে। হাজার হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ গাধাকে মালবাহী ও পরিবহন কাজে ব্যবহার করে আসছে।
- গাধা কখনো “বোকা” নয় বরং ধীরস্থির ও নিরাপত্তা-সচেতন প্রাণী। ঝুঁকি বুঝে পদক্ষেপ নেয় — একে “জিদ” বা “বোকামি” মনে করাটা পুরোপুরি ভুল।
- গাধা দীর্ঘদিন পরে দেখা কোনো স্থান বা ব্যক্তিকে মনে রাখতে পারে — এমনকি ২০-২৫ বছর আগেরও! এর স্মৃতিশক্তি বিস্ময়কর।
- গাধা উচ্চস্বরে চিৎকার করে (যাকে বলা হয় “bray”) দূরে থাকা সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একেকটা গাধার “আওয়াজ” আবার একে-অন্যের থেকে আলাদা।
- গাধা গরম, শুষ্ক, পানিশূন্য অঞ্চলেও সহজে টিকে থাকতে পারে। এটি মরুভূমির মতো কঠিন পরিবেশেও খুব অল্প পানি ও খাদ্যে টিকে থাকতে পারে।

গাধা কখনো “বোকা” নয় বরং ধীরস্থির ও নিরাপত্তা-সচেতন প্রাণী, ছবি: পেট হেল্পফুল
- বিশ্বজুড়ে গাধার প্রায় ১৮০টিরও বেশি জাত রয়েছে। প্রতিটি জাতের আকার, গঠন ও আচরণে ভিন্নতা দেখা যায়।
- শক্তি ও ধৈর্যের প্রতীক গাধা তার শরীরের দ্বিগুণ ওজন পর্যন্ত মালপত্র বহন করতে সক্ষম। এজন্যই পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলে এটি এখনো অব্যর্থ সহায়ক।
- গাধার দুধে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন C, ওমেগা-৩সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে। কসমেটিক ও চিকিৎসাজগতেও এর চাহিদা বাড়ছে।
- অনেক খামার বা গ্রামে গাধাকে সুরক্ষা প্রাণী হিসেবে রাখা হয় কারণ এটি অপরিচিত বা হিংস্র প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলে চিৎকার করে সতর্ক করে দেয়।
- গাধা ও জেব্রার মিলন থেকে তৈরি প্রাণীকে বলা হয় Zonkey — দেখতে যেমন অদ্ভুত, তেমনই বিরল ও আকর্ষণীয়।
গাধা শুধু “মালবাহক” নয় — এটি একাধারে পরিশ্রমী, সঙ্গী, এবং এক অনন্য প্রাণী। বিশ্ব গাধা দিবসে আসুন, এই পশুটির অবদানকে সম্মান জানাই এবং তার কল্যাণে সচেতন হই।