বাংলাদেশের সঙ্গে গত প্রায় দেড় দশক পর স্থবির হয়ে পড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম দেশ পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচ আগামী ১৭ এপ্রিল ঢাকা সফরে আসছেন। লাস্যময়ী এই নারী কূটনীতিকের সফর ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
কেন তাকে নিয়ে আলোচনা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পাকিস্তাানেও নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। সেখানকার নারীরাও এখন কূটনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও দক্ষ কূটনীতিক হওয়ার কারণে আমনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রদূত থাকাকালে আমনা বালুচ, ছবি: ভয়েস অব আসিয়ান
প্রথমত ফটোজেনিক আমনা বেলুচের পরিপাটি পোশাক আর ব্যক্তিত্বময় চেহারার কারণে সব সময় প্রাদপ্রদীপের আলোয় থাকেন। দ্বিতীয়ত, দেড় দশকের বেশি সময় পর ঢাকার সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। এখানে নেতৃত্বে দিচ্ছেন ক্ষুরধার ও কৌশলী এই নারী।
দ্বিতীয় শীর্ষ নারী কূটনীতিক
ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আমনা বেলুচ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১৯৯১ সালে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দেশটির বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় শীর্ষ নারী কর্মকর্তা তিনি।
এর আগে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আমব্রিন দারকে নিয়োগ দেন। আর দ্বিতীয় শীর্ষ নারী কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় বেলুচকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়েনে দায়িত্ব পালনকালে আমনা বেলুচ, ছবি: বেলুচের এক্স একাউন্ট
দায়-দায়িত্ব
পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তা আমনা বালুচ চলতি দায়িত্বের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), বেলজিয়াম ও লুক্সেমবুর্গে রাষ্ট্রদূতের পালন করেছেন। গত সেপ্টেম্বর নতুন দায়িত্বে যোগ দেন তিনি। পররাষ্ট্র সচিব পদে তিনি মুহাম্মদ সাইরাস সাজ্জাদ কাজীর স্থলাভিষিক্ত হন।
ইইউতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের আগে আমনা বালুচ মালয়েশিয়ায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মালয়েশিয়া দায়িত্ব পালনকালে তিনি দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন করেন। ব্যবসায়ী নেতা, বিনোদনকর্মী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক জোরদারে সফলতা দেখান।

দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আমনা বালুচ, ছবি: এম্বেসি অব পাকিস্তান
মালয়েশিয়ায় দায়িত্ব পালনের আগে তিনি চীনের চেংডুতে পাকিস্তানের কনসাল জেনারেলসহ বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় তিনি পাকিস্তান-চীনের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়করণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। নিজের মেধায় পাকিস্তানকে বিশ্ব অঙ্গণে মেলে ধরেন।
তার সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে শাহবাজ প্রশাসন তাকে দেশটির শীর্ষ কূটনীতির পদে আসীন করেন। পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। সবশেষ তার মিশন হচ্ছে বাংলাদেশ।
বর্ণাঢ্যময় কর্মজীবন
১৯৬৬ সালে পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ইতিহাসে মাস্টার্স করলেও কূটনীতিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বকালে সামরিক একটি অনুষ্ঠানে আমনা বেলুচ, ছবি: বেলুচের টুইটার
১৯৯১ সালে সাধারণ অফিসার হিসেবে পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিস যোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে সেকশন অফিসার, উপ-পরিচালক, পরিচালক হিসেবে পদোন্নোতি পেয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিদেশে পাকিস্তান মিশনে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন সগৌরবে।
তিনি ডেনমার্কের রাজধানী হোপেনহেগেনে দ্বিতীয় সচিব, শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে কাউন্সিলর হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ডেনমার্ক ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাকিস্তানের সেতুবন্ধনে তার অবদান রয়েছে।
পারিবারিক জীবন
পারিবারিকভাবে তিনি বিবাহিত। তার স্বামী জুলফিকার আলী খান। জুলফিকার-আমনা দম্পতির দুই কন্যা রয়েছে।
সূত্র: আরব নিউজ, এম্বেসি অব পাকিস্তান, গ্লোরি ম্যাজাজিন, ইকোনমিক টাইমস