বেছে বেছে প্লাস্টিকের বোতল। ফেলে দেওয়া অন্য কোনো জিনিস নয়। শুধু বোতল, সেটাও প্লাস্টিকের। ঢাকায় চলার পথে এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। যুবক, শিশু বা নারীরা কাঁধে বস্তা নিয়ে রাজধানীজুড়ে বোতল কুড়ায়। আর সংগ্রহ করা এই পরিত্যক্ত জিনিসগুলো কেজি দরে বিক্রি করেই পেট চলে তাদের। ছিপছিপে শরীর আর জরাজীর্ণ পোশাক পরা এসব মানুষের পেশা বোতল কুড়ানো।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা বোতল সংগ্রহ করে এরা। সংগ্রহকারীদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়- এরা সবাই সাদা প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে বের হয়। শিশু, নারী বা পুরুষ সবার কাছেই থাকে একটি বস্তা। বোতল সংগ্রহের পর বস্তা পূর্ণ হলেই তা বিক্রির জন্য ছুটে যায় ভাঙ্গারির দোকানে, সেখানে নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করে ঘরে ফেরে তারা।

রাজধানীর রমনা পার্কের ভেতর থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক নারী, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
রাজধানীর রমনা পার্কের ভেতরে স্থাপন করা ছোট ছোট বক্স (ডাস্টবিন) থেকে বোতল সংগ্রহ করছিলেন আহমদ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ৩০ বছর বয়সী আহমদের কাছে জানতে চাইলাম, বক্সে আরও কত কিছুই আছে শুধু প্লাস্টিকের বোতল নিচ্ছেন কেন? জবাবে আহমদ জানায়, পলিথিন বা চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে লাভ নেই। ওজন কম। সে হিসেবে প্লাস্টিকের বোতলই ভালো। যদি ১০ বা ১৫ কেজি সংগ্রহ করতে পারি। তাহলে ৪০০ টাকার মতো হয়।
আহমদ আরও জানায়, এখন দাম কম দেয়। লাভ করে ভাঙ্গারির মালিকরা। আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে কারখানা মালিকের কাছে। কি করব? আমরা গরীব মানুষ, যা পাই তা দিয়া কোনো রকমে ঠিকে আছি।

পড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
বোতল কুড়ানো পেশার সঙ্গে জড়িত জরিনা নামে আরেকজন নারী জানান, সারাদিন বোতল সংগ্রহ করে ঢাকার আনন্দবাজারে বিক্রি করি। আজ বেশি বোতল কুড়াতে পারেনি। যা পেয়েছি তা বিক্রি করে মাত্র ২০০ টাকা হয়েছে। প্রতিদিন তো আর সমান হয় না। একেক দিন একেক রকম হয়।
শুধু বস্তা নিয়ে যারা বোতল সংগ্রহ করে তারা খুচরায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছে কিছুটা কম দামে বিক্রি করে দেয়। আর খুচরায় এসব বোতল বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যপ্ত। অন্যদিকে বিভিন্ন মহল্লার ভাঙ্গারির ব্যবসায়ীরা একটু বেশি দাম পান। কারণ তারা একসঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ কেজি বোতল নিয়ে যান।

পরিত্যক্ত জিনিস ফেলার ডাস্টবিন, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
গ্রিনরোডের ভাাঙ্গারির দোকানদার সাত্তার জানান, সারা সপ্তাহজুড়ে মহল্লার ভাঙা ও পরিত্যক্ত জিনিস কিনি। এর মধ্যে প্লাস্টিকের বোতলগুলো জমিয়ে রাখি। কারণ ১০ থেকে ২০ কেজি নিয়ে গেলে মহাজন দাম কম বলে। তাই ৫০ কেজি বা ১০০ হলে বিক্রি করি। তাতে কিছু লাভ থাকে। আমরা প্রতি কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করি।

কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয় রাজধানীর আনন্দবাজারের এসব দোকানে, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
খুচরা ও পাইকারী দামে প্লাস্টিকের বোতল কেনা আনন্দবাজারের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সুজন জানান, খুচরা ও পাইকারীতে দামের খুব বেশি হেরফের হয় না। আমরা ন্যায্য দাম দিয়েই বোতল কিনি। আর সীমিত লাভ রেখেই তা কারখানায় বিক্রি করি।
উল্লেখ্য, রাজধানীর কেরানিগঞ্জ, চিটাগাাং রোড, সায়দাবাদ, পুরান ঢাকার নিমতলী, আনন্দবাজার, চাঁনখাঁরপুল, বংশাল, নিউমার্কেট-আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী, উত্তরা, বাড্ডা ও মগবাজারের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা এসব পরিত্যক্ত বোতলসহ অন্যান্য জিনিস কেনেন।