রাজধানীর মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি, উত্তরা থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে পুরান ঢাকা আর রামপুরা থেকে মতিঝিল সব জায়গার চিত্র ছিল একই রকম। গলির মুখে ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে সববয়সী মানুষের প্রাণবন্ত আড্ডা। কোথাও দাঁড়িয়ে আবার কোনো কোনো জায়গায় চায়ের দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে বসে আড্ডায় মেতে উঠেন ঢাকায় থাকা নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

বসে থাকার পর এবার দাঁড়িযে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন আড্ডাবাজরা, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
ঢাকরি বা অন্য কারণে যারা সারা বছর রাজধানীতে থাকেন ঈদের ছুটি পেয়ে এরইমধ্যে তারা ঢাকা ছেড়েছেন। তবে যারা স্থায়ী রাজধানীবাসী ছুটি তাদের জন্য বড় উপহার। এ সময় একে অপরেরর সঙ্গে দেখা করেন। ঈদের কুশল বিনিময়ের পর রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোট ছোট জটলায় দারুণ সময় পার করেন তারা। নতুন কাপড় পরা এসব মানুষের প্রাণ খোলা আড্ডা চোখে পড়ার মতো।

ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে বসেই আড্ডারত তারা, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
রাজধানীর কাটাবনে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। এদের মধ্যে একজনের বাড়ি ধানমন্ডি, আরেকজনের যাত্রাবাড়ি আবার একজন এসেছেন ফার্মগেট থেকে। বাবা-দাদারা ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আমরা ঢাকা ছেড়ে কোথায় যাব। বরং ঈদের ছুটিতে নগরী একটু ফাঁকা থাকে। এই সুযোগে প্রতিবছরই আমরা এখানে এসে আড্ডা দিই, জানান ওই তিন বন্ধু।

ফুটপাথে বন্ধ একটি দোকানে বসে কথা বলছে তিন কিশোর, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
এদের মধ্যে সাইফুর আলম। চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। এখনো সাত পাকে বাঁধা পড়েননি। তিনি হ্যালা বাংলাদেশকে জানান, দেখুন আমরা ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছি। গ্রামে জায়গা জমি থাকলেও যাওয়া হয় না। কারণ শৈশব থেকে এখানে বড় হওয়া আর এখন তো চাকরি করছি। ঢাকার প্রতি একটা আলাদা মায়া হয়ে গেছে। এ জন্য ছুটির সময় আমরা বন্ধুরা মিলিত হয়ে আড্ডা দেই।

ফাঁকা রাস্তায় শখের সাইকেল চালাতে ব্যস্ত দুই শিশু, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
পুরান ঢাকার চানখারপুলের একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে চা পান করতে থাকা স্থানীয় আক্তার হোসেন হ্যালো বাংলাদেশকে জানান, এখানকার বেশির ভাগ মানুষই ঢাকায় ঈদ করে। আর ছুটির সময় একে অন্যের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করি। এবার ছুটি বেশি কতক্ষণ আর বাসায় বসে থাকা যায়। তাই বন্ধু-বান্ধব মিলে একটু আড্ডা দিচ্ছি।

বাসার গ্রিলে ঝুলে থাকতে ভালো লাগে না। তাই এবার রাস্তার দেওয়ালের গ্রিলে তারা, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
তরুণ, যুবকদের পাশাপাশি কিশোরদেরও রাস্তায় আড্ডা দিতে দেখা গেছে। কোথাও দল বেঁধে আবার কোথাও দুই তিনজন মিলে। তবে বাঙালির একমাত্র পেটেন্ট বস্তু আড্ডা ঈদের ছুটিতে সবখানে চোখে পড়েছে রাজধানী জুড়ে। একে তো স্কুল বন্ধু, তারপর বড়দের বকনি আর চোখ রাঙানি কম থাকায় ছুটি দারুণ উপভোগ্য হয়েছে শিশুদের। তাই বারান্দার গ্রিল ছেড়ে রাস্তার দেওয়ালের গ্রিলেও তাদের ঝুলতে দেখা গেছে।

রিক্সা থামিয়ে আড্ডারত কয়েকজন রিক্সাচালক, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
এ ছাড়া ফাঁকা রাস্তায় নিজের পছন্দের সাইকেল নিয়ে বাধাহীন ছুটে বেড়িয়েছে শিশুরা। রাস্তায় গাড়ি আর লোকজন কম থাকায় তারা ঝামেলা ছাড়াই চালিয়েছে দুই চাকার এই যানটি। পাশাপাশি ছুটির সময় যাত্রী কম থাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে রিক্সা আর সিএনজি থামিয়ে খোশ গল্পে মেতে উঠেন চালকরাও।