ছুটির হিসাব। বাড়ি ফেরার তাড়া। কর্মস্থল নিয়ে চিন্তা। কতো কিছুই না ভাবি আমরা। তবে ঈদের লম্বা ছুটিতেও তাদের জীবনের রুটিনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আকাশে চাঁদ উঠলেও তাদের ভাগ্যাকাশে পড়েনি সেই রূপালি আলোর ছটা। রাজধানীর গৃহহীন, ছিন্নমূল আর পথের মানুষগুলোর কাছে উৎসব যেন বিবর্ণ মুর্হূত। আর সুনসান ঢাকা আরও বেশি করে ফুটিয়ে তুলে তাদের ছন্দহীন জীবনের প্রতিচ্ছবি।
কার অপেক্ষায় থেকে থেকে অবশেষে ঘুমিযে গেছেন এই বৃদ্ধ, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
এবার ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি থাকায় ঘরমুখো মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাওয়ায় ঢাকা একেবারে মানুষ শূন্য! রাস্তার ব্যস্ত সড়কগুলোয় যাতায়াতকারী মানুষজন হাতে গোনা যায়। সড়কে মানুষ না থাকায় কষ্টে আছে তারা। লোকে ঠাসা রাজধানী ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় তাদের পেটে টান পড়েছে। কমে গেছে উপার্জন! তাতে কি? এরপরও প্রতিদিনই মানুষের কাছে হাতে পাতেন তারা। বের হন বেঁচা থাকার নিত্য লড়াইয়ে।
ফাঁকা রাস্তায় নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছেন একজন ভারসাম্যহীন নারী, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
গৃহহীন, ছিন্নমূল বা পথের মানুষদের বেশির ভাগ ভিক্ষাবৃত্তি করলেও একটা অংশ আছে এরা ভিক্ষা করে না। আর টাকা বা খাবার দিলেও নিতে চায় না। এদের ঠিক পাগলও বলা যায় না। কিছুটা ভারসাম্যহীন এই যা। কিছু জিজ্ঞাসা করলে একবার, দুইবার উত্তর দিলেও পরে আর সাড়া দেয় না।
একে একে সবাই চলে গেলেও নাম না জানা এই ব্যক্তির যাওয়ার তাড়া নেই, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
রাজধানীর হাতিরঝিলে হাতে প্লাস্টিকের সাদা বক্স, গায়ে জীর্ণ ওড়না, এলোমেলো চুল ও শাড়ি পড়া মধ্য বয়সী এক নারীর কাছে জানতে চাইলাম। ঈদে বাড়ি যাবেন। উত্তর মুচকি হাসি। কই যান। জবাবে নিশ্চুপ। এরপর কোনো সহায়তার আশা না করেই হেঁটে চলে গেলেন নাম না জানা ওই নারী।
তপ্ত দুপুরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছেন গৃহহীন এই নারী, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
ধানমন্ডির মেট্রো শপিংয়ের সামনে দেখা হয় নোংরা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির সঙ্গে। বললাম, কেমন আছেন। উত্তর এলো ভালো আছি। এরপর জিজ্ঞাসা করলাম বাড়ি যাবেন? উত্তর নেই। কিছু খাবেন? জবাব নেই। সবশেষে পাশ কাটিয়ে চলে যান অজানা ওই ব্যক্তি।
ঈদের সময় মানুষ মন খুলে দান করে, সেই আশায় ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে ছুটছেন এক বৃদ্ধা, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
ফার্মগেট, নিউমার্কেট, কমলাপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি), মৌচাক, মগবাজার রেলক্রসিং, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশ এবং সংসদ ভবন এলাকায় এমন গৃহহীন বা ভারসাম্যহীন মানুষের দেখা মেলে। ব্যস্ত ঢাকায় এদের উপস্থিতি টের না পাওয়া গেলেও ফাঁকা রাজধানীতে বুঝা যায় এদের আনাগোনা ও কষ্টের দিনলিপি। তাই ছুটি বা উৎসবের আনন্দ এদের স্পর্শ করে না। বরং এদিনগুলোয় আরও একাকী হয়ে যায় তারা।
