Home বাণিজ্য এই বাজেট বৈষম্য বাড়ানোর পথ তৈরি করেছে: সিপিডি

এই বাজেট বৈষম্য বাড়ানোর পথ তৈরি করেছে: সিপিডি

৩৩ views

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট বৈষম্য বাড়ানোর পথ তৈরি করে দিয়েছে বলে মনে করে  সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ জুলাই চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবের পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় সিপিডি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রক্তাক্ত এক অভ্যুত্থানে রূপ নিলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

প্রায় এক বছর আগের সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের পর নতুন অর্থ বছরের জন্য সোমবার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা। ব্যয়ের এই অঙ্ক বিদায়ী বছরের বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

ঢাকার গুলশানের লেক শোর হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক নিয়ে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

ফ্ল্যাট কেনা-বেচায় টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে তা একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ফাহমিদা বলেন, “এই যে জুলাই আন্দোলন হলো, সেটা তো বৈষম্যহীন সমাজের জন্য আন্দোলন হয়েছিল। বাজেটেও বলা হচ্ছে যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার।

“সেটার সাথে এটা (টাকা সাদা করার সুযোগ) চরমভাবে সাংঘর্ষিক। বৈষম্যহীন স্পিরিটের সাথে বাজেটের পদক্ষেপগুলো সাযুজ্যপূর্ণ নয়। এটি বৈষম্য আরও বাড়াবে।”

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা বৈষম্য সৃষ্টির একটা হাতিয়ার।

“আবাসন খাতের মূল্য অত্যন্ত বেশি। বিভিন্নভাবে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সেই খাতে যেয়ে সেটার দাম বাড়িয়ে তুলছে। যার ফলে সাধারণ জনগণ, যারা বৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে, তাদের জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট বা একটা থাকার জায়গা কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। যার ফলে সমাজে বৈষম্য হয়।”

এটা সৎ করদাতাদের জন্যও ‘নৈতিকতার ওপর একটি আঘাত’ বলে মন্তব্য করেন ফাহমিদা।

বাজেটের অন্যান্য ক্ষেত্রেও বৈষম্য সৃষ্টির পদেক্ষপ রয়েছে দাবি করে তার উদাহরণ হিসাবে নতুন কর বিন্যাস এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের ওপর বেশি কর চাপানোর বিষয়গুলো তুরে ধরেন তিনি।

বাজেটে শুল্ক হারের পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার বিষয়টি ইঙ্গিত করছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ।

অর্থ উপদেষ্টা ১১০টি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৯টি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাতিল এবং আরও ৫০৭টি পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেছেন।

ফাহমিদা বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে অন্য দেশকেও দিতে হবে। নাহলে ডব্লিউটিওর নিয়ম লঙ্ঘন হবে। পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

যুক্তরাষ্ট্রকে বা নির্দিষ্ট কোনও দেশকে অগ্রাধিকার দিলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ (এমএফএন) নীতির লঙ্ঘন হতে পারে এবং তা ভবিষ্যতের বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করেছে সিপিডি।

৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার ব্যয়ের তিন-চতুর্থাংশ রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য অর্থ উপদেষ্টা ধরেছেন তা পূরণ নিয়ে সংশয়ী সিপিডি।

ফাহমিদা বলেন, “এবারও উচ্চ আকাঙ্ক্ষার রাজস্ব আহরণ বাজেটের বড় চিন্তার বিষয়। গত ১০ বছর ধরেই আমরা দেখছি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না।”

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম লাগবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ হারে খেলাপি ঋণের কারণে অর্থনীতি যে একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তেমন পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনা এবং মূল্যস্ফীতি কমানোই আগামী বাজেটের মূল্য লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন ফাহমিদা।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামালসহ সংস্থার অন্য কর্মকর্তারাও ছিলেন।

ফাহমিদা বলেন, “বার্ষিক ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের মানুষকে কর দিতে হবে সাড়ে ১২ শতাংশ, বার্ষিক ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত যারা আয় করেন তাদের দিতে হবে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু ৩০ লাখ টাকার বেশি যারা আয় করবেন, তাদের কর দিতে হবে মাত্র ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

“অর্থাৎ যারা মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের ওপরেই বেশি কর চাপানো হয়েছে। বাজেটে বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলা হলেও বৈষম্যটা দূর হচ্ছে না। বরং এটা বাড়ার দিকেই আমরা দেখছি।”

কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তবভিত্তিক বাজেট দিতে চেয়েছি: অর্থ উপদেষ্টা

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ