Home বিনোদন ছবি গপ্পো: নো আর্ক, পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে ধর্মীয় বিশ্বাসের লড়াই

ছবি গপ্পো: নো আর্ক, পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে ধর্মীয় বিশ্বাসের লড়াই

একটি সাহিত্যিক রিভিউ

সুপ্রভা জুঁই
৩৪৭ views

প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ব্রাত্য আমিনের আরো একটি নতুন কাজ, ”নো আর্ক” (No Ark)। যদিও এখন তার আরেকটি পরিচয় বেশি জোরালো। তিনি একজন পরিবেশকর্মী ও সংগঠক। নিজস্ব উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জের রুপগাঁও (a knowledge exchange centre) হয়ে উঠছে সেরকমই একটা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি ‘বার্জার এক্সিলেন্স এওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন আর্কিটেকচার’ এর ১১তম আসরে পুরস্কৃত হয়েছে স্থাপনাটি।

এখানে যে খাবার পাওয়া যায় তা বিষমুক্ত এবং দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত। এগুলো সংগ্রহ করা হয় ব্রাত্য আমিনের নিজের ক্ষেত ও পরিচিত কৃষকদের কাছ থেকে। নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুত এবং মাটির সংস্পর্শে জীবনযাপনকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যেভাবে ফুটিয়ে তুলছেন তা নগরকেন্দ্রিক মানুষদের মনে দোলা দিচ্ছে বৈকি। ঢাকা শহরের একটি ঈর্ষণীয় চাকরি ছেড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে এমন একটা ভাবের সাথে বাকি জীবনটা কাটানো চাট্টিখানি কথা নয়। বর্তমানে পান্থকুঞ্জ পার্কের গাছ ও হাতিরঝিল জলাশয় রক্ষার আন্দোলনেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

lpo

গবেষণাধর্মী প্রামাণ্যচিত্র ”নো আর্ক” এর কুশীলব

রূপগাঁও শব্দচিত্রঘর এর পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে ওয়ার্ল্ড ফেইথস ডেভলপমেন্ট ডায়ালগ (World Faiths Development Dialogue)। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা ধর্ম ও উন্নয়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। নীতিনির্ধারকদের এবং ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতেও কাজ করে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বর্তমানে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। জলবায়ু ন্যায়বিচার (climate justice) ও নৈতিক দায়বদ্ধতার দিকগুলো WFDD গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে।

‘‘No Ark’’, চলচ্চিত্রের নামকরণেই দেখা যায় বিশ্বাস ও বাস্তবতার ছোঁয়া। “No Ark” নামটি প্রতীকী ও বহুস্তরবিশিষ্ট অর্থ বহন করে। ধর্ম, পরিবেশ ও মানবতার বর্তমান সংকটকে একই কাতারে নিয়ে আসে। এটি সরাসরি ইঙ্গিত করে বাইবেলের নূহ (আ.)-এর সেই বিখ্যাত “Ark” বা নৌকার দিকে, যা এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের নির্দেশে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু “No Ark” নামটি সেই ঐতিহাসিক কাহিনীর একটি বিপরীত প্রতিচ্ছবি যেন! নামটি জানায় যে, আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের মহাসঙ্কটে আর কোনো অলৌকিক ‘নৌকা’ নেই যা আমাদের রক্ষা করবে।

এই নামটি একদিকে যেমন মানবজাতির করুণ অবস্থার প্রতীক, অন্যদিকে এটি একটি জোরালো সতর্কবার্তা। এখনো যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে আমাদের সামনে হয়তো আর কোনো পরিত্রাণ থাকবে না। নৈতিক শূণ্যতার প্রতিও ইঙ্গিত করে নামটি। যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধ লুপ্তপ্রায় এবং মানুষ হিসেবেও যেন আমরা পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছি। অতীতে যেমন ঈশ্বর মানবজাতিকে রক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, আজ সেই চেতনা বা নৈতিক আহ্বান কেউ শুনছে না। তাই আর কোনো ‘আর্ক’ নেই। 

c copy

চলচ্চিত্রের নামটি জানায় , আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের মহাসঙ্কটে আর কোনো অলৌকিক ‘নৌকা’ নেই; যা আমাদের রক্ষা করবে

এ দেশের ৯৯.৫% মানুষ মনে করে ধর্ম তাদের জীবনের অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং বহুধর্মের এই দেশে সকলেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিজ নিজ ধর্ম পালনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে সেটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। অতিরিক্ত বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।   

গবেষক পাভেল পার্থ জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর যে ইনডেক্স আছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরে। এর কারণ হলো বাংলাদেশের উত্তরে আছে হিমালয় পর্বত, উত্তর-পূর্বে আছে মেঘালয় পাহাড় এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পাহাড় থেকে সাগরের এই যাত্রাপথে আছে অসংখ্য নদী। আবার পৃথিবীর সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ভারতের চেরাপুঞ্জে। এর নিমাঞ্চলই হলো সিলেট। চেরাপুঞ্জের অনেক বৃষ্টি উজান থেকে ভাটিতে আসবে। অর্থাৎ আমাদের এলাকা প্লাবিত হবে। 

মানুষ, গৃহপালিত প্রাণি, বাড়িতে জমানো ধান, ক্ষেতের ফসল, বৃদ্ধ মানুষ কারো প্রাণের নিশ্চয়তা নেই এই মহাবিপর্যয়ে। উত্তর-পূর্বের মুসলিমরা বন্যার কারণে মসজিদে নামায আদায় করতে পারছেননা। অপরদিকে, দক্ষিণের মুসলমানেরা পানির অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য নামায আদায় করতে পারছেননা। উত্তরের মুসলমানেরা পানির স্বল্পতার জন্য নামায আদায় করতে পারছেননা। গত কয়েক বছর ধরে অধিক তাপমাত্রায় রোজার মাসে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন রোজাদারেরা।

হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের পূজার জন্য নানান গাছের ফুল ও পাতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এগুলো তারা আর হাতের কাছে পাচ্ছেননা। লোণা পানির আধিক্যে মিঠা পানির সমস্ত ফলন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মাটির লবণাক্ততার কারণে দুর্গার প্রতিমা বানাতেও কষ্ট হচ্ছে। এই মাটিতে আঠা থাকে না। ফলে প্রতিমা বানাতে আগের চাইতে বেশি সময় লাগছে এবং সৌন্দর্যহানি ঘটছে। যেখানে ধর্মীয় আয়োজনে অনেক মানুষ আসেন সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের কারণে মানুষজনের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। বৌদ্ধ ধর্মের মানুষেরা তাদের আচার অনুষ্ঠানের জন্য পাহাড়ি ছড়া বা ঝিরি নদী আর পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের খ্রিষ্টান ধর্মের আদিবাসীরা পানির স্তর নিচে নামায় অনেক কষ্ট পাচ্ছেন।   

d copy

মানুষ, গৃহপালিত প্রাণি, বাড়িতে জমানো ধান, ক্ষেতের ফসল, বৃদ্ধ মানুষ কারো প্রাণের নিশ্চয়তা নেই , এই মহা বিপর্যয়ে

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে আর এর শেষই বা কোথায়? অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ বলছেন, আমরা বর্তমান বিশ্বে যে উন্নয়নের ধারায় বসবাস করছি তা হলো পুঁজিবাদ। এই পুঁজিবাদের ধারায় যা কিছু মুনাফা আনে তা করা পুঁজিবাদের দৃষ্টিতে বৈধ। পুঁজিবাদের ধরন হলো সে মানুষকে উন্মাদ ও নেশাগ্রস্ত বানাতে চায়। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সে আরও টাকা বানাতে চায়। এটা করতে গিয়ে সে মানুষকে শোষণ করতে পারে, সে যুদ্ধ করতে পারে, দখল করতে পারে এমনকি প্রতারণাও করতে পারে। এই যে ব্যাপক বিজ্ঞাপন এগুলো সবই মিথ্যাচার। কোনো দেশের সম্পদ আহরণ করতে হলে ছলবলে তাকে যুদ্ধ করতে হয়। এসব কিছুর সাথে প্রকৃতি, বিশেষ করে বায়ুমণ্ডলের উপরে সরাসরি প্রভাব আসছে। 

বৌদ্ধ ধর্ম জানায়, জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক। হাদিসে উল্লেখ আছে, দুনিয়াতে এমন ভাবে বসবাস করো যেন তুমি একজন মুসাফির। অর্থাৎ আমাদের যা প্রয়োজন তার অতিরিক্ত ভোগের জন্য আমি গ্রহণ করতে পারবো না। এটা আমাদের জীবনযাপনে আমরা কতটুকু লালন করি? জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বড় বড় দেশের প্রধানেরা একত্রিত হয়ে এখনো কোনো আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ নিতে পারেননি।  এমন অবস্থায় চলচ্চিত্র পরিচালক জানার চেষ্টা করেন যে বিভিন্ন ধর্মনেতারা এ নিয়ে কি ভাবছেন। সম্প্রতি দেহ রাখলেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলছেন, ঈশ্বর, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে।

ভোগবাদের এই সমাজে আমাদের অবস্থান কোথায় তা নির্ধারণ করা দরকার। ভোগবাদের মাঝে আমাদের উপাসনালয়গুলো নির্মিত হচ্ছে কিনা সেটাও দেখার সময় এসেছে। আমাদের শিশুরা যদি ধর্ম প্রতিষ্ঠানে এসেও একটা নদীকে খুন করা বা একটা গাছকে খুন করাকে জায়েজ মনে করে তাহলে আমাদের ভাব্বার সময় এসেছে। কেননা কোনো ধর্মই প্রকৃতির বিনাশ সমর্থন করেনি। আমাদের ধর্মগুলো কেউই শোষণ ও পুঁজির পক্ষে নয়। আমাদের সকল ধর্মের মহাপুরুষেরা মিতব্যয়ী জীবনাচারের অন্যতম স্মারক।   

e copy

ভোগবাদের এই সমাজে আমাদের অবস্থান কোথায় তা নির্ধারণ করা দরকার

ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডঃ আহমেদ আবিদুর রাজ্জাক খান চলচ্চিত্রটি তার শিক্ষার্থীদের দেখাবেন বলে জানিয়েছেন। কেন এই চলচ্চিত্র একটা স্টাডি ম্যাটেরিয়াল হতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো ডেভলপমেন্ট ফিল্ডের লোক। ‘গ্লোবালাইজেশন’ কোর্সটা পড়ানোর সুযোগ যখন পেলাম তখন লক্ষ্য করি যে, টেকসই উন্নয়নের যতগুলো ম্যাটেরিয়াল নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করছি সেগুলোর বেশিরভাগই বিদেশি ম্যাটেরিয়াল। সাবটাইটেল দেওয়া, বা নিজেদের পার্স্পেক্টিভ থেকে বলা এই ধরনের ম্যাটেরিয়াল আমি খুঁজছিলাম কিন্তু বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারছিলাম না। যতবেশি আমরা নিজেদের ভাষায় জ্ঞানচর্চা করতে পারবো ততবেশি শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যেতে পারবো।

আমি ‘এথিক্স’ কোর্সে সক্রেটিস থেকে শুরু করে জন লক পর্যন্ত যা পড়াই কিছুই শিক্ষার্থীরা মনে রাখতে পারে না। কারণ ভাষা ও ব্যক্তি সবাই বিদেশি। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার এই কারিকুলাম থেকে আসলে টেকসই শিক্ষাদান হয় না। তাই এই চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীতেই আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম এটা সকলের জন্য উন্মুক্ত হবে কবে। যেহেতু এমন ম্যাটেরিয়াল অপ্রতুল তাই শিক্ষার্থীদের কিছু নমুনা দেওয়ার জায়গা থেকেই এই চলচ্চিত্রটিকে বেছে নেওয়া।’’ 

f copy

অতিরিক্ত যা কিছুর ফলে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে আমাদের তা নিয়ে কাজ করতে হবে

পরিচালক ব্রাত্য আমিনের সাথে লম্বা আলাপ হয়। চলচ্চিত্রটি নিয়ে তার অনুভবের জায়গাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিবছর বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন (COP) হচ্ছে, যেখানে প্রভাবশালী দেশগুলোর নেতারা একত্রিত হচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানান সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য। কিন্তু কোনো ফলপ্রসূ সমাধান তারা দিতে পারছেন না। উন্নত দেশের সরকার প্রধানেরা যে সম্মতি জানিয়েছিলেন তারা কতটুকু কার্বন নিঃসরণ করতে পারবেন তা কেউই মানেননি।

যেহেতু প্রতি দেশেই বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বেশি তাই তাদেরকে কাজে লাগাতে পারলেই সবথেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে। প্রতি ধর্মের ভিতরেই পরিবেশ রক্ষার জন্য নানা রকমের কথা আছে তাই আমি দেখতে চেয়েছিলাম ধর্মীয় দিক থেকে এটাকে কিভাবে ডিল করা যায়। সাধারণ মানুষ ধর্মীয় দিক থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে বুঝতে পারে কিনা এটাই আমি পরীক্ষা করে বুঝতে চেয়েছি। এই নতুন জার্নিটা আমাদের কোর টিম মেম্বারদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। এক্ষেত্রে নির্বাহী প্রযোজক, গবেষক এবং সিনেমাটোগ্রাফার সৌম্য সরকারের ভূমিকা অনেক। 

b copy

”নো আর্ক” প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক ব্রাত্য আমিন

এই চলচ্চিত্রে নির্মাণ প্রক্রিয়ার সময় আমরা জানতে পারি যে, নানান ধর্ম কিভাবে এই বিষয়টাকে এড্রেস করেছে। আমরা আবিষ্কার করলাম, সব ধর্মের নেতাদের ফসিল-ফুয়েলের ব্যবহার নিয়ে বিশেষ জানাবোঝা নেই। আমাদের প্রামাণ্যচিত্রের গবেষণায় উঠে এসেছে , উপাসানয়গুলো পরিবেশ বিরোধী নির্মাণ চিন্তা ও পরিবেশ দূষণের সাথে ক্রমশ মিশে যাচ্ছে। এটা আমাদের নিজেদেরকেও লক্ষ্য করতে হবে। নাহলে আমাদের সন্তানেরা এ ধরনের স্থাপনায় ধর্মচর্চার মধ্য দিয়ে এই সমস্যাকে নর্মালাইজ করে ফেলবে। আমার পর্যবেক্ষণ হলো, আমাদের এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই কৃষিকাজের সাথে সম্পর্কিত নন। এটাও একটা কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গগুলো তারা ধরতে পারছেন না।

এমনকি সনাতন (হিন্দু) ধর্মের অনেকেই এখন প্রবাহিত জল না পেলেও নানারকম শুদ্ধিকরণের মধ্য দিয়ে ঘটনাটাকে জাস্টিফাইড করছেন। কিন্তু আসল ধর্মীয় চর্চার জায়গায় সেভাবে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে অনুপ্রাণিত হবে? যদি রোজ খুতবায় পরিবেশ দূষণের ভয়ানক প্রভাব সম্পর্কে তারা শুনতেন এবং জানতেন যে আল্লাহ, ভগবান এনিয়ে আমাদের কি বলতে চেয়েছেন তাহলে একটা সমাজে, দেশে বা বিশ্বে একটা বিরাট পরিবর্তনের সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাবো। আমার ডকুমেন্টরির মূল উদ্দেশ্যই ছিল এটা। সম্প্রতি মারা গেলেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে খুবই সোচ্চার ছিলেন। তাই আমরা এই জায়গাটা এক্সপ্লোর করতে চেয়েছি।

g copy

অতিরিক্ত যা কিছুর ফলে দৈহিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, সমাজে বৈষম্য হচ্ছে এবং পরিশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে আমাদের তা নিয়ে কাজ করতেই হবে

নানা ধর্মের নেতারা সমাজে এই বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও নানান কাউন্সিলিং এর মধ্য দিয়ে মোটিভেট করে কাজ করানো সম্ভব। যেহেতু এগুলো ইতোমধ্যে ধর্মেরই বিষয় ফলে কোনোকিছু তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সেই প্রমাণও আমরা ডকুমেন্টরিতে দেখানোর চেষ্টা করেছি। এটা একটা এডভোকেসি ডকুমেন্টরি ফিল্ম বলা যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষও এখান থেকে উপকৃত হতে পারবে।’’ 

গত ৩০ এপ্রিল ইউটিউবে রুপগাঁও শব্দচিত্রঘর চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। পাঠকদের অনুরোধ করবো চলচ্চিত্রটি দেখা হলে আপনাদের অনুভূতিগুলো শেয়ার করার জন্য। আমাদের মনে নাড়া দিয়ে থাকলে নিজ নিজ জীবনে ভোগের প্রসঙ্গগুলোকে লক্ষ্য করার চেষ্টা যেন আমরা করতে পারি সেই নিয়ত করবো। কারণ পুঁজিবাদ তার মতো করে আমাদের জীবনের অর্থ শেখায়; যা কামনা-বাসনাময়। কিন্তু সেটা ভুল, সেটা মোহ। এটা বুঝতে পেরে সামগ্রিকভাবে আমাদের জীবনকে আমাদেরই নতুন করে অর্থবহ করে তুলতে হবে। এটা কেবল পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কোনো লড়াই নয়, অতিরিক্ত যা কিছুর ফলে দৈহিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, সমাজে বৈষম্য হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে আমাদের তা নিয়ে কাজ করতেই হবে।  

No Ark চলচ্চিত্রের লিঙ্ক

ছবি-গপ্পো সিরিজের শেষ লেখার লিংক

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ