Home বিনোদন পুরোনো সিনেমা কেন ফের মুক্তি দিচ্ছে বলিউড

পুরোনো সিনেমা কেন ফের মুক্তি দিচ্ছে বলিউড

তাসনিম তাবাসসুম
১২৬ views

ভারত এমন একটি দেশ যেখানে হলিউডের চেয়ে বছরে কয়েকগুণ বেশি সিনেমা তৈরি হয়। সিনেমা যে এখানে বিনোদনের মূল খোরাক তা এখানকার সিনেমা হলের পর্দায় পছন্দের তারকাকে দেখে দর্শকের উল্লাস দেখলেই বোঝা যায়।

তবে করোনা মহামারি ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য বড় রকমের আঘাত হিসেবে আসে। এরপর ২০২২ সাল থেকে সারা বিশ্বেই সিনেমা হলগুলোতে দর্শক ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। কিন্তু অনলাইন স্ট্রিমিং এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের এই সময়ে কাজটি এত সহজ নয়। তার ওপর বলিউডে নতুন ছবিগুলো আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছে না।

করোনা মহামারির সময় ভারতে ১৫০০-২০০০ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়, যার বেশিরভাগ সিঙ্গেল-স্ক্রিন সিনেমা। প্রতিযোগিতায় এগুলো শপিংমলের কর্পোরেট ফ্র্যাঞ্চাইজি-চালিত মাল্টিপ্লেক্সগুলোর সাথে দাঁড়াতে পারেনি।

বর্তমানে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যয় বেড়েছে। তারকাদের মধ্যে প্রধানত পুরুষদের বিশাল অংকের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, যা একটি চলচ্চিত্রের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। তাছাড়া তাদের মেকআপ টিম ও প্রচার ক্রু, ভ্যানিটি ভ্যান, হোটেল এবং ভ্রমণ— সবমিলিয়ে প্রযোজক ও স্টুডিওগুলোর ওপর আরও আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে৷ সম্প্রতি বিশিষ্ট প্রযোজক ও পরিচালক করণ জোহর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বলিউড তারকাদের পারিশ্রমিক বাস্তবতাবর্জিত।

২০২৩ সালে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘জব উই মেট’ এবং অমিতাভ বচ্চনের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে তার সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহে পুনরায় মুক্তি দেওয়া হয়। চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তা সাদরে গ্রহণও করে।

এ বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ ও এর সিকুয়েলের পুনঃমুক্তিতে দর্শক হলে ভিড় জমায়। ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল মে’ এবং ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’র মতো ক্লাসিক বলিউডের প্রেমের গল্পগুলো যেন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো পুনঃমুক্তির পর ‘লায়লা মজনু’ প্রথমবার মুক্তির সময়ের চেয়ে বেশি দর্শক পেয়েছে। ‘এনিম্যাল’ সিনেমা বক্সঅফিস হিটের পর রাতারাতি বলিউডের সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রীর তকমা পাওয়া তৃপ্তি ডিমরির জনপ্রিয়তার কারণেই ‘লায়লা মজনু’র পুনঃমুক্তি এত দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে বলে মনে করছেন নেটিজেনরা।

চলুন জেনে নেওয়া যাক বলিউডে হঠাৎ পুরোনো সিনেমাগুলো পুনঃমুক্তি দেওয়ার পেছনের কারণ—

ব্যবসা

সাধারণত পুনঃমুক্তির জন্য খরচ কম হয়, কারণ প্রাথমিক নির্মাণ ও প্রচারণা খরচ ইতিমধ্যে মূল প্রকাশের সময় ব্যয় করা হয়েছে৷ ব্যয়ের মধ্যে রিলিজের অনুমতি, প্রয়োজনে ডিজিটাল রিমাস্টারিং এবং দর্শকদের কাছে ফিল্মটিকে পুনরায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ন্যূনতম বিপণন খরচ।

শূন্যস্থান পূরণ

পুরোনো চলচ্চিত্রের পুনঃমুক্তির জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে— ‘নস্টালজিয়া’, নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর কম সাফল্য ইত্যাদি। যদিও পুনঃমুক্তিপ্রাপ্ত ‘রকস্টার’ ও ‘লায়লা মজনু’ একই সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর বক্স অফিস সংগ্রহকে ছাড়িয়ে গেছে।

এই বিষয়ে নিজের অভিব্যক্তি শেয়ার করে ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর অক্ষয় রাঠী বলেছেন যে, এই সিনেমাগুলি চলচ্চিত্র ব্যবসার মূল প্রভাবক নয়, বরং কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ করছে। ছবিগুলি যে মূল রিলিজের তুলনায় খুব বেশি মুনাফা করছে তা নয়। কয়েকটি ছবি ভালো ব্যবসা করছে, তবে তা খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক

প্রযোজক রনি স্ক্রুওয়ালা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, সিনেমার পুনঃমুক্তিতে অর্থের চেয়ে দর্শক মনের তৃপ্তি তাকে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়। এছাড়া প্রযোজক ও পরিবেশকদের জন্য খরচ না করেও আয়ের সুযোগ এটি। থিয়েটারগুলোরও লাভ হয়, আবার দর্শকও সন্তুষ্ট থাকে।

পুনঃমুক্তি নতুন চলচ্চিত্রের জন্য হুমকি?

পুরনো সিনেমার পুনঃমুক্তি কি নতুন রিলিজ দেওয়া সিনেমার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে? প্রযোজক ও নির্মাতা আনন্দ তিওয়ারি বলেন, আমি মনে করি, ‘ব্যবসা’ই ঠিক করবে পুনঃমুক্তি হুমকি হয়ে উঠবে কিনা। আমি সত্যিই মনে করি যে আমাদের চলচ্চিত্রগুলি বক্স অফিসে বেশ ভালো করছে। কেউ কেউ বলতে পারেন যে নতুন চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হচ্ছে না। কিন্তু আপনি যদি অতীতের হিট এবং ফ্লপের অনুপাত তুলনা করেন তবে তা একইরকম রয়েছে।

পুনঃমুক্তির ভবিষ্যৎ কি?

পরিচালক দেবাং সম্পাত জানান, তিনি বিশ্বাস করেন আইকনিক চলচ্চিত্রগুলো যদি পুনরায় মুক্তি দেওয়া হয়, বিশেষ করে যেগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে, সেগুলো থিয়েটারে ভালো করতে পারে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ