‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম’— ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কালজয়ী প্রেমের গান হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। প্রেমের পরিণয় হলো বিয়ে। আর বিয়ের পরপরই আসে মধুমাস। সাধারণত বিয়ের প্রথম মাসকেই মধুমাস বলা হয়। এই মধুমাস বা মধুচন্দ্রিমায় রোমান্টিক যুগল হিসেবে সবকিছু থেকে একদম দূরে কেবল দুজনে মিলে সময় কাটানোর সেরা জায়গাটিরই গল্প শোনাবো আজ।
নিউজিল্যান্ডের প্যাসিফিক সমুদ্রের ধারে অবস্থিত বিশ্বের গোপনতম এই হানিমুন কটেজের নাম, seascape বা ‘সমুদ্রচিত্র’। সমুদ্রের ঢালের সাথে মানানসই এই ছোট্ট কটেজটিকে উপত্যকার সাথে আলাদা করা যায় না বলেই এর মাঝে একটা গোপনভাব রয়েছে। কেউ জানবে না আপনারা কোথায় আছেন, কেউ আপনাদের খুঁজেও পাবে না।
পাহাড়ের পাদদেশে থাকা এই বাড়িটিতে আছে কেবল একটি শোবার ঘর, একটি লিভিং রুম এবং বাথরুম। ১৮০ ডিগ্রি গ্লাস ভিউতে সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউগুলোকে ঘরের ভিতরে থেকেই অনুভব করা যায়। বিশাল বারান্দায় জ্বলতে থাকা ফায়ার প্লেসটি এতটাই অসাধারণ যে উষ্ণতার আভাস পাওয়া যায়। মেটাল, কাঠ ও পাথর এই কটেজ তৈরির মূল উপাদান। যেহেতু এখানে কংক্রিট বহন করার উপায় নেই, তাই সব কংক্রিট হাতে করেই মিক্স করে বানানো হয়েছে। পাথরও এই উপসাগর থেকেই নেওয়া। তাই কটেজটি সমুদ্রতটের একটি অংশ বলেই মনে হয়। কটেজটির ডিজাইনার প্যাটার্সন অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান স্থপতি প্যাটার্সন জানান, প্রতি বছর অনেক যুগল এখানে আসেন তাদের সম্পর্ককে উদযাপন করতে। পারস্পরিক বোঝাপড়া মজবুত করার ক্ষেত্রে নির্জন প্রকৃতি এখানে অন্যতম প্রভাবক।

কটেজের পাথর এই উপসাগর থেকে নেওয়া তাই একে সমুদ্রতটের একটি অংশ বলেই মনে হয়। ছবি: ডিজেন
এই কটেজ এতটাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত যে এখানে হেলিকপ্টারে করে আসতে হয়। তবে আপনি চাইলে খামারের নিজস্ব গাড়িতেও আসতে পারবেন। শুধুমাত্র দুজনকে ভেবেই নির্মিত এই কটেজ সমুদ্র ও পাহাড়ের মাঝে দেয় একটা নিরাপদ ও উষ্ণ স্থান। এখানে ডলফিনেরা খেলা করে, সমুদ্রের ফেনা তোলা ঢেউরা আছড়ে পড়ে, পাহাড়ের বুকে কখনও ঝড় আসে আবার চলে যায়, দিনরাত্রি মেঘেদের আনাগোনা আর মাঝেমাঝে ক্রিস্টালের মতো শুনতে বাতাসের আওয়াজ। সব মিলিয়ে এর চেয়ে রোমান্টিক জায়গা বুঝি আর হয় না।
শুভ বিবাহ সম্পন্নের পর নিজের এই রূপান্তরের সময়টি হেলায় হারাবেন না। আপনাদের যৌথ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়টি তাই উসুল করে নিন বিশ্বের গোপনতম হানিমুন কটেজ, সমুদ্রচিত্রে।