Home স্থাপত্য ও প্রকৌশল মাটির স্থাপত্যের কবি ইলিয়োনা উট্রাম খালিলি

মাটির স্থাপত্যের কবি ইলিয়োনা উট্রাম খালিলি

অতীতের আধ্যাত্মিক স্থাপত্যকে ভিত্তি করে ভবিষ্যতের নিরাপদ, টেকসই এবং বহু সংস্কৃতির শহর নির্মাণ করা সম্ভব

সুপ্রভা জুঁই
৫৭৯ views

ড. ইলিয়োনা উট্রাম খালিলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একজন স্থপতি ও গবেষক। মাটির স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক নির্মাণকলায় তিনি বিশেষভাবে পারদর্শী। লন্ডনের ‘আর্কিটেকচারাল অ্যাসোসিয়েশন স্কুল’ থেকে স্থাপত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। পরবর্তীতে মানবকল্যাণমুখী স্থপতি নাদের খালিলির কাছ থেকে হাতেকলমে ‘Earth & Ceramic Architecture’ শিখে তাঁর কাছ থেকেই ‘Master Builder in Earth Architecture’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। নাদের খালিলির দেহাবসানের আগ পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবনসঙ্গীও ছিলেন।

শৈশবে কেটেছে লন্ডনে। ইলিয়োনার মা রিমা গ্রিক-সিপ্রিয়ট নানান সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত একজন। আর বাবা হলেন, প্রখ্যাত স্থপতি জন উট্রাম। বাবা-মায়ের নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ায় স্বামী নাদের খালিলির সঙ্গে কাজ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘Cal-Earth Institute’ যা আজও টেকসই ও আধ্যাত্মিকভাবে অনুপ্রাণিত স্থাপত্যচর্চার অনন্য কেন্দ্র। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সুফি ধারাকে অনুসরণ করেন। মুর্শিদ তানের আনসারি ও শায়খা মুজাইয়্যেন আনসারির কাছে তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা নেন এবং ইংরেজিতে কোরান অনুবাদে সহযোগিতা করেন।

পেশাগত জীবনে ইলিয়োনা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষকতা, পরামর্শ এবং নকশা প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি RIBA নিবন্ধিত স্থপতি হিসেবে স্বীকৃতি পান। তার পিএইচডি গবেষণা “Unity within diverse multiplicity; masonry, method, and analogy in Byzantine architecture” ২০২৩ সালে পুরস্কৃত হয়। ২০২৩-২৪ সালে তিনি ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত হন। 

বর্তমানে তিনি King’s Foundation School for Traditional Arts-এ ‘Advanced Earth Architecture Design’ বিষয়ে পাঠদান করছেন। এছাড়াও তিনি New Earth UK-এর মাধ্যমে বাড়ি থেকেই টেকসই কমিউনিটি নির্মাণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন। তার কাজ ও দর্শনের মূল ভিত্তি—কায়িক শ্রম, পারিবারিক ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান।

a copy

ইলিয়োনার কাজ ও দর্শনের মূল ভিত্তি—কায়িক শ্রম, পারিবারিক ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান

২০২৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, হ্যালো বাংলাদেশ-এর  স্থপতি সুপ্রভা জুঁই এর সঙ্গে একান্ত আলাপে ইলিয়োনা তুলে ধরেন স্থাপত্য নিয়ে তার ব্যক্তিগত ভাবনা। জানালেন, কিভাবে প্রাণ ও পরিবেশের সাথে একটি আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়। ইংরেজি ভাষায় নেওয়া সেই আন্তরিক আলাপের বাংলা অনুবাদের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হলো আজ।

স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা ও চর্চা করার ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণার উৎস কি? আপনি কিভাবে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ডিজাইনের প্রতি মনোযোগী হলেন?

আমার বাবা-মা দুজনেই স্থপতি হওয়ায় স্থাপত্যবিদ্যা আমাদের বাড়ির রোজকার আলাপের একটা বিষয় ছিল। বাড়িতে ছোটবেলায় আমার বাবার ড্রয়িং টেবিলের নিচে বসে আমি আর আমার বোন দুজনে মিলে আঁকাআঁকি খেলতাম। বাবা প্রায়ই আধুনিক স্থাপত্যের সমস্যা এবং পুরোনো শহরগুলোর বিলুপ্তি নিয়ে আক্ষেপ করতেন। সেই ৯০০০ বছরের পুরনো ইতিহাসকে এখনকার স্থপতিদের কেন আগলে ধরে চলা উচিৎ তা নিয়ে উনি প্রচুর কথা বলতেন। এইরকমই এক পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠছিলাম আমরা। সেইসময়ে আমার মা বাড়িতে একটা মাকড়সা পর্যন্ত মারতেননা। কারণ আমার মা প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করতেন। তিনি আমাদের শেখাতেন মাকড়সারা কিভাবে জাল বোনে এবং মাছি ধরে। পরিবেশ ধ্বংস ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি কথা বলতেন, যা তখন খুব একটা প্রচলিত বিষয় ছিল না।

আমার শৈশবের কিছু কিছু স্মৃতিই খুব সম্ভবত স্থাপত্যবিদ্যার প্রতি আমার আগ্রহের প্রধান কারণ। যদিও আমি সবসময় কাদামাটি দিয়ে হাঁড়িপাতিল বানাতে ভালোবাসতাম। আমার যখন ১১ বছর বয়স, তখন নির্মাণ শ্রমিকদের আমাদের পুরনো মাটির বাড়ির দেয়াল সংস্কার করতে দেখেছিলাম। কাদামাটি ও খড় মিশিয়ে কাজ করেছিলেন তারা। পরে সেই বাড়িতে বসে কিছু সময় কাটাই আমি। লক্ষ্য করলাম, এক শীতল স্বস্তিকর অনুভুতি আমার মাঝে এমন এক নীরবতার জন্ম দিচ্ছে যে আমার মনের কাব্যিক দিকটি জাগ্রত হয়ে উঠল! সেদিন আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম। সেই কবিতায় আমি আমাদের উঠোনের লেবুগাছের ফাঁক দিয়ে দুপুরের সূর্যের আলোর খেলা দেখার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছিলাম।

মাটির স্থাপত্য নিয়ে আরেকটি স্মৃতি এখনো খুব স্পষ্ট মনে আছে আমার। কৈশোরে আমি গ্রীসের এক শহরের বারান্দা থেকে তীব্র সূর্যের আলোয় চারপাশটা দেখছিলাম। আমার চোখের সামনে ছিল অসংখ্য কংক্রিটের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, আর তাদের মাঝে ছড়িয়ে থাকা কিছু ছোট ছোট পাথরের গির্জা। সেই গির্জাগুলো থেকে গম্বুজ দেখা যাচ্ছিল। তখন আমার মনে হয়েছিল, এই আধুনিক ভবনগুলোর কেবল বাইরের প্রতিফলিত আলো আছে। কিন্তু এই ছোট গির্জাগুলোর ভেতরে আছে এক আলোকিত সত্তা—এক আধ্যাত্মিক আলো!

উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন আমার বয়স ১৮। আমার বিষয় ছিল জীববিদ্যা, চিত্রকলা/সিরামিকস, প্রাচীন গ্রিক ভাষা এবং গণিত। আমি কি নিয়ে পড়ব তা বাবা-মায়ের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রতি সমান আগ্রহ থাকায় ঐ কৈশোরকালে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কি নিয়ে পড়া যেতে পারে। বাবা-মা বললেন, “এখন যা নিয়ে তুমি পড়ছ স্থাপত্যবিদ্যার জন্য এগুলোই আদর্শ!” এসবকিছু বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য নিয়ে পড়তে চলে যাই। 

আমি জোর দিয়েছিলাম সিরামিক ও মাটির সঙ্গে কাজ করার বিষয়টিতে। কবিতাকে স্থাপত্যে রূপান্তর করার প্রতি আমার বিশেষ ঝোঁক ছিল। আমার সমসাময়িকরা আমাকে “পুরানো হিপ্পি” বলে ডাকত, কারণ ১৯৮০-এর দশকে কেউ টেকসই স্থাপত্য নিয়ে কথা বলত না।

b copy

আমি জোর দিয়েছিলাম সিরামিক ও মাটির সঙ্গে কাজ করার বিষয়টিতে। কবিতাকে স্থাপত্যে রূপান্তর করার প্রতি আমার বিশেষ ঝোঁক ছিল – ইলিয়োনা

আপনি বছর দশেক আগে বাংলাদেশে কিছু কর্মশালা করেছিলেন। সেখানে আপনার কিছু মধুর স্মৃতি সম্পর্কে আমাদের একটু জানাবেন। 

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং HBRI (হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এ কর্মশালা নেওয়াটা ছিল এক অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা। আজ আমরা দেখছি যে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ—অগ্নিকাণ্ড ও বন্যার মতো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। তাই তরুণ স্থপতি ও প্রকৌশলীরা মানুষের জন্য দুর্যোগ-সহনশীল গৃহ নির্মাণে আগ্রহী ছিলেন। 

বাংলা ভাষার গভীরতা, কাব্যময়তা, আধ্যাত্মিকতা ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আমার জন্য মাটির স্থাপত্য নিয়ে পাঠদানের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছিল। মানবজীবনের উৎস যে মাটি, তা ব্যাখ্যা করার আলাদা প্রয়োজন পড়েনি। কারণ বিষয়টি এখানকার মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে গেঁথে আছে। আমি এখনো হাসি যখন মনে পড়ে কিভাবে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা মাটির সাথে কাজ করতে করতে উদ্দীপ্ত হয়ে যেত আর বারবার “মাটির মানুষ” কথাটি উচ্চারণ করতো। এক সময় আমার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সহকর্মী আকতানিন খায়ের তানিনের সুবাদে লালনগীতি ও রবীন্দ্র সংগীতের সাথে পরিচিত হই। গানের কথাগুলোর মাঝে আমাদের হাতেকলমে করা কাজের প্রতিচ্ছবি পেয়েছিলাম আমি। 

বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কাটানো সময় আমাকে বুঝিয়েছে যে তারা মাটি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে এক স্বতঃস্ফূর্ত ও চিরন্তন সম্পর্ক বহন করে, যা সত্যিই অনন্য এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।

c copy

বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কাটানো সময় আমাকে বুঝিয়েছে যে তারা মাটি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে এক স্বতঃস্ফূর্ত ও চিরন্তন সম্পর্ক বহন করে, যা সত্যিই অনন্য এবং অনুপ্রেরণাদায়ক – ইলিয়োনা

আপনার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল “বৈচিত্র্যময়তা ও বহুত্বের সাথে ঐক্য: বাইজেন্টাইন স্থাপত্যে মেসনরি, পদ্ধতি এবং উপমার প্রয়োগ” তাহলে কে বা কি আপনার আধ্যাত্মিক স্থাপত্য দর্শন গঠনে সর্বাধিক প্রভাব ফেলেছে?

একজন স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এখনো স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি লন্ডনের হাজিয়া সোফিয়া গির্জার অন্ধকারে মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকার সেই মুহূর্তটি। পাদ্রি যখন যীশুর প্রতীকের পর্দার পিছন থেকে একটি প্রজ্বলিত মোমবাতি বের করে আনলেন—যা কিনা যীশুর পুনরুত্থানের আলোর প্রতীক। সেই সময়টা ছিল চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্যোগের সময়। অথচ সেই গভীর অন্ধকারেও যেন প্রাণের এক প্রবল অনুভূতি বিরাজ করছিল। জনতার ভিড় ও যীশুর সেই প্রতিকী জগৎ চারপাশটাকে জীবন্ত করে তুলেছিল। তারপর যখন সবাই একে একে সেই মোমের শিখা থেকে নিজেদের মোমবাতিগুতেও আলো জ্বালিয়ে নিল, তখন প্রতিকীগুলো আবার যেন কাঠের সমতল চিত্রকলায় পরিণত হলো। সেই সময়ে আশেপাশের সবকিছু ঝলমল করছিল এক অপার্থিব দীপ্তিতে।

স্নাতক শেষ করে আমি যখন পেশাগত জীবনে প্রবেশ করতে যাব তখন টের পেলাম এই মহাবিশ্বের যিনি সত্যিকারের পরিচালক তিনি যেন প্রাণ, প্রেম ও স্থাপত্যের মাধ্যমে আমার শৈশবের আধ্যাত্মিকতাকে ছাড়িয়ে আরও গভীর উপলব্ধির দিকে নিয়ে গেলেন। আমি উদার মনে সকল আদিম বিশ্বাসগুলোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেয়েছিলাম। মানুষকে বিভক্ত করে এমন কুসংস্কার দূর করতে চেয়েছিলাম। স্রষ্টার প্রতি মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলাম। নিজেকে শুধু সৃষ্টি হিসেবে উপলব্ধি করতে চেয়েছিলাম। আমি সততা এবং অন্তর্দৃষ্টি খুঁজছিলাম। অনির্দেশিত অথচ আশীর্বাদপূর্ণ এক পথের সন্ধানে আমি এমন সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম যেন তা ব্যাপটিজমের আগুন! আমি আত্মার উত্থান ও পতন প্রত্যক্ষ করেছিলাম। পিতামাতার শক্তির মধ্য দিয়ে আমার সৃষ্টিকে অনুভব করেছিলাম, এবং এই দেহের বাইরে জীবনের স্বাদ পেয়েছিলাম।

পরবর্তী ৩০ বছর আমি জীবনের অর্থ ও পথ খুঁজতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই যাত্রায় দুটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ ছিল: খোলা মন মানসিকতা বজায় রাখা ও মাটির স্থাপত্য গঠন করা। এই বিষয়টা আমাকে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত রেখেছে এবং মানসিক শান্তি দিয়েছে। গম্বুজ, খিলান ও ভল্ট নির্মাণ করা যতটা প্রাচীন, আধ্যাত্মিকতাও ঠিক ততটাই চিরন্তন।

আমার আধ্যাত্মিক স্থাপত্য দর্শনের জীবন্ত শিক্ষক হয়ে এসেছিলেন স্থপতি নাদের খালিলি। তিনি নিজেও অনুপ্রাণিত ছিলেন পারস্যের সুফি কবি রুমির দ্বারা, যাঁকে তিনি “শ্রেষ্ঠ স্থপতি” বলে অভিহিত করতেন। যখন আমাদের প্রথম দেখা হয়, তখন তিনি রুমির গজলগুলো এমনভাবে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন যাতে কোনোপ্রকার অতিরিক্ত সাংস্কৃতিক সংকেত না থাকে। ফলে আমি নির্দ্বিধায় সেই শব্দগুলোর প্রতিধ্বনি নিজের আত্মায় অনুভব করতে পারতাম। এবং সেগুলো যেন বাইজেন্টাইন প্রতীকের জগৎকে নতুন করে জীবন্ত করে তুলতো। নাদেরের অনুবাদ যেকোনো ব্যক্তির হৃদয়ে নিজস্ব ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা রাখে। তিনি ৫০০ বছর আগে লেখা শেক্সপিয়ারের সেই অমর বাক্যের সারল্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন—”To be or not to be, that is the question” (অস্তিত্ব থাকবে কি থাকবে না, এটাই তো প্রশ্ন)

১৯৯১ সালে তাঁর প্রথম ক্লাস থেকে শুরু করে ২০০৮ সালে তাঁর প্রয়াণ পর্যন্ত আমি কখনো তাঁর কোনো বক্তৃতা মিস করিনি। দীর্ঘ এই শিষ্যত্বের সময়ে আমি হাতেকলমে কাজ করেছি, ডিজাইন করেছি, গবেষণা করেছি, এবং মাটির স্থাপত্য নির্মাণ করেছি। তাঁর সঙ্গে ও বহু মানুষের সঙ্গে মিলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, পরিচালনা করা এবং এগিয়ে নেওয়া ছিল যেন স্বপ্নের এক বাস্তবায়িত রূপ। পরিশেষে ২০০৩ সালে তিনি আমাকে “মাস্টার বিল্ডার ইন আর্থ আর্কিটেকচার” উপাধিতে সম্মানিত করেন।

নাদের খালিলি শুধু আমার শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমার জীবনসঙ্গীও। তাঁর মৃত্যুর পর সুফি মুর্শিদ তানের আনসারি ও তাঁর স্ত্রী শায়খা মুজেইয়েন আমার আধ্যাত্মিক ও টেকসই জীবনযাপনের শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। এরপর তিনিও ২০২৩ সালে চলে যান অনন্তলোকে। তাঁদের মাধ্যমেই আমি জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতায় শিক্ষা গ্রহণের আশীর্বাদ পেয়েছি।

২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আমি যখন থেসালোনিকির ৮ম শতকের ক্যাথেড্রাল-গির্জা হাইয়া সোফিয়ার নির্মাণ সংক্রান্ত পিএইচডি গবেষণা করছিলাম, তখন আমি আমার শৈশবের অর্থোডক্স খ্রিস্টান আধ্যাত্মিকতায় এই শিক্ষাগুলোর সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেছি। প্লটিনাস, স্যুডো অ্যারিওপাগিট ডায়োনিসিয়াস এবং ম্যাক্সিমোস দ্য কনফেসরের দর্শনের সাথে পরিচিত হয়ে আমি আমার আধ্যাত্মিক স্থাপত্য দর্শনকে আরও শানিত করেছি। সেইসাথে ইউরোপীয় ঐতিহ্যের মধ্যে আমার নিজস্ব অবস্থান খুঁজে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি।

এই দীর্ঘ পথচলার পর আজ কি বাকি রইল? আমি কেবল মাটির স্থাপত্য চর্চা করি, এবং ২১ শতকের বাস্তবতায় ‘আধ্যাত্মিক স্থাপত্য দর্শন’ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। যেমনটি আপনারা একে অভিহিত করেছেন। এটি তরুণ প্রজন্মের শতাব্দী। আমি দেখছি যে টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলো মানুষকে নিজেদের মনকে উদার করতে এবং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ভেদাভেদ পেরিয়ে একত্রে কাজ করতে সহায়তা করছে। কারণ, আমাদের এই গ্রহকে বাঁচাতে হলে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে পারস্পরিক সহযোগিতাই একমাত্র পথ। আমি আশাবাদী যে মানবসভ্যতা অতীতের আধ্যাত্মিক স্থাপত্যকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে ভবিষ্যতের নিরাপদ, টেকসই এবং বহু সংস্কৃতির শহর নির্মাণ করতে পারবে।

d copy

আমার আধ্যাত্মিক স্থাপত্য দর্শনের জীবন্ত শিক্ষক হয়ে এসেছিলেন স্থপতি নাদের খলিলি। তিনি নিজেও অনুপ্রাণিত ছিলেন পারস্যের সুফি কবি রুমির দ্বারা, যাঁকে তিনি “শ্রেষ্ঠ স্থপতি” বলে অভিহিত করতেন – ইলিয়োনা

আপনি যখন টেকসই ডিজাইন করেন, তখন কমিউনিটি এংগেজমেন্ট কিভাবে নিশ্চিত করেন? আপনার কাজে ও ব্যক্তিগত জীবনে সামাজিক টেকসইতা কি ভূমিকা পালন করে?

সামাজিক টেকসইতা ও কমিউনিটি এংগেজমেন্ট মাটির স্থাপত্যের (Earth Architecture) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটি ও সিরামিক নির্মাণশিল্পীরা চিরকাল দলবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। এবং এই নির্মাণ প্রক্রিয়া মানুষকে একটি অভিন্ন কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যায়, যা মানুষের মাঝে ঐক্য ঘটায়। মাটির স্থাপত্যে ডিজাইন ও নির্মাণের প্রক্রিয়া মূলত একজন প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে শেখায়, অন্যের অনুভূতি উপলব্ধি করায় এবং একই স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে শেখায়। এটি আসলে সমাজ ও নগর গঠনের প্রতিফলন।

যদিও এই প্রক্রিয়া আপাতদৃষ্টিতে বিমূর্ত মনে হলেও এটি অত্যন্ত বাস্তব ও স্পষ্টভাবে প্রয়োগযোগ্য, বিশেষত যখন ভারবাহী মেসেনরির (load-bearing masonry) মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হয়। একটি আদর্শ সম্প্রদায়ে, মানুষ একে অপরের জন্য ঘর নির্মাণ করবে। কেউ শুধু নিজের জন্য স্বার্থপরভাবে ঘর বানাবে না। বহু গ্রামে আমরা দেখতে পাই যে মানুষ একে অপরের জন্য ঘর তৈরি করেছে। পাশাপাশি কৃষি, ধর্মীয় ও জনসাধারণের জন্য নিবেদিত ভবনগুলিও নির্মাণ করছে। আমি মনে করি না আধুনিক নির্মাণ চুক্তির কাঠামোর মধ্যে এই সহযোগিতার চেতনা ধরে রাখা অসম্ভব। তবে সেজন্য শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং আইনগত কাঠামোর প্রতি আস্থা থাকতে হবে। যেমন, একটি আবাসন সমবায় (housing association) বা পরিচালনা পর্ষদসহ জাতীয় বিশ্বাসযোগ্য দাতব্য সংস্থা থাকা প্রয়োজন।

একটি আবাসন প্রকল্প বা বহুসত্ত্বাধিকার সম্পন্ন একটি বাণিজ্যিক স্থাপনার ডিজাইন ও নির্মাণ চুক্তি এমনভাবে কাঠামোবদ্ধ করা যেতে পারে যাতে মানুষ একে অপরকে সাহায্য করতে পারে, আবার একইসাথে প্রতিটি ব্যক্তির বিনিয়োগের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যায়।

f copy

যদি কেউ আরও গভীরে যেতে চান এই প্রাচীন আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাহলে চার উপাদানের দেবদূত (Archangels) সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন।- ইলিয়োনা

আমি যৌথ পরিবারে থাকি। পরিবারটি প্রথমে আমার নানির নেতৃত্বে পরিচালিত হতো এবং পরে আমার মায়ের। আমাদের বেশিরভাগ কাজ একে অপরের জন্য, বা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। তাই আমরা পরস্পরের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিই এবং এতে সুবিধাও পাই। যেহেতু পরিবারে প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অক্ষম সদস্যদের সংখ্যা তরুণদের তুলনায় বেশি, তাই ভালোবাসা ও উদারতা আমাদের মূল ভিত্তি এটা সবসময়েই মনে থাকে।

স্থাপত্যে ডিজাইন প্রক্রিয়ায় এই ভালোবাসা ও উদারতার বোধটি আত্মস্থ হয় সহানুভূতির মাধ্যমে। পৃথিবী-ভিত্তিক স্থাপত্যে, আমাদের এই পার্থিব উপাদানের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হয় এমনভাবে, যাতে একটি মজবুত ও টেকসই গম্বুজ বা খিলান নির্মাণ করা যায়। যেন তা ‘একটি ঘণ্টার মতো বেজে ওঠে’। কারণ মাটি, ইট বা পাথর আমাদের বলে দেয় তারা কোথায় যেতে চায়। নির্মাতাকে শিখতে হয় যে কিভাবে শুনতে হয় ও কিভাবে সহানুভূতি প্রকাশ করতে হয়। তখন যেন সেই স্থাপনাটি নিজেই নিজেকে তৈরি করে নেয় মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে একধরনের সঙ্গতি রেখেই।

মাটির স্থাপত্যে কিন্তু একটি ভবন শুধুই কাঠামো নয়। আমরা কাজ করি চারটি মৌলিক উপাদান—মাটি, পানি, বাতাস ও আগুনের সঙ্গে। নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করি তাদের সঙ্গে সহানুভূতির মাধ্যমে যুক্ত হতে, যাতে ডিজাইনারদের মাঝে অনুপ্রেরণা জাগে। ভবনের মধ্যে বাতাস কিভাবে প্রবাহিত হবে, গরম ও ঠান্ডায় তার আকার কিভাবে প্রকাশ পাবে এবং তাদের পার্থক্য কিভাবে একটা চলমানতা সৃষ্টি করবে, আর্দ্রতা ও ঘনীভবন কোথায় এবং কবে ঘটবে, এবং কখন তা ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে এগুলোর খোঁজ যেন তারা হৃদয়ে লালন করতে পারে। 

আমরা এই উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি নিয়ে চিন্তা করি উপমার মাধ্যমে। আর সহানুভূতির সঙ্গে অনুভব করার চেষ্টা করি—ডিজাইনটি কেমন অনুভব করছে, তার অভিজ্ঞতা কেমন। এটি হতে পারে একদিকে একটি আনন্দদায়ক দলগত প্রক্রিয়া, আবার অন্যদিকে এক ধরনের শব্দহীন ধ্যান। 

যদি কেউ আরও গভীরে যেতে চান এই প্রাচীন আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাহলে চার উপাদানের দেবদূত ‘আর্ক-এঞ্জেল’ (Archangels) সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন। এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যে থাকা ঐশ্বরিক নামের বর্ণমালার বিষয়ে জানতে পারেন। আমার কোর্সে আমরা এই ডিজাইন পদ্ধতিকে হাতেকলমে ধ্যান হিসেবে অনুশীলন করি ছোট আকারের মডেল বানিয়ে।

সর্বোপরি, আমাদের উপলব্ধি করতে হবে টেকসইতা একাধারে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়। নাদের খলিলি বলতেন, “টেকসইতা শুরু হয় একজন মানুষ দিয়ে।” একটি গম্বুজ নির্মাণের যাত্রায় সেই মানুষই কেন্দ্রবিন্দুতে, এবং সেইসঙ্গে ঐশ্বরিক সত্তাও। সেই ব্যক্তি আসলে একটি সম্মিলিত মানব সত্তা—যিনি না পুরুষ, না নারী, না যুবক, না বৃদ্ধ—সবার জন্যই এক স্থান।

যদি আমাদের আত্মা আমাদের শরীর ছাড়িয়ে টিকে থাকে ‘সময়’ ও ‘স্থান’ এর মাত্রায়, তবেই তা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ঐশ্বরিক সত্তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আর যদি একটি গোটা সম্প্রদায়ের আত্মা এভাবে টিকে থাকে, তাহলে আমরা বলতে পারি—সেখানে একটি টেকসই সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে।

e copy

মাটির স্থাপত্যে ডিজাইন ও নির্মাণের প্রক্রিয়া মূলত একজন প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে শেখায়, অন্যের অনুভূতি উপলব্ধি করায়, একই স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে শেখায় – ইলিয়োনা

একুশ শতকের ইকো-ভিলেজ ডিজাইন করার সময় পরবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর পাশাপাশি আধুনিকভাব ও কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য আপনি কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে, আমি সংক্ষেপে ‘আধুনিকতা’ বলতে কি বোঝানো হয় তা বিবেচনা করতে চাই। আমি আধুনিকতাকে বর্তমান সময়ের জন্য উপযোগী কিছু হিসেবে দেখি।

স্থাপত্যে ‘আধুনিক আন্দোলন’ (Modern Movement) বিংশ শতকের গোড়ার দিকে বড় পরিবর্তন এনেছিল। তারা তাদের সময়ের জন্য যা অপ্রাসঙ্গিক মনে করত তা বর্জন করেছিল। কিন্তু ২১ শতকে এসে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। তাই বিংশ শতকের জন্য উপযোগী আধুনিক আন্দোলন আজকের দিনে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

মাটির স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আমরা কেবল ঐতিহাসিক উপাদানবাদী (historical materialists) নই, যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে বন্দি। আমাদের দর্শন চিরন্তন উপাদান ও মহাবিশ্বের চিরন্তন নীতিগুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। পৃথিবী, পানি, বায়ু ও অগ্নি—এই চারটি মৌলিক উপাদান, এবং খিলান (arch) ও তার বিভিন্ন রূপ যেমন, গম্বুজ (dome), ভল্ট (vault), ও অ্যাপ্স (বহুভুজবিশিষ্ট গৃহকোণ)—এগুলোই ২১শ শতকের ইকো-ভিলেজ ডিজাইনের মূল নিয়ামক। আমরা প্রকৃতির মৌলিক নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে কাজ না করে, বরং তাদের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি। কারণ প্রকৃতি থেকে যথাসম্ভব কম উপাদান ব্যবহার করলেই সর্বাধিক দক্ষতা তৈরি করা সম্ভব।

প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজাইন করলে ২১শ শতকের আধুনিক জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকারিতা (functionality) নিশ্চিত করা যায় মাটির স্থাপত্যে। এটি এমন এক সারল্য তৈরি করে যা অবিশ্বাস্যভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ। আমরা এখানে ডিজাইনার নই, বরং আমরা প্রকৃতির বার্তা শুনছি, শিখছি এবং সেই প্রবাহের সাথে এগিয়ে চলেছি। এই প্রক্রিয়ার ফলে এমন একটি ‘আধুনিক’ স্থাপত্য তৈরি হয়, যা চিরকালই বর্তমানের জন্য প্রাসঙ্গিক। ইতোমধ্যে অনেক স্থপতি ও পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবক (sustainable innovators) এই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।

g copy

পৃথিবী, পানি, বায়ু ও অগ্নি—এই চারটি মৌলিক উপাদান, এবং খিলান ও তার বিভিন্ন রূপ যেমন, গম্বুজ, ভল্ট ও বহুভুজবিশিষ্ট গৃহকোণ—এগুলোই ২১শ শতকের ইকো-ভিলেজ ডিজাইনের মূল নিয়ামক – ইলিয়োনা

একদিন আমরা সবাই বুঝতে পারব যে— আমাদের সবচেয়ে উষ্ণ আবহাওয়াতেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই, বন উজাড় করতে হবে না, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নিক্ষেপ করতে হবে না, পৃথিবীর অন্যান্য জীবদের স্থানচ্যুত করতে হবে না বা প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করতে হবে না। আমাদের শুধু প্রচলিত ডিজাইনের ধরণে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন ধরা যাক, বাংলাদেশে উজ্জ্বল রোদ এবং প্রচুর মাটির সম্পদ রয়েছে। যদি একজন বিনিয়োগকারী দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কারখানা তৈরি করেন, যেখানে একটি বড় সৌর লেন্স (solar lens) ব্যবহার করে সূর্যের আলো কেন্দ্রীভূত করা যায়, তাহলে পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তি ব্যবহার করে উচ্চ-তাপমাত্রায় পোড়ানো সিরামিক ইট (high-fired ceramic bricks) তৈরি করা সম্ভব। এতে সিমেন্টের উপর নির্ভরশীলতা কমবে, পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা কমবে, যা বর্তমানে কৃষিজমি নষ্ট করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত বালু ও পলিমাটি (silty sand) ফেলে না দিয়ে, সামান্য রাসায়নিক ফ্লাক্স (flux) ব্যবহার করে এটি গলিয়ে মূল্যবান নির্মাণ উপকরণ তৈরি করাও সম্ভব হবে। ফলে কৃষিজমি শুধুমাত্র খাদ্য উৎপাদনের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এটি ন্যূনতম পরিবেশগত প্রভাব এবং সর্বাধিক দক্ষতার এক দৃষ্টান্ত, যা একটি আধুনিক জীবনমানকেও সমর্থন করে।

 

চলবে… …

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ