Home স্বাস্থ্য কোরবানির জন্য সুস্থ গবাদি পশু চেনার উপায়

কোরবানির জন্য সুস্থ গবাদি পশু চেনার উপায়

উপমা ইসলাম রুপা
৮৩ views

কোরবানির ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগ, আত্মত্যাগ ও সামাজিক সাম্যের এক অনন্য উৎসব। এই ঈদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে একটি ত্রুটিহীন পশু কোরবানি করা। কিন্তু অনেক সময় বাজারের চকচকে বাহারি গরুর ভিড়ে প্রকৃত স্বাস্থ্যবান, সুস্থ ও কোরবানিযোগ্য পশু চিনে নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে বিভিন্ন উপায়ে পশু মোটাতাজা করার প্রবণতা বেড়েছে। যেখানে কৃত্রিম ওষুধ, স্টেরয়েড, এমনকি বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যা পশুর স্বাস্থ্য ও মাংসের গুণগত মানকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। তাই কোরবানির জন্য পশু নির্বাচন করতে প্রয়োজন কিছু বাড়তি সচেতনতা।

কোরবানির জন্য সুস্থ গবাদি পশু চেনার নানা উপায় জানিয়েছেন ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. শেখ আলী ইফরান। এই চিকিৎসক বলেন, একটি সুস্থ কোরবানিযোগ্য গরুর চেহারায় প্রাণ থাকবে। চোখ থাকবে উজ্জ্বল। শ্বাস-প্রশ্বাস হবে স্বাভাবিক। যদি গরুর গায়ে অস্বাভাবিক ফোলাভাব, চোখ দিয়ে পানি পড়া কিংবা নিঃশ্বাসে হাঁপানির লক্ষণ থাকে। তবে সেটি অসুস্থ বা ওষুধ প্রয়োগে তাড়াহুড়ো করে মোটাতাজা করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

চোখ বা নাক দিয়ে পানি, পুঁজ বা অস্বাভাবিক নির্গমণ হলে তা অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। নাক শুকনো এবং ফাটলযুক্ত থাকলে শ্বাসকষ্ট বা ভাইরাল সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। সুস্থ পশু চঞ্চল ও সচল থাকে। ঘন ঘন বসে পড়ে না। অসুস্থ পশু সাধারণত স্থির থাকে। উদাসীন আচরণ করে এবং অন্য পশুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকা সুস্থতার একটি বড় চিহ্ন।

যেসব পশুর গায়ে খোলা ক্ষত, ঘা বা ফোঁড়া থাকে। সেসব পশু কোরবানির জন্য নির্বাচন করা ঠিক নয়। ক্ষত বা ইনফেকশন থাকলে তা অন্যান্য পশুর মাঝেও ছড়াতে পারে।

সুস্থ পশুর লোম চকচকে ও ঘন হয়। ত্বক যদি খসখসে, ফাটা বা অতিরিক্ত চুলকানিযুক্ত হয় তবে তা ছত্রাক বা পরজীবীজনিত রোগের লক্ষণ হতে পারে। লোম উঠে পড়া বা চামড়া শুষ্ক হলে তা অস্বাভাবিক।

ঘন ঘন কাশি, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে পশুটি অসুস্থ। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে ফুসফুসজনিত সংক্রমণ থাকতে পারে।

দাঁত সঠিকভাবে গজানো এবং মাড়ি গোলাপি রঙের হলে পশু সুস্থ। দাঁতে ক্ষয়, মাড়িতে ঘা বা অতিরিক্ত লালা পড়া অসুস্থতার লক্ষণ। বয়স যাচাই করার জন্য দাঁত পরখ করুন। খুব কম বয়সী পশু কোরবানির উপযোগী নয়।

h cow

সুস্থ পশুর লোম চকচকে ও ঘন হয়, স্বাভাবিকভাবে হাঁটে, দাঁড়িয়ে থাকে ও বসে, ছবি; হ্যালো বাংলাদেশ।

নিয়মিত ও স্বাভাবিক মলত্যাগ পশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকার ইঙ্গিত দেয়। অস্বাভাবিক রঙ, দুর্গন্ধ বা পাতলা মল ডায়রিয়া বা হজম সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এক্ষত্রে প্রস্রাব হলুদাভ এবং ধারাবাহিক হওয়া উচিত।

সুস্থ পশু স্বাভাবিকভাবে হাঁটে, দাঁড়িয়ে থাকে ও বসে। যদি পশুটি খুঁড়িয়ে হাঁটে বা দাঁড়াতে কষ্ট হয়, তবে তা পায়ের সমস্যা বা অন্য কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত।

অতিরিক্ত কঙ্কালসার বা খুব মোটা পশু সাধারণত অসুস্থ হতে পারে বা হরমোনজাতীয় ঔষধ খাওয়ানো হয়ে থাকতে পারে। সুস্থ পশুর দেহের গঠন ভারসাম্যপূর্ণ ও মাংসল হয়।

অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা শরীর জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। শরীর ছুঁলে পশু উত্তেজিত বা ব্যথা অনুভব করলে তা অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে।

তিনি আরও জানান, “নখ, দাঁত ও হাঁটার গতি দেখে গরুর প্রকৃত বয়স ও স্বাস্থ্যের ধারণা পাওয়া যায়। গরুর বয়স যদি দুই বছর না হয়, তবে তা কোরবানিযোগ্য নয়। পাশাপাশি চামড়ায় উজ্জ্বলতা ও পশমে স্বাস্থ্যকর ঝলক থাকাও একটি সুস্থ পশুর চিহ্ন।

সচেতনতা এবং ধর্মীয় দায়িত্ববোধের সঙ্গে মিল রেখে সঠিক পশু বাছাই করাই কোরবানির তাৎপর্যকে পূর্ণতা দেয়। তাই বাজারে যাওয়ার আগে জেনে নিন গরু চেনার বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দিক। যাতে আপনার কোরবানি হয় যথাযথ এবং পূর্ণতাসম্পন্ন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ