Home শিক্ষা পড়ালেখা মনে রাখার সহজ উপায়

পড়ালেখা মনে রাখার সহজ উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪৭ views

শেখা বিষয়গুলো মনে থাকছে না। এ সমস্যা কমবেশি প্রায় সব শিক্ষার্থীরই রয়েছে। সঠিক নিয়ম মেনে না পড়ার কারণে পড়া ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। আবার পড়ালেখা মনে না থাকলেও, বাকি অনেক কিছু  ঠিকই মনে থাকছে। কিছু কৌশল বা অভ্যাস মেনে চললে পড়াও মনে রাখা সম্ভব। 

একটি সঠিক পরিকল্পনা   
একটি সঠিক পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক। তাই আপনি কী পড়বেন, কখন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন, কতক্ষণ বা কতদিন পড়বেন এ বিষয়গুলো আগে থেকই ঠিক করে নেওয়া পরিকল্পনার অংশ। তা ছাড়া আপনি কী জানতে চান, কেন জানতে চান, এটা জেনে কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন- এ বিষয়গুলোর ওপরও একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। 

ভিজুয়ালাইজেশন   
আমরা যখন কোনো নাটক বা সিনেমা দেখি তখন সেই নাটক বা সিনেমাটা সহজেই মনে রাখতে পারি। তার কারণ, ভিজুয়ালাইজেশন। আপনি যে টপিকটি পড়ছেন- তা যদি ভিজুয়ালাইজড করা যায় অর্থাৎ, ভিডিও, ছবি, গ্রাফ বা চার্ট আকারে উপস্থাপন করা যায়- তাহলে পড়া বা তথ্য মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হবে। কারণ ভিজুয়ালাইজেশনে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো বেশি সজাগ থাকে। 

ভোরে উঠে পড়া   
পড়ার সময় নিজের ভিতর থেকে আগ্রহ নিয়ে, পড়া কঠিন, মনে থাকে না, বুঝি না এইসব ভুলে, খালি মাথা নিয়ে বসতে হবে। সেই জন্য ভোরে উঠে পড়তে বসলে মাথা ক্লিন থাকে এবং পড়া দ্রুত মাথায় ঢুকে। 

ভাগ ভাগ করে পড়ো   
ছোট ছোট ভাগ করে পড়া এবং দুইবার না দেখে কাগজে লিখা। বড় সাইজের প্রকারভেদ, ব্যবসায় নীতি, বিশাল প্রমাণ এই নিয়মে ভাগ ভাগ করে পড়লে মনে থাকবে অনেক দিন। 

schoolgirls sitting desk reading books 23 2147664203
ছবি: ফ্রিপিক

মূল বিষয় বের করা   
উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র- “কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।” এই সূত্রের মূল বিষয় কি? একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় এই সূত্রের মূল বিষয় হচ্ছে- “ভরবেগের পরিবর্তন”। এবং ভরবেগের পরিবর্তনের দুইটা বৈশিষ্ট্য বলছে। এক: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের সমানুপাতিক। দুই: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের দিকে। 

এখন তোমার ব্রেইনে সূত্রের নামের সাথে মূল বিষয়ের যোগাযোগ সেট করতে হবে। যাতে সূত্রের নাম শুনার সাথে সাথেই মূল বিষয়বস্তু ব্রেইনে ভেসে উঠে। 

দাগিয়ে পড়া   
হাইলাইটার, কলম বা পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে পড়ার অভ্যাস করতে হবে, তাহলে শুধু মূল বিষয় বা ক্লু গুলাকে দাগাও। যাতে রিভাইজ দেয়ার সময় চোখ আগে দাগানো অংশের নিচে চলে যায়। 

পড়ার পাশাপাশি লিখা   
দেখে দেখে পড়ার চাইতে হালকা সাউন্ড বা মনে মনে উচ্চারণ করে পড়া ভালো। কনসেন্ট্রেশন বেশিক্ষণ থাকে। তবে গণিত, সূত্রের প্রমাণ, জটিল গ্রাফ অবশ্যই লিখে লিখে পড়তে হবে। কোথায় আছে দশবার পড়ার চাইতে একবার লিখে পড়া বেশি লাভজনক। 

আড্ডায় পড়ালেখার আলোচনা   
ক্লাসের বন্ধুদের সাথে অথবা আড্ডায় পড়ালেখার বিষয়ে আলোচনা করা। বন্ধুদের আড্ডার বিষয় গুলো আমাদের মনে থাকে তাই আড্ডায় পড়াশোনা নিয়ে কথা বলতে হবে। আর সই জন্য বন্ধু বাছাইর ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। 

নিজেই নিজের শিক্ষক হতে হবে   
কোন কিছু পড়া শুরু করার আগে নিজেই নিজের টিচার হয়ে নিজেকে কোন জিনিস বুঝানোর চেষ্টা করা। এতে পড়া বুঝা ও মনে রাখা অনেক সহজ এবং দ্রুত হয়। 

পড়ার টেবিল, পড়ার রুম   
পড়ার টেবিল দরজার পাশে, ড্রয়িং রুমে রাখা যাবে না। মানুষ আসতে যেতে ডিস্টার্ব হবে। আবার বারান্দা বা জানালার পাশেও পড়ার টেবিল রাখা যাবে না। কিছুক্ষণ পর পর বাইরে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই ১৫-২০ মিনিট নষ্ট হয়ে যাবে। পড়ার রুমে কোন ইলেক্ট্রনিক্স যেমন টিভি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন রাখা যাবে না। মোবাইল বন্ধ করে পাশের রুমে রাখলে ভালো হবে। 

young woman teaching geography pupil with globe 23 2147885325
ছবি: ফ্রিপিক

দাগিয়ে পড়ো   
অনেকগুলা বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য, প্রকারভেদ মনে না থাকলে। সেগুলার প্রথম বর্ণ দিয়ে একটা শব্দ বা ছন্দ তৈরি করা। ভূগোল বা বিজ্ঞানের কঠিন কোন চিত্র বা গ্রাফ থাকলে, গ্রাফের কিছু অংশ কালো, কিছু অংশ নীল, কিছু অংশ লাল রঙের কলম/পেন্সিল দিয়ে আঁকলে, গ্রাফ মনে রাখা সহজ হবে। 

রিভিশন করা   
আমরা ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত অনেক কিছুই পড়েছি, কিন্তু সবই কি আমাদের মনে আছে? উত্তর- না। এর কারণ আমরা রিভিশন দেই না। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে- আমরা যখন পড়ি, তার এক ঘণ্টা পর ৪৪ শতাংশ পড়া আমাদের মনে থাকে। একদিন পর ৩০ শতাংশ মনে থাকে। আর এক সপ্তাহ পর মাত্র ২০ শতাংশ মনে থাকে। তার মানে, এক সপ্তাহ পর ৮০ শতাংশই ভুলে যাই। তাই রিভিশনের মাধ্যমে পড়া মনে রাখাটা একটা বড় কৌশল। কারণ আমরা যখন পড়ি, তখন তা আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে জমা হয়। যা কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পরে ভুলে যাই। কিন্তু যদি আমরা বারবার রিভিশন দেই, তাহলে তা শর্ট-টার্ম মেমোরি থেকে লং-টার্ম মেমোরিতে স্থানান্তরিত হয়। এতে অনেক দিন পড়া বা তথ্য মনে থাকে। রিভিশন দেওয়া মানে পুরো টপিকটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া না, রিভিশন দেওয়া মানে পূর্বে হাইলাইট করা বা মার্ক করা শব্দে বা লাইনে চোখ বুলানো। তাই পড়া মনে রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিভিশন। 

ক্লাসে সিনসিয়ার থাকো   
একটু খেয়াল করলেই পড়ালেখা সহজ বানায় ফেলা যায়। সেজন্য ক্লাস শুরু হওয়ার সময় থেকে সিনসিয়ার হতে হবে। ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে, খেয়াল করে ক্লাস নোট করা, বাসায় এসে ঐদিনের লেকচারগুলোকে আধা ঘন্টা স্টাডি করলে, পড়া অর্ধেক সহজ হয়ে যায়। 

প্রবল ইচ্ছা বা আগ্রহ   
পড়ার সময় জানার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকতে হবে। আপনি ক্ষুধার্ত থাকলে খাবারের আসল স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। তাই জ্ঞান পিপাসা বা জানার প্রবল ইচ্ছা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ