যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশটির বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে একটি সম্ভাব্য ‘ব্রেন ড্রেইন’ বা মেধা পাচারের সংকেত দিচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত, নেচার ক্যারিয়ার্স-এর তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন বিজ্ঞানীরা বিদেশে চাকরির জন্য ৩২% বেশি আবেদন করেছেন এবং বিদেশি চাকরির খোঁজে মার্কিন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মার্চ মাসে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিজ্ঞান খাতে বাজেট কাটছাঁট বাড়িয়েছে, তখন বিদেশি চাকরির ভিউ ৬৮% পর্যন্ত বেড়েছে।
এই প্রবণতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিজ্ঞান খাতে তহবিল হ্রাস এবং কর্মসংস্থান সংকোচনকে দায়ী করা হচ্ছে। সম্প্রতি, এইচআইভি/এইডস গবেষণার জন্য ২০০টিরও বেশি ফেডারেল অনুদান হঠাৎ করে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও, কোভিড-১৯ গবেষণার জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অনুদান কমানো হয়েছে এবং নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার গবেষণা অনুদান হ্রাস করা হয়েছে, যা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদের পরিণতি।
স্প্রিঙ্গার নেচার-এর গ্লোবাল ট্যালেন্ট সলিউশনস দলের প্রধান জেমস রিচার্ডস বলেন,’যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির আবেদনের এই বড় পতন এবং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা নজিরবিহীন।’ বর্তমানে, নেচার ক্যারিয়ার্স-এর জব বোর্ডে ৯৮৩টি খালি পদ রয়েছে।
এই তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি,নেচার-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭৫% মার্কিন গবেষক বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, কানাডায় মার্কিন বিজ্ঞানীদের চাকরির আবেদন ৪১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে কানাডিয়ান গবেষকদের যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির আবেদন ১৩% হ্রাস পেয়েছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভ্যালেরি নিয়মান এই মাসে সুইজারল্যান্ডের বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল পদে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ জানে না তাদের পোস্টডক কতদিন চলবে। আমরা ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতে পারি না, কারণ জানি না সেগুলো কতদিন থাকবে।’
এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ মেধাবী গবেষকরা নিরাপদ ও স্থিতিশীল কর্মপরিবেশের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সূত্র: নেচার ক্যারিয়ার্স