ভালো ক্যারিয়ার ও উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজারো শিক্ষার্থী পাড়ি জমান বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে। বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে বিদেশি ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশের দিন পর্যন্ত সব পরিকল্পনা করতে হাতে অন্তত এক বছর সময় রাখা প্রয়োজন। সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার পথকে সহজ করে দেয়। সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করলে বিদেশে পড়াশোনা করা সহজ এবং ফলপ্রসূ হবে। নিচে ধাপে ধাপে প্রস্তুতির কৌশল তুলে ধরা হলো—
সঠিক দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
প্রথমেই আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন দেশ এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান। এই ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি—
- কোর্স ও ক্যারিয়ারের সুযোগ: আপনার পছন্দের বিষয়ে কোন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভালো শিক্ষা প্রদান করে, তা খুঁজে বের করুন।
- টিউশন ফি ও খরচ: বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ, যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যয়ের হিসাব করুন।
- ভিসা ও অভিবাসন সুবিধা: দেশভেদে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ ভিন্ন হয়।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি
বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে কিছু ভাষাগত ও একাডেমিক দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়।
- আইইএলটিএস বা টোফেল: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজন হয়।
- স্যাট / এসিটি: যুক্তরাষ্ট্রের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দরকার হতে পারে।
- জিআরই / জিম্যাট: স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার জন্য এই পরীক্ষাগুলো লাগে।
- দেশভেদে বিশেষ পরীক্ষা: যেমন জাপানে এমইএক্সটি, জার্মানিতে ই টেস্টডাফ, বা ফ্রান্সে টিসিএফ ইত্যাদি।
অ্যাডমিশনের কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের ভর্তি নীতিমালা ভালোভাবে পড়ুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন। সাধারণত নিম্নলিখিত নথি জমা দিতে হয়—
- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
- ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (আইইএলটিএস বা টোফেল)
- স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি)
- সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার)
- পাসপোর্ট ও অন্যান্য আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট
স্কলারশিপ ও ফান্ডিং ব্যবস্থা
বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে অনেক খরচ হয়, তাই স্কলারশিপ ও ফান্ডিং সুযোগ সম্পর্কে জানা দরকার।
- সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপ: যেমন এমইএক্সটি (জাপান), শেভেনিং (যুক্তরাজ্য), ইরাসমাস + (ইউরোপ) ইত্যাদি।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ: অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্কলারশিপ অফার করে।
- পার্ট-টাইম জব ও শিক্ষাঋণ: কিছু দেশে শিক্ষার্থীরা পার্ট-টাইম কাজ করে খরচ বহন করতে পারে।

এডমিশন হয়ে গেলে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন, ছবি: ফ্রিপিক
ভিসা আবেদন করা
ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সাধারণত ভিসার জন্য নিচের কাগজপত্র লাগে—
- বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার
- ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট (ব্যাংক ব্যালেন্স)
- মেডিকেল ও ভ্রমণ বীমা
- পাসপোর্ট ও ফটো
- ভিসা ফি জমা দেওয়ার রশিদ
আবাসন ও যাতায়াত পরিকল্পনা
বিদেশে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি, হোস্টেল, বা নিজস্ব বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব দেশে থাকা অবস্থাতেই ঠিক করে যেতে হবে, যাতে যাওয়ার পর অসুবিধা না হয়। এছাড়া বিমানের টিকিট ভ্রমণের কিছু মাস আগে কেটে নেয়া ভালো। এতে বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে টিকেট পাওয়া যায়।

নতুন পরিবেশ, সংস্কৃতি, ও জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি, ছবি: ফ্রিপিক
দৃঢ় মানসিকতা
নতুন পরিবেশ, সংস্কৃতি, ও জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ নয়। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি। ভাষার ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করুন। স্থানীয় সংস্কৃতি ও আইন সম্পর্কে জানুন। জরুরি পরিস্থিতিতে কাকে যোগাযোগ করবেন, তা জেনে রাখুন।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে পরিকল্পনা, সময় ব্যবস্থাপনা ও ধৈর্যের প্রয়োজন। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে বিদেশে পড়াশোনা আপনার ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যতের জন্য একটি অসাধারণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: ইউএনবি ও গো ওভারসিস