শুভ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে আজ। দেবী দুর্গা অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। দুর্গাপূজার শুরু হয় মহালয়ায়। সেদিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়। এবার রাজধানী ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামের মণ্ডপগুলো ছিল উৎসবমুখরিত। শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। প্রায় সর্বত্রই মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয় অংশগ্রহণ এর প্রমাণ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও সর্বজনীন দুর্গোৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে। এ দেশে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এক ধর্মাবলম্বী অন্য সম্প্রদায়ের বিপদে-আপদেও পাশে দাঁড়ায়। এটা বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির পরিচায়ক। মাঝেমধ্যে অশুভ শক্তি এ পরিচয় মুছে ফেলতে তৎপর হলেও সাধারণ মানুষ কখনোই একে প্রশ্রয় দেয়নি। দুর্গাপূজার সঙ্গে বাংলার প্রকৃতির রয়েছে নিগূঢ় সম্পর্ক। শরত-হেমন্তের শুভ্র কাশফুলের মতো মানব হৃদয়েও পুণ্যের শ্বেতশুভ্র পুষ্পরাশি প্রস্ফুটিত হোক। অসুরকে বধ ও অশুভকে বিনাশ করে মানব মনে সঞ্চারিত হোক শুভ চেতনা-এটাই বিজয়া দশমীর প্রত্যাশা।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে রাজশাহীর তাহেরপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছিল। সেখান থেকেই আমাদের বাংলাদেশে সর্বজনীন দুর্গোৎসব পালনের সূত্রপাত হয় বলে ধারনা পাওয়া যায়। রাজা কংস নারায়ণ রায়ের হাতে শুরু হওয়া এই দুর্গোৎসবের আনন্দ আয়োজন কালের পরিক্রমায় সার্বজনীন সংস্কৃতির রূপ পেয়েছে সারা বাংলায়। শাদা কাশবন, শিশির ভেজা শিউলি, মৃদু কোমল সমীরণ মিলিয়ে বাংলার শরৎ সত্যিই রূপের রানি। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবের অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য নানা ধর্মের মানুষও। সম্প্রীতির শক্তির কারণেই পূজামণ্ডপে ভিড় জমে সকল ধর্মের মানুষের, আনন্দ ভাগাভাগি করে সমাজের সকলে মিলে।
শারদীয় দুর্গোৎসব দেশব্যাপী বয়ে আনুক সম্প্রীতির উৎসবের আনন্দধারা।