শেয়ারবাজারে ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিজেদের ঋণের টাকা তুলে নিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে বাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। ফোর্সড সেল বন্ধ না হলে বড় দরপতন থামবে না। এছাড়া স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাও দরপতনকে তরান্বিত করেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সোমবার হ্যালোবিডিকে এমনটা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে দরপতনের পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে চরম আস্থাহীনতা। বাজার যা সংশোধন হওয়ার হয়ে গেছে। একমাত্র আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি ছাড়া বাজার আর বেশি নিচে নামার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না।
এ পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বলেন, একটা পুঁজিবাজার চালাতে হয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এক্সচেঞ্জ এবং অন্য যারা মার্কেট প্লেয়ার আছেন তাদের সবার মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। সেখানে যদি সমন্বয় ও আস্থার অভাব হয় তাহলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে।
তিনি বলেন, টানা দরপতনে বাড়ছে ফোর্সড সেল। এ অবস্থায় ফোর্সড সেল বন্ধ না করলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে না। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ পুঁজিবাজার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে যারা বড় বিনিয়োগকারী, তারা চলে যাচ্ছেন ট্রেজারি বিল, বন্ডের দিকে। সেখানে তারা ভালো সুবিধা পাচ্ছেন। এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে যদি আস্থার পরিবেশ না থাকে তাহলে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আগে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি অংশ ছিল যারা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বাজারে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে। আবার তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে বাজারে দরপতন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে যারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দায়িত্বে এসেছেন তাদের সদিচ্ছা আছে। গত ১৫ বছর অনিয়মের মধ্যে ছিল দেশের আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার। আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটা করতে গিয়ে তারা যদি মনে করে ১৫ বছরের অনিয়ম এক-দুই মাসে ঠিক করে ফেলবে তাহলে বাজারে ভুল বার্তা যাবে। পুঁজিবাজার খুবই স্পর্শকাতর জায়গা।
আইসিবি সরকারের কাছ থেকে তহবিল পেলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আবু আহমেদ।
দেশের পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে বিশেষ ছাড় বা প্রণোদনা দিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির পরামর্শ দিয়ে আবু আহমেদ বলেন, বিদেশি ও দেশের বড় কোম্পানিকে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পারসু করতে হবে। সিস্টেমকে ইনসেনটিভ দেওয়া লাগবে, নইলে তারা আসবে না। বহুজাতিকের পাশাপাশি দেশেও অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে। তাদেরকে বাজার আনতে হলে ‘সিস্টেম ইনসেনটিভ’ দিতে হবে, নইলে তারা আসবে না মন্তব্য করেন তিনি।