Home বাণিজ্য ডিম-মুরগি বেচে ৩ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ২৭০০ কোটি টাকা

ডিম-মুরগি বেচে ৩ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ২৭০০ কোটি টাকা

ইকবাল হোসেন
১০৫ views

নানামুখী সংকটেও ডিম ও মুরগিসহ পোলট্রি পণ্যের ব্যবসায় ভালো মুনাফা করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে এ খাতের অন্যতম শীর্ষ তিন কোম্পানি কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রির মোট সংরক্ষিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়।

মুনাফা থেকে যাবতীয় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ব্যয়, আয়কর ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ পরিশোধের পর যে অংক অবশিষ্ট থাকে সেটিই একটি কোম্পানির সংরক্ষিত মুনাফা। এটিকে কোম্পানির পুনর্বিনিয়োগযোগ্য মুনাফা হিসেবেও দেখা হয়। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতেও বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে আরো ফুলেফেঁপে উঠছে পোলট্রি খাতের তিন করপোরেট প্রতিষ্ঠান।

দেশে মুরগির বাচ্চা, পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের বাজারেরও বড় অংশ তাদের দখলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানির বাইরে অন্য অনেক খামারিকেও কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাজারের আকৃতি, মুনাফাসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কোম্পানিগুলো বরাবরই এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে। কোম্পানিগুলোর দাবি, ডিম ও মাংসের বাজারে তাদের সম্মিলিত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ১৫-২০ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পোলট্রি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই কোম্পানিগুলোর দখলে। বলতে গেলে বাজারের গতিপ্রকৃতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।

পোলট্রি খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ উঠেছে। পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ২০২২ সালে অস্বাভাবিকভাবে ডিমের দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডায়মন্ড এগ ও সিপি বাংলাদেশকে এ বছরের জানুয়ারিতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। এর মধ্যে ডায়মন্ড এগকে আড়াই কোটি টাকা ও সিপি বাংলাদেশকে জরিমানা করা হয়েছে ১ কোটি টাকা।

পোলট্রি বাজারে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবশালী হিসেবে দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপ, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগ, রাশিক/জামান গ্রুপ ইত্যাদি। 

কাজী ফার্মস, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রি সর্বশেষ হিসাব বছরে মোট বিক্রি করেছে ৯ হাজার ৬১ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানি তিনটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে এ তিন কোম্পানির মোট সংরক্ষিত মুনাফা (রিটেইনড আর্নিংস) দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯১ কোটি টাকায়। উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোলট্রি খাতের বিক্রি থেকে আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর ধার্য ছিল।

ব্রয়লারের জিপি স্টকের বাজারে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ৮৫ শতাংশ। ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস দেশের পোলট্রি খাতে করপোরেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েক বছর আগে এক গবেষণা চালায়। গবেষণার ভিত্তিতে প্রকাশিত ‘পোলট্রি সেক্টর স্টাডি বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে আসে, দেশে মাংসের জন্য পালনকৃত ব্রয়লার মুরগির জিপি স্টক সবচেয়ে বেশি রয়েছে কাজী ফার্মস গ্রুপের। দুটি খামারে তাদের ৪৯ হাজার জিপি ব্রয়লার রয়েছে। ব্রয়লারের জিপির বাজারের ৩৪ শতাংশই কাজী ফার্মসের দখলে। প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লার ও লেয়ারের পিএস খামার রয়েছে সাতটি। যেগুলো একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করছে। কোম্পানিটির জবাইখানায় একদিনে ১০ হাজার মুরগি প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের মোট হ্যাচারির সংখ্যা ১৩টি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফিড কারখানা রয়েছে দুটি।

কাজী ফার্মস লিমিটেড ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে মোট বিক্রি করেছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এ সময় কোম্পানিটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। আর গত বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির মোট সংরক্ষিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকায়।

দেশের পোলট্রি খাতে ১৯৯৮ সালে প্রবেশ করে থাইল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি মুরগির বাচ্চা, পোলট্রি ফিড ও ডিম উৎপাদনের পাশাপাশি পোলট্রিভিত্তিক ফাস্টফুডের ব্যবসাও করছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানিটির পোলট্রি ব্যবসায় মোট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে সিপি বাংলাদেশের সংরক্ষিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬৭৮ কোটি টাকায়।

দেশের পোলট্রি ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য একটি অংশীদার হচ্ছে প্যারাগন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড। এছাড়া গ্রুপটির অধীনে ডিইএনএম পোলট্রি কমপ্লেক্স (প্রাইভেট) লিমিটেড, রংপুর পোলট্রি কমপ্লেক্স (প্রাইভেট) লিমিটেড ও উশা পোলট্রি লিমিটেড নামে আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৭৭০ কোটি টাকার বিক্রি করেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির ৩৮ কোটি টাকা কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে। গত বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির সংরক্ষিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩২৭ কোটি টাকায়। 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ