Home বাণিজ্য মাসে কত টাকা সঞ্চয় করবেন

মাসে কত টাকা সঞ্চয় করবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
৫৭৫ views

কমবেশি সবাই সঞ্চয়ের গুরুত্ব জানেন। কিন্তু প্রতি মাসে কতটা সঞ্চয় করবেন, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই বিষয়টি মূলত একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিস্থিতি ও আয়ের ওপর নির্ভর করে। কিছু নির্দেশনা বা পরামর্শ হয়তো কতটা সঞ্চয় করা উচিত তা নিয়ে ধারণা দিতে পারে। কিন্তু, পুরো বিষয়টি নির্ভর করে মনোভাবের ওপর।

প্রতি মাসে কত সঞ্চয় করা উচিত?  
একজন ব্যক্তির প্রতি মাসে কত সঞ্চয় করা উচিত তার কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। এটি বয়স, আয় ও লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে। যাইহোক, বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি আছে ৫০-৩০-২০, এই পদ্ধতিটি কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে সে বিষয়ে সাধারণ ধারণা দিতে পারে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং তার কন্যা অ্যামেলিয়া ওয়ারেন তিয়াগি ‘অল ইওর ওর্থ: দ্য আল্টিমেট লাইফটাইম মানি প্ল্যান’ বইয়ে এই পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। 

জনপ্রিয় এই পদ্ধতিটি পরামর্শ দেয়, কর-পরবর্তী আয়ের ৫০ শতাংশ অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন (যেমন আবাসন এবং ইউটিলিটিস), ৩০ শতাংশ নিজেদের প্রয়োজন ও ২০ শতাংশ সঞ্চয় ও ঋণ পরিশোধে ব্যয় করার।

যেমন- কারো মাসিক আয় যদি ৪০ হাজার টাকা হয়, তাহলে তিনি এই পদ্ধতি কীভাবে মেনে চলবেন। অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন: ২০ হাজার টাকা (আয়ের ৫০ শতাংশ) নিজেদের প্রয়োজন: ১২ হাজার টাকা (আয়ের ৩০ শতাংশ) সঞ্চয় এবং ঋণ পরিশোধ: ৮ হাজার টাকা (আয়ের ২০ শতাংশ)

d
ছবি: সংগৃহীত

অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ৫০-৩০-২০ পদ্ধতি সবার জন্য কাজ করবে না। বেতনের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা অনেকের জন্য সম্ভব নাও হতে পারে। আবার অনেকের জন্য এটা কম হয়ে যেতে পারে। যেমন- কেউ যদি নতুন ক্যারিয়ার শুরু করে ও ব্যয়বহুল অঞ্চলে বাস করেন, তাহলে বেতন বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ২০ শতাংশ সঞ্চয়ে সক্ষম নাও হতে পারেন। আবার কারো চাকরির বয়স যদি ৫ বছর বা তারও বেশি হয়ে থাকে তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই ২০ শতাংশের বেশি সঞ্চয় করতে চাইবেন। তাই আপনি যদি সঞ্চয় করেত চান তাহলে ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে যান, তারপর নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে সঞ্চয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন।

যেভাবে প্রতি মাসে সঞ্চয় বৃদ্ধি করবেন  
সঞ্চয়ের হার বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আয় বাড়াতে হবে বা ব্যয় কমাতে হবে। আর কেউ যদি দুটোই করতে পারেন, তাহলে আরও ভালো। এজন্য কয়েকটি উপায় মেনে চলতে পারেন। প্রথমেই ব্যয়ের খাত নির্দিষ্ট করতে হবে। কেউ যদি ব্যয়ের খাতগুলো সুনির্দিষ্ট করতে পারে, তাহলে তার জন্য অর্থের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সহজ হয়। 

ব্যাংক স্টেটমেন্টগুলো ঘেঁটে খরচের খাতগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তারপর ব্যয়ের তালিকা থেকে অপ্রয়োজনীয় খাতগুলো ছাটাই করতে হবে। তারপর আছে ঋণ পরিশোধ করা। ঋণের পরিমাণ বেশি হলে আয়ে প্রভাব ফেলতে পারে এবং সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমাতে পারে। তাই উচ্চ সুদের ঋণগুলো আগে পরিশোধের চেষ্টা করতে হবে। ঋণ পরিশোধ হয়ে গেলে সেই টাকা সঞ্চয়ে স্থানান্তর করতে পারেন। তাহলে সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়বে। আরেকটি উপায় হলো- আয়ের দ্বিতীয় খাত তৈরি করা। নিয়মিত চাকরির পাশাপাশি ছোট কোনো আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেন। তাহলে সঞ্চয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

ds
ছবি: সংগৃহীত

কীভাবে ব্যয় করতে হবে  
৫০-৩০-২০ গাইডলাইন মেনে চললে আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রয়োজন বা নির্দিষ্ট খরচে ব্যয় করতে হবে। এর মধ্যে আছে বাসা ভাড়া, ইউটিলিটি, গাড়ি পেমেন্ট, বিমা প্রিমিয়াম ও চাইল্ডকেয়ার। এরপর আয়ের আরও ৩০ শতাংশ নিজেদের ‘চাহিদা’ বা পরিবর্তনশীল ব্যয়ের জন্য খরচ হবে। যেমন- মুদি, ডাইনিং, বিনোদন, পোশাক, শখ, বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, গাড়ি মেরামত ইত্যাদি। আয়ের অবশিষ্ট ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত বা যদি ঋণ থাকে তাহলে তা পরিশোধ করতে হবে। 

জরুরি তহবিল  
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সবারই একটি জরুরি তহবিল থাকা উচিত। যেখানে ৩ থেকে ৯ মাসের প্রয়োজনীয় ব্যয় জমাতে হবে। তাই কারও যদি জরুরি তহবিল না থাকে, তাহলে এখনই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যতের বিপদের কথা ভেবে জরুরি তহবিলে টাকা জমানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি জরুরি তহবিলে মাসে ১ হাজার টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব হলে সেটাই করা উচিত। 

বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমে তিন মাস চলতে যে খরচ হবে, তার সমপরিমাণ অর্থ জমান। যেমন এখন যদি আপনার প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকা খরচ হয় তাহলে (৫০,০০০ X ৩) দেড় লাখ টাকা জমাবেন। তবে কেউ কেউ তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাসের খরচের টাকা জমানোর পরামর্শও দিয়ে থাকেন।

বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা কেন তিন মাসের খরচের টাকা জমানোর পরামর্শ দেন? কারণ, যেকোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে বা চাকরি ছেড়ে নতুন কিছু করার চিন্তা মাথায় আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই সময়ে যাতে সংসার খরচ চালাতে কোনো সমস্যা না হয়, তাই তিন মাসের খরচের সমান টাকা জমানোর কথা বলা হয়েছে। ধরে নেওয়া যায়, এই তিন মাসে নতুন আরেকটি চাকরির ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন।

চাকরি চলে যাওয়া ছাড়াও পরিবারের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে, বাসায় টিভি/ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে—এ ধরনের পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে এই জমানো টাকা কাজে আসবে। যদি তিন মাসের খরচের সমপরিমাণ অর্থ হাতে থাকে, তাহলে বাড়তি টেনশন করতে হবে না। মনে একটা সাহস থাকবে।

dep
ছবি: সংগৃহীত

বেতন থেকে কত টাকা জমাতে হবে  
কেউ যদি ৬০ বছর বয়সে অবসরে যেতে চান এবং এই সময়ের মধ্যে টুকটাক বিশ্ব ভ্রমণ করতে চান—–তাহলে তার বেশি টাকা সঞ্চয় করতে হবে। আসলে বেতন থেকে কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে সেটা নির্ভর করে বয়সের ওপর। কেউ যদি ছাত্রাবস্থায় সঞ্চয় করতে আগ্রহী হয়, তাহলে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত। চাকরিজীবী হলে বেতনের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত। কেউ সক্ষম না বেতনের ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ দিয়ে শুরু করতে হবে। 

২০-২৯ বছর বয়সে কত সঞ্চয় করবেন : এই বয়সীদের জন্য পরামর্শ হলো আয়ের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা। যদিও এই বয়সীদের জন্য ২০ শতাংশ কঠিন হতে পারে। তবে যত তাড়াতাড়ি সঞ্চয় শুরু করা যাবে ততই ভালো। যদি আয়ের ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে ১০ বা ৫ শতাংশ করুন। মূল কথা হলো আগে শুরু করতে হবে। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়ের হার বাড়ানো সম্ভব হবে।

৩০-৪৯ বছর বয়সে কত সঞ্চয় করবেন  
৩০-৪৯ বছর বয়সীরা সম্ভবত বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান। তাই তখন বাড়ি কেনা বা পরিবার গড়ে তোলার মতো পরিকল্পনা শুরু হয়। এই সময়টাতে খরচও তুলনামূলক বাড়ে। কতটা সঞ্চয় করতে হবে তা আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে ঠিক করে নিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই বয়সীদের জন্য আয়ের ৩০ শতাংশ সঞ্চয় করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 

সহজে সঞ্চয়ের উপায়: সঞ্চয়ের কোনো সহজ উপায় নেই। সঞ্চয়ী হতে হলে, আগে দরকার টাকা জমানোর মনোভাব। যত কষ্টই হোক না কেন নির্দিষ্ট টাকা জমাতে হবে। এজন্য সবচেয়ে ভালো হয় বেতন পাওয়ার পর প্রথমে সঞ্চয়ের পরিমাণ আলাদা করে ফেলা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে জমা দেওয়া। অনেকে আগে খরচের টাকা আলাদা করেন, এটা ভুল ধারণা। সবার উচিত আগে সঞ্চয়ের টাকা আলাদা করা। তারপর যে টাকা থাকবে সেখান থেকে প্রয়োজন বুঝে খরচ করতে হবে। কিন্তু আগে খরচ করলে পরে সঞ্চয়ের টাকা নাও থাকতে পারে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ