রপ্তানি আয়ে গতি কমেছে। চলতি অর্থ বছরের (২০২৪-২৫) দশম মাস এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এক ধাক্কায় ৩.০১ বিলিয়ন বা ৩০১ কোটি ডলারে নেমেছে। এই অঙ্ক এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৯৯ কোটি ১০ লাখ (২.৯৯ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট ৪ হাজার ২০ কোটি ৮১ লাখ (৪০.২১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩ হাজার ৬৬০ কোটি ৮৪ লাখ (৩৬.৬১ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমার প্রধান কারণ হচ্ছে ঈদের ছুটি। ঈদের কারণে ৮/১০ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন হয়নি; রপ্তানিও হয়নি। সে কারণেই রপ্তানি আয় কমেছে।
এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় সার্বিক প্রবৃদ্ধিও কমে এসেছে। চলতি অর্থ বছরের সাত মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। নয় মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে ছিল ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। দশ মাস শেষে (জুলাই-এপ্রিল) সেই প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০১ কোটি ৬৮ লাখ (৩.০১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। আগের মাস মার্চে ৪২৪ কোটি ৮৬ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল হয়েছিল ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ; আয় হয়েছিল ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন রপ্তানিকারকরা, যা ছিল গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস মার্চে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮১ দশমিক ১৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই দশ মাসে ৩২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
হিসাব বলছে, জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এপ্রিল ভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে আয়ের অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার; কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। তবে দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে কৃষি পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এপ্রিলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। দশ মাসের হিসাবে বেড়েছে ১০ দশমিক শূন্য আট শতাংশ। এপ্রিল মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ; তবে জুলাই-এপ্রিল সময়ে কমেছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এপ্রিলে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে দশমিক ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ; তবে দশ মাসের হিসাবে বেড়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় যেটা কমেছে, সেটা মূলত দুটি কারণে কমেছে। একটি হচ্ছে- রোজার ঈদের কারণে এপ্রিলে ৮/১০ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এই কয়দিন উৎপাদন হয়নি; রপ্তানিও হয়নি। সে কারণেই আয় কম হয়েছে। অন্য একটি কারণ হচ্ছে, গ্যাস সঙ্কট। গ্যাস সমস্যার কারণেও উৎপাদন কম হয়েছে। প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে।