চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। এ সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। বাস্তবায়নের এই হার ১৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এডিপিতে মোট বরাদ্দের ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ খরচ হয়েছিল।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডি’র ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য পাওয়া যায়। এতে দেখা যায় ওই অর্থবছর থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এর থেকে কম এডিবি বাস্তবায়ন হয়নি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্ট জুড়ে জ্বালাও পোড়াওয়ের পর এডিপি বাস্তবায়নে ধস নামে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থবির হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার তা আরও কমে গেছে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির প্রভাবও পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। সরকার কম ব্যয়ের দিকে ধাবিত হয়ে এটি কাটছাঁটও করেছে। গত ৩ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপিতে টাকার অঙ্কে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দসহ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এডিপি চূড়ান্ত হয়েছিল। কমানোর পর এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয়ের বরাদ্দসহ আরএডিপির আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা; অর্থ্যাৎ কমেছে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৫২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
আইএমইডির তথ্য বলছে, মার্চে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মার্চে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ; খরচ হয়েছিল ২২ হাজার ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
ব্যয় ও বাস্তবায়ন হার- উভয় বিবেচনায়ই চলতি অর্থবছরের মার্চে এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সংশোধিত এডিবির ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ ও ৪৫ দশমিক ০৫শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের বেহাল দশা নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ঘিরে আন্দোলন, নৈরাজ্য আর আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে তৈরি হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে থমকে যাওয়া উন্নয়ন কাজের প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
