Home বাণিজ্য সয়াবিন তেল ছাড়া রোজার অন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল

সয়াবিন তেল ছাড়া রোজার অন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল

হ্যালো বাংলাদেশ প্রতিবেদক
৫৮ views

পবিত্র রমজানের বাকি মাত্র কয়েকদিন। ইতিমধ্যেই  বাজারে রোজার পণ্য কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এ বছর সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য ভোগ্যপণ্যের দাম এখনো অনেকটাই স্থিতিশীল। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে ৯ ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি গড়ে ৩৯ শতাংশ বেড়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পণ্যগুলো হলো চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল, মটর, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুর। এর মধ্যে ছোলা ও মটর ডালের আমদানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। আমদানি বৃদ্ধি   বাজারে সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক ও পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে সহায়ক হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, সরকারের তরফ থেকে যতটুকু করা সম্ভব ছিল, সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে, যাতে রমজানে সবচেয়ে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর দাম কমে। শুল্ক ছাড়ের কারণে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি করেছেন। এতে এবার রোজায় ভোগ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি হবে না; বরং দামটি নিম্নগামী থাকবে। তাতে রমজানে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।

সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি
কয়েক মাস ধরে চলা সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। অস্থিরতা রয়ে গেছে সয়াবিন তেলের বাজারে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সয়াবিন তেলের দেখা মিলছে না। সরবরাহ সংকটের সুযোগ নিয়ে অধিকাংশ বিক্রেতা ১৭৫ টাকা লিটারের তেল ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। পাঁচ লিটার বোতলজাত  সয়াবিন তেলে ৯০০ টাকা বিক্রি করছে, যদিও কোম্পানি নির্ধারিত খুচরা দাম ৮৫২ টাকা।  অনেকে তেলের বোতল কেটে ড্রামে ঢেলে চড়া দামে খুচরায় বিক্রি করছেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বেড়েছে। তাতে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়। 

বিক্রেতারা জানান, গত নভেম্বর মাস থেকেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। মাঝের সময়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পরে সরবরাহের সংকট কিছুটা কমেছিল। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে আবার তীব্র হয়েছে এ সংকট।

তেল না পাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে রাজধানীর রামপুরা উলন বাজারে সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, রমজানের আগে সয়াবিন তেলের চাহিদা যখন বেড়ে যায় সরবরাহকারীরা তখন ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এটি মানুষের পকেট কাটার ধান্দা। এবার অন্যসব পণ্যের মুনাফা তেলে উঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল
বাজার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরে। গত বছর রমজানেও এ দামে ছোলা কেনা গেছে। একইভাবে খেসারির ডাল ১১০-১২০ টাকা ও মসুর ডাল ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাস দুই আগে চিনির দাম উঠেছিল ১২৫-১৩০ টাকায়। এখন তা কিছুটা কমে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

রমজানের আরেকটি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ। এবছর ভরা মৌসুম হওয়ার কারণে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

রমজান ঘিরে বাজারে মুড়ি ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুড়ি ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছরও এমন দাম ছিল বলে জানান বিক্রেতারা।

তবে খেজুরের দাম কিছুটা কমছে। গত বছর রমজানের আগে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এবার সে তুলনায় খেজুরের বাজার স্থিতিশীল। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা এবং ভালো মানের খেজুর ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে অন্যসব পণ্যের দামেও তেমন হেরফের দেখা যায়নি। স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামেও। বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক; এতে কমেছে দাম। 

আমদানির চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি—এই চার মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। উল্লিখিত সময়ে সয়াবিন তেলের আমদানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টনে। ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। খেজুরের আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন। আলোচ্য সময়ে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ আমদানি বেড়েছে মটর ডালের। চার মাসে এই পণ্যটি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। রসুনের আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন। আদার আমদানি ৫৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ