সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকটে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও এক-দুই লিটারের তেল খুবই সীমিত। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। সংকট দেখিয়ে ভোক্তার কাছে অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে খোলা বা লুজ তেল বিক্রি করছেন অনেক দোকানি।
বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি মূল্য ৮৫০-৮৫৫ টাকা। সরকার দাম বাড়লেও সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট চলমান। এখনও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক নয় বলেই দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। যার কারণে খোলা সয়বিন তেল লিটার প্রতি বাড়তি দামে ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা যখনই মনে করেন, কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে হবে, প্রথমে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। না সয়াবিন ও পামতেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সয়াবিন ও পাম তেলের অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
টি কে গ্রুপের সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু খোলা সয়বিন তেলের দাম বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়ে বেশি। বাড়তি দামের কারণে অসাধু ব্যাবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় বোতলজাত সয়াবিন তেল খোলা সয়বিন তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করছে। এ কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ালে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
আকিজ রিসোর্সেসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ এসেনসিয়ালসের কর্মকর্তা ও বাজার বিশ্লেষক এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, এস আলম গ্রুপ সয়াবিনের বড় আমদানিকারক ছিল। তাদের অনুপস্থিতি মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম ১২৪ টাকা থেকে বেড়ে ১২৮ টাকা হয়েছে। আমদানিকারকরা ১২৪ টাকা রেটে আমদানি করলেও এখন ১২৮ টাকা রেট ধরে কস্টিং করছে।
তিনি বলেন, খোলা সয়বিন তেলের মিল রেট ১৬৫ টাকা হলেও ভোক্তাকে ১৯০ টাকা লিটার কিনতে হচ্ছে। মিল রেট থেকে চূড়ান্ত ভোক্তা পর্যন্ত লিটারে ২৫ টাকা পার্থক্য। এই ২৫ টাকা মধ্যসত্ব ভোগীরা মুনাফা করে নিচ্ছে। মিল থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত আসতে কয়েক হাত ঘোরে। হাত ঘুরতে ঘুরতে ১৬৫ টাকা লিটারে তেল ১৯০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাজারে কোন তদারকি নেই। খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করতে পারলে বোতলে কেন কম দামে বিক্রি করবে। এজন্যই বোতলজাত সয়াবিনের সংকট বেশি। খুচরা বিক্রেতারও বোতল কিনে ড্রামে ঢেলে খোলা তেল বানিয়ে ফেলে। কারণ ড্রামে রেট যাচাইয়ের সুযোগ নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, রোজা ঘিরে কয়েক বছর ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট একটি পন্থা অবলম্বন করছে। রোজায় দাম না বাড়িয়ে রোজা শুরুর ২ থেকে ৩ মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে রাখছে। এতে রোজায় ক্রেতারা বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আর অতি মুনাফা লুফে নিচ্ছে সেই চিরচেনা সিন্ডিকেট। এখন থেকেই কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের দোকানি ইব্রাহিম খলিল বলেন, গত দুই-তিন মাস ধরেই ডিলাররা তেল সরবরাহ করছে না। অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছি না। অনেকেই তেল চাচ্ছে দিতে পারছি না। এক দফা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তারপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। রমজানকে ঘিরে আরেক দফা দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে বড় ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে বর্তমানে খোলা তেল ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি করছি।
তেল নিতে এসে মারুফ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল নাই। ২ লিটার তেল পেয়েছি, তাও বাড়তি দামে কিনেছি। যদিও এমআরপি ৩৫০ টাকায় লেখা ছিল। ক্রেতা হিসেবে বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছি। দেখার কেউ নেই।