Home টপ পোস্ট নিট পোশাকে ভর করে রপ্তানি আয়ে চমক

নিট পোশাকে ভর করে রপ্তানি আয়ে চমক

ইকবাল হোসেন
৮০ views

নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয়ে যে উল্লম্ফন হয়েছে তাতে নিট পোশাক তথা কম দামি পোশাকের বড় অবদান ছিল। এ সময় মোট পণ্য রপ্তানি আয়ের ৪৪ শতাংশের বেশি এসেছে নিট পোশাক থেকে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (অর্থ্যাৎ জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ (২৪.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এ সময় তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট যে আয় করেছে, তার ৪৪ দশমিক ১৭ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে। অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৯ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

ইপিবির হিসাব বলছে, এই ছয় মাসে তৈরি পোশাক থেকে যে আয় হয়েছে, তার ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে; ওভেনের চেয়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় দেশে এসেছে।

সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক শিল্পের দুটি উপখাত হচ্ছে ওভেন ও নিট। পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ার পর থেকেই ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। বেশ কয়েক বছর রপ্তানি বাণিজ্যে এই দুই খাতের অবদান ছিল কাছাকাছি। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ওভেনকে পেছনে ফেলে ওপরে উঠে আসে নিট খাত। এখনও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, রপ্তানি আয়ে ওভেনের চেয়ে কম দামি নিট পোশাকের অবদান ততই বাড়ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকই আসলে নিট পোশাক। যেমন টি-শার্ট, পলো শার্ট, সোয়েটার, ট্রাউজার, জগার, শর্টস প্রভৃতি। ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট, শ্যান্ডো গেঞ্জি, ট্রাউজারজাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। আরামদায়ক হওয়ায় সারা বিশ্বেই রয়েছে এ ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে শার্ট, প্যান্ট, স্যুট-ব্লেজার জাতীয় ফরমাল পোশাক হচ্ছে ওভেন ক্যাটারির পণ্য।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে এসেছিল ১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। আর নিট পোশাক থেকে এসেছিল ১৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে পাল্টে যায় চিত্র; নিট থেকে আসে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন থেকে আসে ১৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

২০২১-২২ অর্থবছরে ওভেন থেকে আসে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; নিট থেকে আসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আসে মোট ৪৭ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে নিট থেকে আসে ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার; ওভেন থেকে আসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার কম, ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক থেকে রপ্তানি আয় আসে মোট ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে নিট থেকে আসে ১৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার; ওভেন থেকে আসে ১৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এই মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা রপ্তানি আয় দেশে এসেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে এই ডিসেম্বরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে ডিসেম্বর মাসে আয় হয়েছে ১ দমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১৮ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।  

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, গত তিন-চার বছর ধরেই ওভেনের চেয়ে নিট থেকে বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসছে। নানা সমস্যার মধ্যেও প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রেখেছি। দুই বছরের করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ের যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা পণ্য রপ্তানি পড়েছিল। কিন্তু নিট পোশাকের রপ্তানি কমেনি; উল্টো বেড়েছে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণে ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। তারা তখন খাদ্য ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছিল।

তার মতে, নিট পোশাক যেহেতু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই তারা বাধ্য হয়ে এগুলো কিনেছে। সে কারণে এই খাত থেকে রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। সুসংবাদ হচ্ছে, আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মানুষ আগের মতোই পোশাকসহ অন্য পণ্য কিনছে। তার প্রভাব পড়েছে নিট পণ্য রপ্তানিতে।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ