প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের বৃহত্তম ১০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফরচুন ম্যাগাজিন। ২০২৪ সালে রাজস্ব আয়ের ভিত্তিতে তৈরি করা এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন খুচরা বিক্রি প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট।
ফরচুনের বার্ষিক ‘গ্লোবাল ৫০০’ সমীক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কোম্পানিগুলোর আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। ১০ বৃহত্তম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টিই যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের। বাকি শীর্ষ কোম্পানিগুলো হচ্ছে অ্যামাজন, স্টেট গ্রিড, সৌদি আরামকো, সিনোপেক গ্রুপ, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম, অ্যাপল, ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ, বার্কশায়ার হ্যাথাওযয়ে ,সিভিএস হেলথ।
ওয়ালমার্ট
টানা এগারো বছরের মতো এই তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ওয়ালমার্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটির আয় ৬৪,৮১০ কোটি ডলার। স্যাম ওয়ালটনের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই সুপার মার্কেট ফ্র্যাঞ্চাইজি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি। ১৯৬২ সালে একটি পারিবারিক স্টোর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা এ কোম্পানির এখন বিশ্বব্যাপী ২৪টি দেশে ৩০ লাখেরও বেশি কর্মচারী রয়েছে। প্রতি ঘন্টায় ওয়ালমার্টের আয় ৭৪ মিলিয়ন ডলার। গত ৫ বছরে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
অ্যামাজন
ফরচুন ম্যাগাজিনের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। কোম্পানিটির আয় ৫৭,৪৮০ কোটি ডলার। গত পাঁচ বছরে, ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা, অ্যামাজন প্রাইম এবং বিজ্ঞাপনের আয়ের মাধ্যমে অ্যামাজনের আয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০২৫ সালে অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্রে তার অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যানবাহন বিক্রির পরিকল্পনা করেছে, তবে পণ্যের পরিধি আরও প্রসারিত করবে।
করোনাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে অ্যামাজনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল। লকডাউনের সময় এসব দেশের সিংহভাগ নাগরিকই নির্ভর করেছে অ্যামাজনের ডেলিভারির উপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মানুষের কেনাকাটার ধরণই বদলে দিয়েছে সম্পূর্ণরূপে। ১৯৯৪ সালে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে শুধু শক্তিশালীই হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস সিইও হিসাবে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন সম্প্রতি। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অ্যান্ডি জ্যাসি।
স্টেট গ্রিড
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক ইউটিলিটি কর্পোরেশন কেবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই না, এটি চীনের বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম কোম্পানি। কোম্পানিটির আয় ৫৪,৫৯০ কোটি ডলার। বেইজিং ভিত্তিক এই রাষ্ট্রায়ত্ত গ্রিড কোম্পানির নির্মাণ ও বিভিন্ন অংশের পরিচালনায় নিয়োজিত আছে প্রায় এগারো লাখ কর্মচারী।
সৌদি আরামকো
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি সৌদি আরামকো। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী আয়ের দিক থেকে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি। সৌদি আরামকোর কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের রিজার্ভ রয়েছে। কোম্পানিটির আয় ৪৯,৪৯০ কোটি ডলার। সৌদি আরামকো বিশ্বের বৃহত্তম একক হাইড্রোকার্বন নেটওয়ার্ক, মাস্টার গ্যাস সিস্টেম পরিচালনা করে।
সিনোপেক গ্রুপ
চীনের সিনোপেক গ্রুপ তেল ও গ্যাস ব্যবসার সাথে জড়িত। কোম্পানিটির আয় ৪২,৯৭০ কোটি ডলার। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চীনা কোম্পানি একটি কার্বন-নিরপেক্ষ ভবিষ্যতের জন্য কাজ করছে। বর্তমানে হাইড্রোজেন উৎপাদনের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে তারা। ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ লাখ টন পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সিনোপেক। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠান এবছর ফরচুনের র্যাঙ্কিংয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে\।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম এমনিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল কোম্পানি হলেও বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম কোম্পানি। কোম্পানিটির আয় ৪২,১৭০ কোটি ডলার। এই শীর্ষস্থানীয় চীনা কোম্পানির মোট ৩০টি দেশে তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক পেট্রোলিয়াম শিল্পেও এটি একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। ৩৩ বছর বয়সী এই প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৩ সাল থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সিইও ঝু জিপিং।
অ্যাপল
অ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিমালিকানাধানী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটির আয় ৩৮,৩৩০ কোটি ডলার। ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবসের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করার পর গত পাঁচ দশকে অনেক দূর এগিয়েছে এই টেক কোম্পানি। বন্ধু এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ উজনিয়াকের বাসায় বসে জবসের কম্পিউটার তৈরির মাধ্যমে উদ্ভব হওয়া অ্যাপলের বর্তমান মূল্যমান দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি।
ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ স্বাস্থ্যসেবা পণ্য এবং স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা প্রদান করে থাকে। কোম্পানিটির রাজস্ব আয় ৩৭,১৬০ কোটি ডলার। ৪৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সিইও স্যার অ্যান্ড্রু উইটি। এই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির।
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ইনকর্পোরেটেড হল আমেরিকার বহুজাতিক সমন্বিত বিনিয়োগয়ারী কোম্পানি। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটের প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বাজারমূল্য ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। কোম্পানিটির রাজস্ব আয় ৩৬,৪৫০ কোটি ডলার। জিকো, বিএনএসএফ, লুব্রিজল, ডেইরি কুইন, ফ্রুট অফ দি লুম, হেলজবার্গ ডায়মন্ডস এবং নেটজেট কোম্পানির পূর্ন অংশের মালিক হল বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে। এছাড়াও মার্স ইনকর্পোরেটেড, কোকাকোলা কোম্পানি, ওয়েলস ফার্গো ও আইবিএম এর বৃহদাংশ শেয়ারেরও মালিক।
সিভিএস হেলথ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিভিএস হেলথ স্বাস্থ্য শিল্পে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। কোম্পানিটির রাজস্ব আয় ৩৫,৭৮০ কোটি ডলার।