দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। আগামী পর্যটন মৌসুম থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। নিবন্ধন ছাড়া কেউ সেন্টমার্টিনে গেলে শাস্তি কিংবা অর্থদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে। এ জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে।
সম্প্রতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তবে বর্তমানে দ্বীপটির পরিবেশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রবাল, শৈবাল এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি দ্বীপটি পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির মাধ্যমে দ্বীপটি রক্ষার চেষ্টা চলছে।
ফোরকান আহমেদ আরও বলেন, ইতিমধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে, যা আগামী পর্যটন মৌসুম (ডিসেম্বর-এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে। এই নীতিমালায় নির্ধারিত থাকবে, কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন, কতজন সেখানে থাকতে পারবেন এবং কতটা জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সেন্টমার্টিনকে পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। চলতি মৌসুমে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পর্যটক গিয়েছিলেন, তবে আগামী মৌসুম থেকে এটি সীমাবদ্ধ করা হবে ১ হাজার ২৫০ জনে। এই সীমার মধ্যে কতজন রাত যাপন করতে পারবেন, সেটিও নীতিমালায় উল্লেখ করা হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন ৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার এবং এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পথে, যার মধ্যে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ১৯১ প্রজাতির মাছ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বীপটিতে মোটরসাইকেল, গাড়ি ও স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া, দ্বীপের ভাঙন রক্ষায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে, যা প্রবালের ক্ষতি করছে। রাতে হোটেলগুলোতে বাতি জ্বালানোর ফলে কচ্ছপের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, তাই রাতের বেলা আলো জ্বালানো যাবে না।
এই পদক্ষেপগুলো সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে, যাতে দ্বীপটি আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকে।