বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার, যেগুলোর সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। তেমনি একটি খাবার শেরপুরের ছানার পায়েস। সম্প্রতি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে মুখরোচক এই খাবারটি। শেরপুর জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
জিআই (GI) এর পূর্ণরূপ হলো (Geographical indication), বাংলায় ভৌগলিক নির্দেশক। এই ভৌগলিক নির্দেশক চিহ্ন যা কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর খ্যাতি বা গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত জিআইতে উৎপত্তিস্থলের নাম (শহর, অঞ্চল বা দেশ) অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কোনো পণ্য এই স্বীকৃতি পেলে বিশ্বব্যাপী ওই পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়।
দীর্ঘদিন ধরে শেরপুরবাসী তাদের এলাকার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ছানার পায়েসের জিআই স্বীকৃতি দাবি করে আসছিল। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে শেরপুর জেলা প্রশাসন। এরপর নানা তথ্য সংগ্রহ এবং এই খাবারের বিশেষত্ব যাচাই করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
আমাদের দেশের বিখ্যাত মিষ্টির মধ্যে শেরপুরে ছানার পায়েস অন্যতম। এর ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। বিট্রিশ আমলে ছানার পায়েস প্রথম তৈরি হয় শেরপুরের ঘোষপট্টিতে। বর্তমানের শেরপুরের জেলা সদরের ২০টিরও বেশি দোকানের এই মিষ্টি পাওয়া যায়।
সুনিপুণ কৌশলে দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি এই মিষ্টি চাহিদা বিয়ে, জন্মদিন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে অনেক বেড়ে যায়। অনেক প্রবাসী বিদেশে ফিরে যাওয়ার আগে ছানার পায়েস সঙ্গে করে নিয়ে যান।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার সুবাদে এখন এটি সরকারি অনুমতি স্বাপেক্ষে দেশের বাইরে রপ্তানি করার একটি দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা পরবর্তীতে দেশের অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখবে।