অ্যান্টিবায়েটিক (ওষুধ) দিয়ে মুরগির সংক্রমণ ঠেকাতে পারছিলেন না থাইল্যান্ডের পোল্ট্রি খামারিরা। কি করা যায়? তাই নিয়ে যখন চিন্তা-ভাবনা চলছে তখন দেশটির উত্তরাঞ্চলের ল্যাম্পাংয়ের একটি খামারে পরীক্ষামূলকভাবে মুরগিকে দেওয়া হয় গাঁজা মেশানো খাবার। এরপর মুরগিগুলোকে নজরে রাখেন গবেষকরা, তাতে ভালো ফল পেয়েছেন তারা। মুরগিগুলো শুধু সুস্থ হয়েই ওঠেনি, বেড়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
চিয়াং মাই ইউনিভার্সিটির কৃষি অনুষদের তত্ত্বাবধানে গত বছর চলে এই গবেষণা। এতে এক হাজার মুরগিকে বাছাই করে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেওয়া হয় গাঁজা মেশানো খাবার। বিশেষ করে খাবারের সঙ্গে গাঁজার পাতার টুকরো বা পানিতে মিশিয়ে দেয়া হতো মুরগিগুলোকে। গাঁজা মেশানো খাবার দেওয়ার পর এগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখেন তারা। এতে মুরগির ওজন বৃদ্ধি, ডিম এবং মাংসের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা সেটাও যাচাই করা হয়। যদিও গবেষক দল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনেও কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি।
তবে গবেষণা নিয়ে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, গাঁজা মেশানো খাবার খেয়ে মুরগির শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়েনি, বেড়েছে সামর্থ্যও। পাশাপাশি এদের আচরণ, মাংস এবং ডিমের গুণগত মানেও তেমন ক্ষতি হয়নি। এছাড়া এভিয়ান ব্রংকাইটিস রোগেও আক্রান্ত হয়নি গবেষণায় থাকা মুরগিগুলো।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুরগিগুলো আগের তুলনায় বেশি শক্তপোক্ত হয়েছে। আগে বিরূপ আবহাওয়ায় এগুলো অসুস্থ হয়ে যেত। কিন্তু গবেষণাকালে এদের মধ্যে যেকোনো আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্য দেখা গেছে। মুরগির সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে এভিয়ান ব্রংকাইটিস রোগ সবচেয়ে মারাত্মক। প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক প্রয়োগ করেও খামারিরা মুরগির এই সংক্রামক ঠেকাতে পারেনি।
চিয়াং মাই ইউনিভার্সিটির গবেষণার বিষয়ে দ্য পাথ লান্না কমিনিউটি এন্টারপ্রাইজের সভাপতি সিরিন চায়েমথেত বলেন, প্রতিষেধক প্রয়োগের পরও এভিয়ান ব্রংকাইটিস রোগ হওয়ায় এই গবেষণায় গাঁজা মেশানো খাবার খাওয়ানো হয় মুরগিকে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়েনি বরং বৈরি আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়ার শক্তিও পেয়েছে মুরগিগুলো। এখন খামারিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা আর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করবেন না মুরগিকে, খাওয়াবেন গাঁজা মেশানো খাবার।
ন্যাশনাল ফার্মার্স কাউন্সিলের সভাপতি প্রাপাত পানিয়াচাত্রাক বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া মুরগির মাংস ও ডিম ভোক্তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে বাড়ে এলার্জি এবং কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ভোক্তাদের নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিতে খামারের মুরগিকে গাঁজা মেশানো খাবার খাওয়ানো ভালো। এই অর্গানিক মুরগির বাণিজ্যিক গুরুত্ব আরও বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পরীক্ষামূলক গবেষণায় ভালো ফল আসায় খামারিরা আশাবাদী হয়ে উঠছেন, মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে গাঁজা মোশানো খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে। এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে এই মুরগি নিয়ে খেয়েছেন, তাতে মাংসের স্বাদ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি তারা।
এদিকে গাঁজা চাষ বা রোপণ করার বিষয়ে কিছুটা সুর নরম করেছে থাই সরকার। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে গাঁজাকে অবৈধ মাদকের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে থাইল্যান্ড। ফলে এখন দেশটিতে গাঁজা চাষ ও বিক্রি করা আর অবৈধ নয়। অবশ্য তা করতে হবে মেডিকেলের নিয়ম মেনে।
সিএনএন, গার্ডিয়ান, দ্য ন্যাশন ও দ্য এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক অবলম্বনে ভাষান্তর
