Home বিজ্ঞান চোখের রং নীল হয় কেন?

চোখের রং নীল হয় কেন?

তাসনিম তাবাসসুম
৮৮২ views

বঙ্গদেশে ‘কাজল কালো চোখ’ দেখেই আমরা অভ্যস্ত। কালো ও বাদামি ছাড়া খুব বেশি বৈচিত্র্যময় রঙের চোখ শুধু বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেই নয়, পুরো ভারত উপমহাদেশেই বিরল। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নীল, সবুজ, হেজেলসহ বিভিন্ন রঙের চোখের দেখা মেলে।

নীল চোখ সাধারণত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান, বাল্টিক এবং সেল্টিক পটভূমি থেকে উত্তর ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত বাসিন্দাদের মধ্যে পাওয়া যায়। প্রথম নীল চোখের মানুষের দেখা মিলেছিল আজ থেকে আনুমানিক ৬-১০ হাজার বছর পূর্বে। বিজ্ঞানীদের মতে, তখন একটি জাতির মধ্যে জটিল কিছু জিনগত পরিবর্তন ঘটে। এই জেনেটিক মিউটেশনের প্রভাব পড়ে মানুষের মেলানিন ও পিগমেন্টের ওপরে। এই মেলানিন ও পিগমেন্টেশনই আমাদের ত্বক, চুল ও চোখের রং নির্ধারণ করে। ক্রোমোজোমে থাকা OCA2 নামক একটি জিনের বিবর্তনের কারণে চোখের রং নীল হতে শুরু করে।

চলুন চোখের এই অনন্য রঙ সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় জেনে নিই—

নীল চোখের আসল রং বাদামি

আমাদের চোখের রঙ নির্ভর করে আইরিসে (চোখের মনির চারিদিকের রঙ্গিন ঘের) কতটা মেলানিন আছে তার ওপর। আইরিস দুটি স্তর নিয়ে গঠিত। নীল চোখের লোকেদের মনির পিছনের স্তরে (পিগমেন্ট এপিথেলিয়াম বলা হয়) বাদামী রঞ্জক থাকে।

আইরিসের সামনের স্তর (যাকে স্ট্রোমা বলা হয়) ওভারল্যাপিং ফাইবার এবং কোষ দ্বারা গঠিত। বাদামী চোখের ব্যক্তিদের কিছু কোষে বাদামী রঞ্জক থাকতেও পারে। এই সামনের স্তরে যদি একেবারেই কোনো রঞ্জক না থাকে, তবে তন্তুগুলি ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে। কিন্তু নীল আলোর রশ্মি বেশি প্রতিফলিত হওয়ার কারণে চোখ নীল দেখায়।

নীল চোখ আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল

চোখের আইরিসে থাকা মেলানিন সূর্যের আলো এবং অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ থেকে চোখের পিছনের অংশকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। নীল চোখে সবুজ, হেজেল, বাদামী ও কালো চোখের চেয়ে কম মেলানিন থাকে। তাই গাঢ় রঙের চোখের তুলনায় নীল চোখে ফোটোফোবিয়া বেশি দেখা যায়। আইরিসে কম মেলানিন থাকার মানে হল সূর্যের UV রশ্মি থেকে এটি চোখকে ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে না। অতএব, যাদের নীল চোখ তাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য সূর্যের বাইরে না থাকাই ভালো। আর বাইরে থাকলেও সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

নীল চোখের সবার একজন সর্বজনীন পূর্বপুরুষ থাকতে পারে

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হ্যান্স আইবার্গের মতে, মূলত আমাদের সবার বাদামী চোখ ছিল। তবে, ইউরোপে প্রায় দশ হাজার বছর আগে একজন ব্যক্তির মধ্যে জেনেটিক মিউটেশন নীল চোখের বিকাশ ঘটে।  তাই বলা যায়, এই জেনেটিক মিউটেশনটি আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সব নীল চোখের মানুষের চোখের রঙ নির্ধারণের জন্য দায়ী।

man with blue eyes blue sweater

জেনেটিক মিউটেশন নীল চোখের বিকাশ ঘটে। ছবি : ফ্রি পিক

জন্মের সময় নীল চোখ মানে তা সারাজীবনের জন্য নয়

মানুষের চোখে জন্মের সময় তার পূর্ণবয়স্ক পরিমাণ রঞ্জক থাকে না, তাই বেশিরভাগ ককেশীয় শিশু নীল চোখ নিয়ে জন্মায়। যেহেতু মানুষের মেলানিন সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হতে থাকে— এর ফলে শিশুর চোখের রঙ পরিবর্তন হয়। কারণ শৈশবকালে আইরিসে বেশি মেলানিন উৎপন্ন হয়।

নীল চোখের ব্যক্তিদের মদ্যপানের ঝুঁকি বেশি

একটি নতুন সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে নীল চোখের ব্যক্তিদের কালো চোখের তুলনায় অ্যালকোহল নির্ভরতার ঝুঁকি বেশি। আমেরিকান জার্নাল অফ মেডিক্যাল জেনেটিক্স, পার্ট বি: নিউরো সাইকিয়াট্রিক জেনেটিক্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নীল চোখের ইউরোপীয় আমেরিকানদের অ্যালকোহলের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার সম্ভাবনা যাদের চোখের রঙ গাঢ় তাদের তুলনায় ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।

portrait woman with clear blue e

নীল চোখের অতুলনীয় সৌন্দর্য সবাইকেই আকৃষ্ট করে। ছবি: ফ্রি পিক

সন্তানের চোখের রঙ আগে থেকে অনুমান করার উপায় নেই

নীল চোখের প্রিন্স উইলিয়াম এবং সবুজ চোখের কেট মিডলটনের ছোট ছেলে প্রিন্স জর্জ, গাঢ় বাদামী চোখের। তবে তার ছোট বোন প্রিন্সেস শার্লটের চোখ নীল।

এই নিশ্চয়তা কখনোই পাওয়া যাবে না যে তার ঠিক পরবর্তী প্রজন্মের কেউ অবশ্যই নীল চোখের হবে। পিতা-মাতা উভয়েরই যদি নীল চোখ থাকে তবে পরবর্তীতে তাদের ভবিষ্যতের কোনো প্রজন্মের কেউ পিঙ্গল অথবা হেজেল রঙের চোখও পেতে পারে। তবে পরবর্তী বংশানুক্রমে অবশ্যই নীল চোখের দেখা পাওয়া যেতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি বিবর্তন ও জিনকেন্দ্রিক।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ