Home বিজ্ঞান মদিনার কাছে মিলল ৪০০০ বছরের পুরনো শহর

মদিনার কাছে মিলল ৪০০০ বছরের পুরনো শহর

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
১৩৪ views

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের মদিনা শহরের নিকটবর্তী এক মরুদ্যানে ৪ হাজার বছরের পুরনো সুরক্ষিত একটি শহরের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে। আবিষ্কৃত শহরটির নাম রাখা হয়েছে আল-নাতাহ। সৌদি ও ফ্রান্সের একদল প্রত্নতাত্ত্বিক যৌথভাবে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ধ্বংসাবশেষটি উদ্ধার করেছে।

আধুনিক সৌদি আরবের মরুদ্যানে লুকানো হাজার বছরের পুরানো এই সুরক্ষিত শহর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ওই সময়ের জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। ওই সময়েই মানুষ ধীরে ধীরে যাযাবর থেকে শহুরে পরিবর্তিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

আন্তর্জাতিক সাময়িকী পিএলওএস ওয়ানে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিতও হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-নাতাহ নামে অভিহিত শহরের অবশিষ্টাংশগুলো দীর্ঘকাল ধরে খায়বারের প্রাচীর ঘেরা মরুদ্যানে লুকিয়ে ছিল। যা আরব উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত একটি সবুজ এলাকা।

টলমল পানি

খায়বার মরুদ্যানে সুরক্ষিত পানি, যেখানে আল-নাতাহ শহরটি নির্মিত হয়েছিল, ছবি: দ্য ইন্ডেপিডেন্ট ইউকে

শহরটিতে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, ব্রোঞ্জের তৈরি কুঠার ও ছোরা, তৈজসপত্র, চীনামাটির তৈরি পাত্র ও মূল্যবান রত্নপাথর পাওয়া গেছে। আল-নাতাহকে ঘিরে রয়েছে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ। প্রাচীরটির বয়সও শহরটির সমান।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী, শহরটি পত্তনের কাছাকাছি সময়ে ভূমধ্যসাগরের তীরে বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাকে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠছিল। প্রায় ৫০০ বাড়িঘর পাওয়া গেছে আল-নাতাহে। তবে শহরটিতে রাজা-প্রজা ও ধনী-দরিদ্রের বিভাজন এত বেশি ছিল না বলে নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা।

মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন শহরে ছিল রাজা-প্রজা ও ধনী-দরিদ্রের বিভাজন ছিল অনেক বেশি। আল-নাতাহ শহরটি পত্তনের এক হাজার বছর পর, অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের জন্মের ১ হাজার ৪০০ বছর আগে জনশূন্য হয়ে পড়ে। তবে কী কারণে শহরটি জনশূন্য হয়ে গেল তা এখনো নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি গবেষকরা।

মদিনার অদূরে

প্রায় ৫০০ বাড়িঘর পাওয়া গেছে আল-নাতাহে, ছবি: প্রেস এক্সপ্রেস

গবেষণা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ গিলাম শালোঁ। শালোঁ জানান, শহরটি যিশুখ্রিস্টের জন্মের অন্তত ২ হাজার ৪০০ বছর আগে। এই সময়টি ছিল মানবসভ্যতার ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশের প্রারম্ভিককাল। অন্য কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর আক্রমণে এই শহরটি জনশূন্য হয়নি। কারণ সৌদির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আগ্নেয় শিলা বা ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত পর্বতমালা এই শহরটির সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট ছিল।

আল-নাতাহ যারা গড়ে তুলেছিলেন, সেই সময়ের হিসাবে স্থাপত্যবিদ্যায় বেশ অগ্রসর ছিলেন বলে জানিয়েছেন শালোঁ। কারণ যেসব বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে অনেকগুলোর গাঁথুনি এখনো মজবুত। এমনকি শহরটিতে বেশ কয়েকটি দ্বিতল বাড়িও ছিল। আল-নাতাহ শহর গড়ে ওঠার সময় ভূমধ্যসাগর বরাবর লেভান্ট অঞ্চলে শহরগুলো বর্তমান সিরিয়া থেকে জর্ডান পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছিল। সেই সময়ে উত্তর-পশ্চিম আরবকে অনুর্বর মরুভূমি বলে মনে করা হতো। যাযাবররা প্রতিনিয়ত এ অঞ্চল অতিক্রম করত।

আল-নাতাহ-এর আবিষ্কার শুধু আরব উপদ্বীপের ইতিহাসের পরিধিকে বিস্তৃত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রত্নতত্ত্বে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান তাত্পর্যকেও তুলে ধরে। সুরক্ষিত মরুদ্যান উপদ্বীপের প্রারম্ভিক শহুরের প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো অনন্য পরিবেশের আভাস দেয়।

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডেপিডেন্ট ও লাইভ সায়েন্স

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ