স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করলো সৌদি আরব।বিশ্বের প্রথম এআই-চালিত চিকিৎসা ক্লিনিক চালু করলো সৌদি আরব। এই ক্লিনিকটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সাহায্যে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান করে, যা চিকিৎসা খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এআই-চালিত ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অভিনব প্ল্যাটফর্মে রোগীরা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই ক্লিনিকটি রোগীদের ডেটা বিশ্লেষণ করে দ্রুত এবং নির্ভুল রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করবে। এটি কেবল রোগ নির্ণয়ই করবে না, বরং রোগীদের জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিকল্পনা তৈরি করতেও সক্ষম হবে। এর ফলে, প্রতিটি রোগী তাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাবে।
এই ক্লিনিকটি উন্নত মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে রোগীর উপসর্গ ও মেডিকেল ইতিহাস বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য রোগ নির্ণয় করে। এছাড়াও, রোগীদের জন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদান করে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে চিকিৎসা সেবা আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়েছে, বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষের জন্য।
যদিও এআই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাচ্ছে, তবে মানবিক স্পর্শের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। সৌদি আরবের কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতালের প্রধান ড. মেজেদ আলসওয়াইলেম বলেন, ‘এআই প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, এটি কখনোই চিকিৎসকদের সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।’
এই উদ্যোগটি সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’-এর একটি অংশ, যার লক্ষ্য হলো প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতকে আধুনিকীকরণ করা। স্বাস্থ্যখাতে এআই-এর ব্যবহার এই লক্ষ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের এআই ক্লিনিকগুলি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের চাপ কমাতে এবং রোগীদের জন্য আরও উন্নত ও সহজলভ্য চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে সহায়ক হবে।
তবে, এই প্রযুক্তির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা এবং এআই-এর রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এই বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় নীতি ও প্রোটোকল তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মসজিদে নববীতেও সম্প্রতি হাজিদের জন্য স্মার্ট এআই মেডিকেল ক্যাপসুল চালু করা হয়েছে। ‘তাবা’ ও ‘তিবাবাহ’ নামের এই ক্যাপসুলগুলো সিহা ভার্চুয়াল হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত, যা রোগীদের দ্রুত বিশেষায়িত চিকিৎসা সহায়তা প্রদানে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, সৌদি রেড ক্রিসেন্ট অথরিটি তাদের উন্নত চিকিৎসা দলের মাধ্যমে দ্রুত হৃদরোগের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রেও দক্ষতা দেখিয়েছে। সম্প্রতি, তারা মসজিদে নববীতে এক বয়স্ক ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের দ্রুত চিকিৎসা করে তাকে হায়াত ন্যাশনাল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
সব মিলিয়ে, সৌদি আরবে স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। সৌদি আরব স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত, দ্রুত এবং সহজলভ্য করার জন্য বদ্ধপরিকর। এই পদক্ষেপগুলি ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশকেও অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা যায়।
এই ক্লিনিকটি কিভাবে কাজ করবে, এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো কী কী, এবং এটি রোগীদের অভিজ্ঞতার উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে, নিঃসন্দেহে এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
সূত্র: আল এরাবিয়া ইংলিশ ও এনডিটিভি
