Home বিজ্ঞান ‘ডায়ার উলফ’ কি সত্যিই ফিরছে?

‘ডায়ার উলফ’ কি সত্যিই ফিরছে?

তাসনিম তাবাসসুম
৫৭ views

‘গেম অফ থ্রোন্স’ দেখেননি এমন সিরিজপ্রেমী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই মহাকাব্যিক সিরিজে স্টার্ক পরিবারের প্রতীক ও অভিভাবক হিসেবে যে বিশাল ও শক্তিশালী পৌরাণিক প্রাণীদের দেখা যায়—তারাই ডায়ার উলফ। শুধু কল্পনার ফসল নয়, বাস্তবেও এক সময় পৃথিবীতে বিচরণ করেছিল ডায়ার উলফ (Aenocyon dirus) নামের এই বিলুপ্ত প্রাণী।

প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রাজত্ব করত এই বিশালাকার বন্য নেকড়ে। তারা ছিল আধুনিক গ্রে উলফের চেয়ে বড়, শক্তিশালী এবং অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। গেম অফ থ্রোন্স-এর নির্মাতারা এই বাস্তব প্রাণী থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের কাল্পনিক ডায়ার উলফদের সৃষ্টি করেন।

স্টার্ক পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য ছিল একটি করে ডায়ার উলফ—যেমন জন স্নো-এর ‘ঘোস্ট’ বা আরিয়ার ‘নাইমেরিয়া’। তারা শুধু প্রাণী ছিল না, বরং স্টার্কদের ব্যক্তিত্ব, ভাগ্য ও বেঁচে থাকার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একইভাবে, বাস্তবের ডায়ার উলফও এক সময় ছিল প্রাকৃতিক ভারসাম্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

3 1

‘কোলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ বিলুপ্ত ডায়ার উলফ প্রজাতির ‘পুনর্জন্ম’ দাবি করছে। ছবি: কোলোসাল বায়োসায়েন্সেস

আজ যখন বিজ্ঞানীরা এই বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরে আনার কথা বলছেন, তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে—’ঘোস্ট কি ফিরছে?’ সাম্প্রতিক ‘রোমুলাস’ ও ‘রেমুসের’ জন্ম—সেগুলো আদৌ সত্যিকারের ডায়ার উলফ কি না, তা নিয়েই চলছে তীব্র বিতর্ক।

টেক্সাসভিত্তিক বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান ‘কোলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ সম্প্রতি রোমুলাস ও রেমুস—এর জন্ম দিয়েছে, যাদেরকে তারা বিলুপ্ত ডায়ার উলফ (Aenocyon dirus) প্রজাতির ‘পুনর্জন্ম’ দাবি করছে। প্রাণীগুলো আধুনিক গ্রে উলফের (Canis lupus) জিন সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে যাতে বিলুপ্ত ডায়ার উলফের বৈশিষ্ট্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। এই ঘোষণা বৈজ্ঞানিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে এর বৈজ্ঞানিক সম্ভাব্যতা, নৈতিকতা এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে।

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া
কোলোসাল টিম প্রাচীন দাঁত এবং খুলির অংশ থেকে ডায়ার উলফের জিনোম বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় প্রাণীটির ডিএনএ আধুনিক গ্রে উলফের সঙ্গে ৯৯.৫% মিল আছে। এরপর তারা সিআরএসপিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রে উলফের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি নির্দিষ্ট পরিবর্তন আনে যা ডায়ার উলফের বাহ্যিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য পুনরায় তৈরি করতে সাহায্য করে। এই সম্পাদিত নিউক্লিয়াস গুলো গৃহপালিত কুকুরের ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করে ভ্রূণ সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, এভাবেই রোমুলাস ও রেমুস–এর সৃষ্টি।

বিতর্ক ও সমালোচনা
যদিও কোলোসাল এই ঘটনাকে ডায়ার উলফ পুনর্জীবনের প্রথম সাফল্য দাবি করছে, অনেক বিজ্ঞানী এর বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, এই প্রাণীগুলো প্রকৃত ডায়ার উলফ নয়, বরং কিছুটা মিলযুক্ত জেনেটিকালি মডিফাইড গ্রে উলফ।

2og

অনেক বিজ্ঞানীর মতে প্রাণীগুলো প্রকৃত ডায়ার উলফ নয়, বরং কিছুটা মিলযুক্ত জেনেটিকালি মডিফাইড গ্রে উলফ, ছবি: স্টাফ

নিউজিল্যান্ডের পালিওজেনেটিসিস্ট ডঃ নিক রলেন্স বলেন, ‘ডায়ার উলফ ও গ্রে উলফের বিবর্তনীয় বিভাজন ২৫ থেকে ৬০ লক্ষ বছর আগে ঘটে গেছে। এত বড় সময়ের ব্যবধানে শুধুমাত্র কিছু জিন সম্পাদনা করে একটি বিলুপ্ত প্রজাতিকে পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।’

অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর অ্যানসিয়েন্ট ডিএনএর পরিচালক জেরেমি অস্টিন বলেন, ‘এই প্রাণীগুলো কোনো প্রজাতিগত সংজ্ঞায় ডায়ার উলফ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মতো নয়। সেই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এদের বর্তমান পরিবেশে রাখার যৌক্তিকতা কী এবং আদৌ কোনো বাস্তব পরিবেশগত ভূমিকা রাখবে কিনা।’

নৈতিক ও পরিবেশগত ভাবনা
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার চেয়ে বিদ্যমান বিপন্ন প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের প্রকল্পে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ ব্যবহৃত হয়, যার কার্যকারিতা এখনও প্রমাণিত নয়।

সূত্র: দ্য সান ও দ্য সায়েন্টিস্ট

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ