Home মুখোমুখি যারা আত্মসমর্পণ করতে চান তারা এখানে আসবেনই: ফকির জাহিদ শাহ্‌

যারা আত্মসমর্পণ করতে চান তারা এখানে আসবেনই: ফকির জাহিদ শাহ্‌

সুপ্রভা জুঁই
২০১ views

সাধু, আপনার নাম-পরিচয় জানতে চাই।

আমার নাম, ফকির জাহিদ শাহ্‌। ঝিনাইদহের হরিশপুরে আমার বাড়ি। আমি ফকির পাঞ্জু শাহ্‌ এর বংশধর ও তাঁর ঘরানার। আমার গুরুপাঠ হয়েছে মানিকগঞ্জের ফকির আক্কাস শাহ্‌ এর কাছে। ঝিনাইদহের শৈলকূপায় এসে উনি থাকতেন। ওফাত হওয়ার আগে উনি আমার বাড়িতে চলে এসেছিলেন। ওনার মাজার আমার বাড়ির পাশেই। উনিও পাঞ্জু শাহ্‌ ঘরানার। আমাকে দিয়ে পাঁচ পুরুষ এই তরিকায় আছে। আমাদের পরম্পরায় পীরত্ব চলে। 

পাঞ্জু শাহ্‌ এর সাথে ফকির লালন শাহ্‌ এর কেমন সম্পর্ক ছিল?

তাঁরা দু’জনে একই সময়ে সাধন ভজনে ছিলেন। পারস্পারিক সম্প্রীতি ছিল দেখার মতো। দুই ভাই একই সাথে নিজ নিজ ভাবের কাজ করে গিয়েছেন। এই যে এখন যেমন দোল পূর্ণিমার দিনে লালনের মাজারে আমরা একসাথে কাফেলায় বসেছি, ঠিক সেরকমই উনারাও সমসাময়িক ছিলেন। তবে লালন সাইজি বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। এই যেমন এখানেও আমার অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন কিন্তু আমরা একইসাথে সাধন ভজনে আছি।

পাঞ্জু শাহ্‌ এর বিচরণ এলাকা কোথায় ছিল?

উনার পূর্বপুরুষেরা আফগানিস্তানের। সেখান থেকে এসে তারা তারা ঝিনাইদহে জমিদারি পান। পাঞ্জু শাহ্‌ এর জন্ম হরিশপুরেই। পরে শৈশব পেরিয়ে কৈশোর ও যৌবনে তিনি বাউল তরিকার সঙ্গে পরিচিত হন। ঐ এলাকায় নানা সাধু ছিলেন। হিরু চাঁদ সেই এলাকার একজন সাধু যিনি পাঞ্জু শাহ্‌ এর গুরু ছিলেন। মূলত তাঁদের সঙ্গে সংগ করতে করতে তাঁর মাঝে তরিকা মনোভাব জাগ্রত হয়। এছাড়া ওনার পরিবারে এই ভাবনার চল ছিল না। বেশ যুদ্ধ করেই এই পথটা ওনাকে বেছে নিতে হয়। এরপর তিনি কোলকাতায় পড়াশুনা করেন। আরবি, ফার্সি, বাংলা, ঊর্দু ও ইংরেজি এই পাঁচ বিষয়ে ডিগ্রিও লাভ করেন। 

যে দোল পূর্ণিমার জন্য আজকে সবাই ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়ায় মিলিত হয়েছে সেই দোলের মর্মার্থ যদি আমাদের বলতেন।

লালন সাইজি তাঁর সময়ে দোল উৎসব পালন করতেন। দোলের আসলে নানা স্তর ও গভীরতা আছে। তবে সহজ স্তর হচ্ছে দোল। অর্থ জন্ম স্থিতি। আবার এভাবেও বলা যেতে পারে জন্মসূত্র। দোল পূর্ণিমার তিথিতে মহাপুরুষ চৈতন্যের আবির্ভাব একথা আপনারা জানেন। আবার দোলে পূর্ণ চন্দ্রের উদয় হয়। কোথায়, কোথায় এই চন্দ্রের উদয় হয়? এখন এটা কেউ বলতে পারেন আমার বক্ষে, বা কপালে, বা আকাশে, বা চক্ষুতে যার জ্ঞান যেখানে যায় আর কি সে সেখানে বলে থাকে। তো এই পূর্ণচন্দ্রকে ধারণ করে দোল।

দোল মানে কি? দোল মানে নাচানাচি, দোলা, আনন্দ উৎসব, উল্লাস! এই উল্লাসটা কখন আসে? ভিতরে গৌরাংগ ভাবের উদয় হলে ভবে একটা তরী জন্ম হয়। আর তারপরে একটা আলোর সৃষ্টি হয়। এখানে একটা গান ধরলে চারদিক লোকে ভরে যাবে। তারমানে পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হয়েছে। এটাই হচ্ছে দোল পূর্ণিমা, দোলা লাগবেই। দুলবেই সবাই। এর আরো গভীরতা আছে হয়তো সাঁইজি জানে। হয়তো আমার অতদূর জ্ঞান এখনো যায়নি। 

তরিকায় কিছু মানুষ আসে, অনেকেই আসে না। ভাবের এই বোধ কারো হয় কারো হয় না। এর কারণ কি সাধু? 

এটা সৃষ্টিজগতের একটা রহস্য। এখানে জীব আর পরমের কিছু খেলা আছে। এটা একটা থিওরি। জীব আর পরমের কিছু হিসাব আছে। যেমন অসুরি শক্তি কখনো পরমের কাছে নত হয় না। এই অসুর হচ্ছে জীব। যে জীব যখন তখন যাকে-তাকে আক্রমণ করে বসতে পারে। কিন্তু একজন পরম পা ফেলতে হলেও দেখবে আমার পায়ের নিচে একটা পিঁপড়া পড়ল কিনা, সে ব্যথা পেল কিনা!

তার মানে নম্র, আত্মসমর্পণকারী। আপনি দেখেন ইসলামেও সেই কথায় বলা। যে আত্মসমর্পণ করেছে বা মুসলিম হয়েছে তার মাঝে শান্তি বা ইসলাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আত্মসমর্পণের পরেই শান্তি বর্ষিত হবে। ফলে যারা আত্মসমর্পণ করেছে বা করতে চান তারা এখানে আসবেনই, তাদেরকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু যাদের জ্ঞানচক্ষু খোলেনি তারা অবশ্যই এদেরকে এড়িয়ে চলবে।

আমি যে সাদা পোশাকটা পরেছি এটা কি নিষেধ আছে কোথাও? কিন্তু এই পোশাকে বের হলে আমাকে ভণ্ড বলছে। এটাতো পোশাক। রঙ্গিন হলে কিন্তু আর ঐ কথা বলতো না। পোশাক দেখেও ভণ্ড তকমা দিচ্ছে। তাহলে এদের জ্ঞান কোথায় নেমে এসেছে! 

দোল পূর্ণিমার এই পবিত্র তিথিতে সাঁইজির কোন কালামটা আপনার এখন বেশি মনে পড়ছে যদি আমাদেরকে একটু জানাতেন।

‘‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে/আমরা ভেবে করবো কি…’’ এই চাঁদ কিন্তু লেগে গিয়েছে, চাঁদ শুরু হয়ে গিয়েছে। কি চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগে যায়নি? আমার লালন সাঁইজি একটা চাঁদ, সেই চাঁদের জন্য দেখেন হাজার হাজার চাঁদ এসে গিয়েছে। লেগে গিয়েছে কিন্তু। এই ব্যাখ্যা বহু রকমের আছে। এখন গানের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো না। ভাবের পথিক যারা তাদের সাথে নিবিড়ভাবে এই ভাবের কথা হবে। 

ধন্যবাদ আপনাকে সাধু। 

জ্বি, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ