Home বাণিজ্য নতুন বছরে অর্থনীতিতে যত চ্যালেঞ্জ

নতুন বছরে অর্থনীতিতে যত চ্যালেঞ্জ

ইকবাল হোসেন
১৭০ views

অর্থনীতির বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সঙ্গে নিয়ে ২০২৫ সালে পদার্পণ করেছি আমরা। নতুন বছরে সামষ্টিক অর্থনীতির কয়েকটি সূচকে নজর দিতে হবে। যেমন— কয়েক বছর ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ, ব্যাংক খাত, স্তিমিত বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা, বিদেশি ঋণ, রাজস্ব আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি।

পাশাপাশি বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার কথা। আগামী বাজেটের আগে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তার আলোকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিকে বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় পার করতে হবে। সবকিছুর পেছনে কাজ করবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পটভূমি। ফলে প্রত্যাশা কিছুটা বেশিই থাকবে।

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ খাদ্যমূল্যস্ফীতির কারণে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ। সুদের হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নজর দিতে হবে সরবরাহ ব্যবস্থার দিকেও। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ শতাংশের উপরে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, খাদ্যপণ্যের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ার পেছনে কারণ বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা। তিনি হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, পেঁয়াজ, ডিম, তেলের মতো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমরা দেখেছি খুচরা পর্যায়ে সেই পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে। সমস্যা সমাধানে করণীয় কী, তা অজানা নয়। যে কোনো কারণেই হোক, সেগুলো প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি সরকারকে উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বিনিয়োগে গতি ফেরানো
দেশি কিংবা বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগই স্থবির হয়ে রয়েছে। নতুন বছরে বিনিয়োগে গতি আনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। মনে রাখা দরকার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল কারণ ছিল বেসরকারি খাতের অপ্রতুল কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান না বাড়লে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে না। বৈষম্য নিরসনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগ প্রত্যাশা।

রাজস্ব খাতের সংস্কার
জরুরি ভিত্তিতে এ কাজ করতে হবে সরকারকে। শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণ করা নয়, সরকারের ঋণনির্ভরতা কমাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানো দরকার। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে আরও বেশি ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে।

শিল্প খাতে নিরাপত্তা
সরকার পরিবর্তনের পরপরই শিল্পাঞ্চলে যে অস্থিরতা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল তার কিছুটা উপশম হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সন্তোষজনক নয়। নতুন বছরে ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি আশা করবেন।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দাম নিয়েও রয়েছে অন্তোষ। অন্যান্য পরিষেবা ও অবকাঠামো উন্নতির দিকে এবার নজর দিতে হবে।

ব্যাংক খাতের সংস্কার শেষ করা
গত সরকারের সময় লুটপাটের শিকার হয়েছে অনেক ব্যাংক। এই খাতে সংস্কার শুরু হয়েছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। ব্যাংক খাতের ‘চিরন্তন’ সমস্যা খেলাপি ঋণ। গত বছরজুড়ে খেলাপি ঋণ ছিল লাগামছাড়া। সেই লাগামহীন খেলাপি ঋণ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর।

রিজার্ভ সংকট মোকাবিলা
গত বছর বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফের নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ বিলিয়ন ডলার। নতুন বছরে রিজার্ভ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।

ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা
উদ্যোক্তাদের আশা, নতুন বছরে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হবে। সুদের হারের লাগাম টানার ব্যবস্থা হবে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা সবার ভেতর একটা আস্থার পরিবেশ ফিরে আসুক। মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ যেন দৃঢ় হয় নতুন বছরে। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হলে তাতে বিনিয়োগ বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

কৃষি খাত চাঙা করা
প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু আমদানির উৎস সীমিত হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে হলে স্থানীয় সরবরাহ বাড়াতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন,  অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক বিষয়ও আছে , যেমন রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ভালো। সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পেরেছে। বিনিময় মূল্য বেশ কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর সম্প্রতি আবার কিছুটা টাকার অবনমন হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিনিময় মূল্য স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ