আমাদের নিত্যদিনের সাধারণ অভ্যাস, কিন্তু ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর। এই সাধারণ অভ্যাস যার ফলে নিজের অজান্তেই স্বাস্থঝুঁকি বাড়ায় তা হলো, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা আধুনিক জীবনের একটি অভ্যাস, বিশেষ করে যারা অফিসে কাজ করেন বা প্রযুক্তি-নির্ভর পেশায় নিয়োজিত।
এনওয়াইইউ ল্যাংগনের কার্ডিওলজিস্ট স্টিফেন উইলিয়ামসের মতে, দীর্ঘ সময় বসে থাকা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা এমনকি ক্যান্সারের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। যদি আপনি এমন কাজ করেন যেখানে সারাদিন বসে থাকেন, তবে হালকা হাঁটাও উপকারী। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী ঘণ্টায় ২.৫ মাইল বেগে হাঁটা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে নানান রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে থাকে। তাই বসে থাকাকে নিরুৎসাহিত করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। টানা বসে থাকলে শরীরের যে ধরনের সমস্যা হয় তা এই নিবন্ধে তুলে ধরা হলো-
হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটালের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন সাড়ে ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসে থাকেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এমনকি নিয়মিত ব্যায়াম করলেও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার নেতিবাচক প্রভাব কমে না।
ডায়াবেটিস ও স্থূলতা
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরের গ্লুকোজ বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, পেটের চারপাশে চর্বি জমে স্থূলতা বাড়ে, যা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যারও কারণ হতে পারে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সাথে কোলন, এন্ডোমেট্রিয়াল এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এটি অবসাদেরও কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে, ছবি: ফ্রিপিক
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি
অতিরিক্ত বসে থাকার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের মাত্রা বাড়াতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এটি অবসাদেরও কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর উপায়
নিয়মিত বিরতি নিন
প্রতি ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পরপর ৫ মিনিটের জন্য উঠে হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং পেশির কার্যকারিতা বজায় থাকে। বিশেষজ্ঞরা প্রতি ৩০ মিনিটে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটার পরামর্শ দেন। নিয়মিত মাঝারি-তীব্রতার কার্যকলাপ, যেমন দ্রুত হাঁটা, দীর্ঘ সময় বসে থাকার নেতিবাচক প্রভাব কমাতে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।
দৈনিক শারীরিক কার্যকলাপ
প্রতিদিন অন্তত ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট মাঝারি মাত্রার শারীরিক কার্যকলাপে (যেমন দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং) নিয়োজিত থাকুন। এটি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।

দ্রুত হাঁটা দীর্ঘ সময় বসে থাকার নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সহায়তা করে, ছবি: ফ্রিপিক
কাজের সময় পরিবর্তন আনুন
দাঁড়িয়ে মিটিং করা, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা এবং ফোনে কথা বলার সময় হাঁটা—এমন ছোট ছোট পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে বড় উপকারে আসতে পারে।
সচেতন জীবনযাপন
টিভি, মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন। অতিরিক্ত সময় বসে থাকার পরিবর্তে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সচেতনভাবে শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করতে হবে এবং বসে থাকার সময় কমিয়ে আনতে হবে, যাতে সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবনযাপন করা যায়।
সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট ও ডক্টর স্পট