লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এ বিজয়। বিশ্বের কোনো জাতি এত দাম দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ২৫ মার্চে গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আমাদের মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। ভাষা, সংস্কৃতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। এ জাতীয়তাবোধ আবহমান বাংলার অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় বাঙালি জাতিকে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় ছিলো ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদের রক্তস্নাত এক মহিমান্বিত বিজয়।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ। দেশ ও জাতি হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু এই মহিমান্বিত বিজয়ের জন্য যে অসাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্যহীনতা অর্জনের প্রয়োজন ছিলো তা কিন্তু এখনও আমরা অর্জন করতে পারিনি।
স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫৩ বছর পরও জনগণকে বারবার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমে প্রাণ দিতে হচ্ছে। অসুস্থ রাজনীতির বলি হতে হচ্ছে মানুষকে। জাতির প্রত্যাশা ছিল রাজনীতিকে হবে জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও সাধারণ মানুষের সহজ অংশগ্রহণসমৃদ্ধ।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপন করছি। আজ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নতুন রূপ নিচ্ছে, আমরা চাই এই পরিবর্তন জাতির উন্নতি, ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে সাফল্য এনে দেবে। পরিবর্তিত এই সম্ভাবনাময় দিনে আবার আমাদেরকে বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
আমাদের যুব সমাজ, তরুণ প্রজন্ম আজ আশার আলো জ্বালিয়ে দেশকে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে সম্ভাবনার শক্তি, ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। এই প্রজন্মের কাঁধে আমাদের দেশের উন্নয়নের ভার, আর তাদের হাত ধরে আমরা যেতে চাই নতুন এক স্বপ্নময় দিগন্তে।