ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় তাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছেন টেক জায়ান্ট ইলন মাস্ক। ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের প্রচারণায় তিনি শুধু বিপুল পরিমাণ অর্থই খরচ করেননি, বরং সক্রিয়ভাবে ট্রাম্পের সভা, সমাবেশ ও র্যালিতে অংশ নেন। পাশাপাশি নিজের মালিকানায় থাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’কে এই কাজে ব্যবহার করেন। কয়েক মাসের জন্য ‘এক্স’ যেন পরিণত হয় ট্রাম্পের মুখপত্রে।
আর এতেই ভয়ানকভাবে চটেছেন ট্রাম্প বিরোধীরা। মাস্কের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তারা দলে দলে ‘এক্স’ বয়কট করতে শুরু করেন। এর বিকল্প হিসেবে তারা মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ‘ব্লুস্কাই’ ব্যবহার করতে শুরু করেন। যদিও মাস্কের জন্য ‘এক্স’ গণমাধ্যমে যে পরিমাণ প্রচার পেয়েছে, ‘ব্লুস্কাই’ ততটা পায়নি। তারপরও গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রি অ্যাপ হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে ‘ব্লুস্কাই’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গত কয়েকদিনেই এর ব্যবহারকারী বেড়েছে ৫ মিলিয়নেরও বেশি। সব মিলিয়ে বর্তমানে এর ব্যবহারকারী ১৯ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
ব্লুস্কাই কি?
২০১৯ সালে টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি ‘ব্লুস্কাই’ নামে অ্যাপ আনার ঘোষণা দেন। ডরসি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যেখানে থাকবে না তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা এবং ব্যবহারকারীরা নির্দ্বিধায় বাকস্বাধীনতার চর্চা করতে পারবেন। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই নিয়ে কাজ শুরু করেন। দুই বছরের পরিশ্রমের পর ২০২১ সালে চালু হয় ‘ব্লুস্কাই’। অবশ্য ডরসি ব্লু স্কাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা হলেও এ বছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড থেকে বেরিয়ে যান। বর্তমানে অ্যাপটির মালিকানা প্রধান নির্বাহী জে গ্রেবারের কাছে।

ব্লু স্কাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি
ছবিঃ টিউবফিল্টার
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতোই ‘ব্লুস্কাই’য়ের হোমপেজে সার্চ, নোটিফিকেশনের মতো ফিচার রয়েছে। ব্যবহারকারীরা এখানে পোস্ট, কমেন্ট, লাইক কিংবা রিপোস্ট করতে পারেন। প্রথমে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য তৈরি হলেও এখন আইফোন ও ডেস্কটপ ইউজাররাও এটি ব্যবহার করতে পারবেন। গ্রাহক অভিজ্ঞতার দিক থেকে বলা যেতে পারে এটা অনেকটা ‘এক্স’ এর মতোই একটি প্ল্যাটফর্ম।
বর্তমান অবস্থা ও ব্যবহারকারী
নিঃসন্দেহে ‘ব্লুস্কাই’ এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ। ‘ব্লুস্কাই’ কি ‘এক্স’কেও কি ছাড়িয়ে যাবে? এখনই হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না। তবে ট্রাম্পের জয়ের পর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর ব্যবহারকারী বা গ্রাহক। শুধু সাধারণ জনগণই নয়, সেলিব্রেটিরাও দিন দিন ঝুঁকছে এর দিকে। এর পেছনে ‘এক্স’-এর বেশ অবদান আছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যারা ‘এক্স’ ছেড়েছেন তারাই মূলত ‘ব্লুস্কাই’ ব্যবহার শুরু করেছেন। সাংবাদিক, বাম ঘরানার ও উদারপন্থি রাজনৈতিক ও সেলেব্রিটিরা দলে দলে ‘ব্লুস্কাই’য়ে অ্যাকাউন্ট খুলছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ‘এক্স’ ছাড়ার কারণ হিসেবে ‘হেট স্পিচ’ এর কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াও ব্যবহারকারীদের এই অ্যাপে ঝুঁকে পড়ার আরেকটি কারণ হলো কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন না থাকা।
‘ব্লুস্কাই’ ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছেন এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থনকারী ব্যবসায়ী মার্ক কিউবান ও প্রভাবশালী কংগ্রেস সদস্য আলেক্সান্দ্রা ওরকাসিও কর্টেজ। এছাড়া নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, ভ্যানিটি ফেয়ার ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো সংবাদমাধ্যমও ইতিমধ্যে ‘ব্লুস্কাই’ ব্যবহার শুরু করেছে। সম্প্রতি নামকরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ‘এক্স’-এ পোস্ট করা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা একে ‘বিষাক্ত গণমাধ্যম’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই দ্য গার্ডিয়ান ‘ব্লুস্কাই’ ব্যবহার শুরু করবে।