বিশেষভাবে সক্ষম মানুষেরা অপেক্ষাকৃত বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন৷ এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা পাওয়ার সুযোগ বেশ সীমিত৷ নতুন এক অ্যাপ এই পরিস্থিতি বদলাতে কাজ করছে৷ এটি তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে৷
জার্মানিতে সাইবার বুলিংয়ের পরিসংখ্যানে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয় না৷ কিন্তু সহায়তা-কর্মীদের জন্য এটা এক উদ্বেগের ইস্যু৷ ২০২৩ সালে বার্লিনের একটি শেল্টারড ওয়ার্কশপ এ ব্যাপারে একটি জরিপ করেছে৷
৭৫ জন এতে অংশ নিয়েছেন৷ তাদের ৭০% শতাংশ নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন৷ তবে তাদের ৪০% কখনো সাইবার বুলিংয়ের কথা শোনেননি৷ বাকি ৬০% শুনেছেন৷ আর তাদের ৩৭% সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন৷
সাশা ওমিদি একজন কর্মক্ষেত্রে বুলিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে বার্লিনে কাজ করেন৷ তার অনেক খদ্দেরই অনলাইনে নিজেদের বিশেষভাবে সক্ষমতার কথা প্রকাশ করায় বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন৷
সহিংসতা প্রতিরোধক পরামর্শক সাশা ওমিদি জানান, মাঝেমাঝে মানুষ আমাকে বলেন: ‘‘দৃশ্যমানতা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ আমি যেমন তেমনই হতে চাই, এবং এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷” কিন্তু তারা সেটা করতে গিয়ে শত্রুতা, বাজে এবং অবমাননাকর মন্তব্যের শিকার হবেন আশা করেননি৷ ফলে এসবে ধাতস্থ হতে তাদের একটা কঠিন সময় পার করতে হয়৷’
তার খদ্দরদের সহায়তার জন্য যাওয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই৷ এ কারণে দুই বছর আগে এক অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রকল্প শুরু করেন সাশা ওমিদি৷ বুলিংবিরোধী একটি অ্যাপ বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়৷ অ্যাপটি মূলত শিশু ও তরুণদের রক্ষায় ইইউ ক্লিকসেইফ উদ্যোগের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল৷
সাশা ওমিদি আরো জানান, আমরা প্রকৃত অ্যাপের সব তথ্য সহজ ভাষায় ভাষান্তর করেছি এবং সেগুলো বিস্তৃত করেছি৷ আমরা কাউন্সিলিং সেন্টারের প্রকৃত তালিকাও হালনাগাদ করেছি৷ এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে৷’
ইজি হেল্প নামের অ্যাপটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশের পর একলাখের বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে৷ বধির এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন৷ এটিতে সাইবার বুলিং সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে৷ পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট সুরক্ষার উপায় জানানো হয়েছে৷ অন্যদেরকে ইমোশনাল সাপোর্ট দিতে ছোট ছোট ভিডিওযুক্ত রয়েছে অ্যাপে৷
সহিংসতা প্রতিরোধক পরামর্শক সাশা ওমিদি জানান, সহিংসতা প্রতিরোধে মানুষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা এবং তাদেরকে যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা ক্ষমতায়ন এবং মানুষকে দেখানো যে, ‘আমি আমার পরিবেশের উপর প্রভাব রাখতে পারি, আমি ব্যবস্থা নিতে পারি৷” এভাবে তারা মিডিয়া লিটারেসি সম্পর্কেও ধারনা পায়৷’
ভিডিওগুলোতে যাদের দেখানো হয়েছে তাদের একজন পেট্রিক স্টোডলনি৷ তার মানসিক অসুস্থতা রয়েছে এবং তিনি একটি শেল্টারড ওয়ার্কশপে কাজ করেন৷ ২০১০ সালে তিনি ফেসবুকে বুলিংয়ের শিকার হন৷
ইউএসই গেএমবেহার ওয়ার্কশপ কর্মী পেট্রিক স্টোডলনি বলেন, ‘‘তখন এসব বেশ নতুন ছিল এবং আমিও তেমন কিছু জানতাম না৷ কী ঘটেছিল তা বর্ণনার জন্য একটা নাম থাকলে তখন ভালো হতো, এবং সহায়তার জন্য যাওয়ার জায়গাও দরকার ছিল৷ তাহলে আমি অতটা অসহায় এবং একা অনুভব করতাম না৷’
নিজের বাসায় এবং শেল্টারড ওয়ার্কশপে কাউন্সিলিং সার্ভিস পেতেও সহায়ক অ্যাপটি৷ পেডাগগ একম্পানিং সার্ভিসেস ইউএসই জেএমবেহার কেস্ট্রিন ফাইফার জানান, এভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা জমা রয়েছে অ্যাপটিতে৷ এটি অন্য মানুষকে তাদের আচরণের প্রভাব বুঝতে সহায়তা করে৷ বিশেষ করে সেটা বুলিংয়ের পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে কিনা৷ তাদের এমনটা ভাবায় যে, ‘আমি বুঝিনি যে যা করেছি তা অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল৷’
তাই প্রকল্পটির স্পন্সরদের আশা এটা সূচনামাত্র৷ সাইবার বুলিং এক বিস্তৃত সমস্যা৷ এবং এই সমস্যা প্রতিরোধে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সহায়তা প্রয়োজন৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে