পৃথিবীতে পিঁপড়ার বিচরণ প্রায় ১৪ কোটি বছর ধরে। নতুন এক হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে ২০ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়া রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক জীবিত মানুষের বিপরীতে প্রায় আড়াই মিলিয়ন। ক্ষুদ্র এই সামাজিক প্রাণীটি যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি শক্তিশালী।
পিঁপড়া নিজের ওজনের ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্ত ভার বহনে সক্ষম। এই অসাধারণ ক্ষমতার পেছনে তাদের শারীরিক গঠন, পেশীর কার্যকারিতা এবং সামাজিক আচরণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পিঁপড়ার শরীরের সবচেয়ে জটিল অংশ হলো তাদের ঘাড়। ঘাড়ের গঠন তাদের মুখে ধরে থাকা কোনো বস্তুর সম্পূর্ণ ওজন বহনে সহায়তা করে। পিঁপড়ের দেহ ও মাথা আলাদা আলাদাভাবে শক্ত আবরণে আবৃত থাকে। নরম কলা ও শক্ত আবরণের সংযোগস্থলের নকশা ও গঠন ঘাড়কে আরও শক্তিশালী করে তোলে তাই এরা শরীরের তুলনায় বহুগুণ ভারী জিনিসও তুলে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

লিফকাটার পিঁপড়া (Atta এবং Acromyrmex প্রজাতি) তাদের শরীরের ওজনের ২০ গুণ পর্যন্ত ভার বহন করতে পারে, ছবি: রেইনফরেস্ট অ্যালায়েন্স
পিঁপড়াদের জীবন ব্যবস্থা এমন যে তাদের সবসময় সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হয়। তাদের মধ্যে কাজের সুষম বণ্টন ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা জটিল ও ভারী কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। দলগতভাবে তারা খাদ্য সংগ্রহ, বাসা নির্মাণ এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই সমন্বিত প্রচেষ্টা তাদের শক্তি ও কার্যকারিতাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
এশিয়ান উইভার পিঁপড়া (Oecophylla smaragdina) তাদের শরীরের ওজনের ১০০ গুণ পর্যন্ত ভার বহন করতে সক্ষম। এমনকি মসৃণ পৃষ্ঠে উল্টো অবস্থায় থেকেও তারা এই ভার বহন করতে পারে, যা তাদের পায়ের বিশেষ আঠালো প্যাডের কারণে সম্ভব হয়।
লিফকাটার পিঁপড়া (Atta এবং Acromyrmex প্রজাতি) তাদের শরীরের ওজনের ২০ গুণ পর্যন্ত ভার বহন করতে পারে। তারা তাজা পাতা কেটে তা ফাঙ্গাস চাষের জন্য ব্যবহার করে, যা তাদের প্রধান খাদ্য উৎস।

আমেরিকান ফিল্ড পিঁপড়ার ঘাড়ের সংযোগস্থল তাদের শরীরের ওজনের ৫,০০০ গুণ পর্যন্ত চাপ সহ্য করতে সক্ষম, ছবি: গেট লস্ট পেস্ট কন্ট্রোল
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সাধারণ আমেরিকান ফিল্ড পিঁপড়ার ঘাড়ের সংযোগস্থল তাদের শরীরের ওজনের ৫,০০০ গুণ পর্যন্ত চাপ সহ্য করতে সক্ষম। গবেষকরা মনে করে, পিঁপড়ের ঘাড় কীভাবে কাজ করে, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারলে তারা উন্নত মানের রোবোট তৈরি করতে পারবে।পিঁপড়া সম্পর্কে অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক গবেষণাগারে এদের ওপর কাজ হচ্ছে।
সূত্র: পপুলার সাইন্স ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি