Home বিজ্ঞান চ্যালেঞ্জার ডিপ: সমুদ্রের গভীরতম গহ্বর

চ্যালেঞ্জার ডিপ: সমুদ্রের গভীরতম গহ্বর

তাসনিম তাবাসসুম
৫৯ views

পৃথিবীর অন্যতম বিষ্ময়গুলোর একটি হলো প্রশান্ত মহাসাগরের। এই বিশাল জলরাশিতে এমন গভীর স্থান আছে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, এখানে পানির চাপ এত বেশি যে সাধারণভাবে জীবন ধারণ সম্ভব না। প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে গভীর খাত হলো মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এখানেই আছে মহাসাগরের সবথেকে গভীর বিন্দু, চ্যালেঞ্জার ডিপ। 

চ্যালেঞ্জার ডিপ ভূত্বকের একটি ডুবন্ত অঞ্চল, যেখানে টেকটনিক প্লেট একে অপরের নিচে সরে গিয়ে এক গভীর খাতের সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা প্রায় ১০,৯৮৪ মিটার (৩৬,০৩৭ ফুট)—যা প্রায় ১১ কিলোমিটার। তুলনা করে বলা যায়, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট যদি এই স্থানে স্থাপন করা হয়, তার চূড়াও পানির নিচে থাকবে! এখানে পানির চাপ এত প্রবল যে, মানুষের গায়ে থাকা এক বর্গইঞ্চি জায়গায় প্রায় ৮ টন ওজনের চাপ পড়বে।

m2

ডাম্বো অক্টপাস, ছবি: বিবিসি

১৮৭২-১৮৭৬ সালে, ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর একটি জরিপ জাহাজ এইচএমএস চ্যালেঞ্জার একটি অভিযান পরিচালনা করে যা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতার প্রথম রেকর্ডিং করে। এই অভিযানের সময়, এইচএমএস চ্যালেঞ্জার ত্রুরা ওই অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করার জন্য শব্দ যন্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা পরে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এবং বিশেষ করে চ্যালেঞ্জার ডিপ নামে পরিচিত হয়েছিল। ব্রিটিশ রয়েল নেভির জরিপ জাহাজ এইচএমএস চ্যালেঞ্জারের নামানুসারেই ‘চ্যালেঞ্জার ডিপ’ নামকরণ করা হয়েছে। 

১৯৬০ সালে, সুইস প্রকৌশলী জ্যাক পিকার্ড এবং মার্কিন নৌ কর্মকর্তা ডন ওয়ালশ প্রথমবারের মতো ডুবোজাহাজ ট্রিয়েস্ট-এ করে চ্যালেঞ্জার ডিপে পৌঁছান। এরপর ২০১২ সালে, বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন একক অভিযানে ডিপসি চ্যালেঞ্জার নামক সাবমার্সিবলে করে গভীর এই স্থান দর্শন করে।

m1 1

ব্যারেল আই ফিশ, ছবি: মন্টেরে বে একুয়ারিয়াম

চ্যালেঞ্জার ডিপ অন্ধকার, ঠান্ডা এবং চরম চাপযুক্ত এলাকা হলেও, বিজ্ঞানীরা সেখানে জীবন খুঁজে পেয়েছেন। বিশেষ ধরণের ব্যাকটেরিয়া, এককোষী জীব ও এমনকি কিছু রহস্যময় সামুদ্রিক প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে। যেমন মারিয়ানা হাডাল শামুক, বিশাল অ্যাম্ফিপড, জেনোফাইওফোরস, সি কিউকাম্বার, সামুদ্রিক পোকা ও শ্রিম্প । এটি প্রমাণ করে যে, জীবন চরম পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে।

চ্যালেঞ্জার ডিপ এক বিস্ময়কর গন্তব্য, যা মানব কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। এই রহস্যময় গভীরতা আমাদের অনন্ত কৌতূহলের প্রতীক এবং প্রমাণ করে যে, পৃথিবীর বুকে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার করা বাকি। এর গভীরতা শুধু পানি নয়, ধারণ করে মহাবিশ্বের রহস্যের ছায়াও।

সূত্র: বিবিসি ও ডিসকভারি

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ