Home বিজ্ঞান মস্তিষ্কের মায়াজাল: বেগুনি রঙ কেন বাস্তবে নেই?

মস্তিষ্কের মায়াজাল: বেগুনি রঙ কেন বাস্তবে নেই?

তাসনিম তাবাসসুম
১১৬ views

আমরা প্রতিদিন চারপাশে নানা রঙ দেখি—লাল, নীল, সবুজ, হলুদ। কিন্তু জানেন, বেগুনি রঙ আসলে বাস্তবে অস্তিত্বই রাখে না। এটি আমাদের মস্তিষ্কের একটি কল্পনা মাত্র। চলুন জেনে নেই বেগুনি রং নিয়ে  বিজ্ঞান কী বলে। 

মানুষের চোখ প্রধানত তিনটি মৌলিক রঙ শনাক্ত করতে পারে: লাল, সবুজ ও নীল। কিন্তু বেগুনি রং  কোনো আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে আসে না। বরং, আমাদের মস্তিষ্ক লাল ও নীল রঙের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নিজেই বেগুনির অনুভূতি তৈরি করে। 

রঙের বিজ্ঞান
আমাদের চোখে কোন (cone) কোষ নামে পরিচিত তিন ধরনের আলোকসংবেদী কোষ রয়েছে, যা মূলত তিনটি মৌলিক রঙ শনাক্ত করতে পারে। লাল (দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য), সবুজ (মাঝারি তরঙ্গ দৈর্ঘ্য) ও নীল (ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য) আলোকসংবেদী কোষ বিভিন্ন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের প্রতিক্রিয়া করে আমাদের মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায়। মস্তিষ্ক তখন সেই সংকেত বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন রঙের অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

কিন্তু বেগুনি কেন আলাদা?
দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সাধারণত ৩৮০ ন্যানোমিটার (নীল) থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার (লাল) পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু এই বর্ণালীর কোথাও বেগুনি নেই! তাহলে আমরা কীভাবে এটি দেখি?

spectrum

দৃশ্যমান বর্ণালী একটি সাধারণ সরলরেখার মতো, যার একপ্রান্তে লাল ও ওপর প্রান্তে নীল রং অবস্থিত। সূত্র: ফ্রিপিক

তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সংমিশ্রণ
বেগুনি আসলে লাল ও নীল আলোর সংমিশ্রণ থেকে তৈরি হয়। যখন আমাদের চোখ লাল ও নীল রঙের আলোর সংকেত গ্রহণ করে, তখন মস্তিষ্ক একে মিশ্রিত করে নতুন একটি রঙের অনুভূতি তৈরি করে, যা আমরা “বেগুনি” বলে চিনি। বেগুনি হল লাল (দীর্ঘ) এবং নীল (ছোট) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মিশ্রণ। বেগুন বা লাইলাকের মতো বেগুনি রঙের কিছু দেখলে, ছোট এবং দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উভয় কোন কোষকে উদ্দীপ্ত করে। এটি মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে। যদি দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কোন কোষ উত্তেজিত হয়, তাহলে রঙ লাল বা তার কাছাকাছি হওয়া উচিত। যদি স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শঙ্কু উত্তেজিত হয়, তাহলে রঙ নীলের কাছাকাছি হওয়া উচিত।

সমস্যা হলো এই রঙগুলি বর্ণালীর বিপরীত প্রান্তে থাকে। দৃশ্যমান বর্ণালী একটি সাধারণ সরলরেখার মতো যার একপ্রান্তে লাল ও ওপর প্রান্তে নীল রং অবস্থিত। বেগুনি রং তৈরি করতে আমাদের মস্তিষ্ক এই সরলরেখাকে  একটি বৃত্তে বাঁকায়। এর ফলে এই বিপরীত রংগুলোকে অর্থাৎ নীল এবং লালকে একে অপরের পাশে রাখে।

রঙের বৃত্ত ও মস্তিষ্কের কৌশল
রঙ চাকা বা কালার হুইল হলো দৃশ্যমান বর্ণালীর রঙ এবং একে অপরের সাথে তাদের সম্পর্ক উপস্থাপনের জন্য ভিজ্যুয়াল আর্টসে ব্যবহৃত ডায়াগ্রাম। দৃশ্যমানরঙগুলো একটি বৃত্তে পদ্ধতিগতভাবে সাজানো হয়, প্রতিটি রঙ সাধারণত তিনটি বিভাগের একটিতে বিভক্ত হয়: প্রাথমিক, মাধ্যমিক, অথবা মধ্যবর্তী।রঙের চাকা (color wheel)-এ  দেখা যায়, বেগুনি সবুজের বিপরীত অবস্থানে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, সবুজ ও বেগুনি একসঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিদ্যমান নয়। কিন্তু মস্তিষ্ক যখন লাল ও নীল রঙকে একসঙ্গে অনুভব করে, তখন এটি বেগুনিকে আলাদা একটি রঙ হিসেবে উপস্থাপন করে, কারণ এটি সবুজ থেকে একেবারে আলাদা কিছু তৈরি করতে চায়!

তাহলে বাস্তবে বেগুনি নেই?
বেগুনি রঙ আসলে কোনো “বাস্তব” রঙ নয়। এটি আমাদের মস্তিষ্কের তৈরি একটি দৃষ্টিভ্রম। তাই, আমরা যাকে বেগুনি দেখি, তা আসলে অন্য রঙের মিশ্রণে তৈরি এক মায়াবী অভিজ্ঞতা! বিজ্ঞান বলে, আমাদের দেখা অনেক কিছুই মস্তিষ্কের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে। বেগুনি তার অন্যতম উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে, আমাদের বাস্তবতা আসলে কতটা নির্ভরশীল আমাদের মস্তিষ্কের ব্যাখ্যার ওপর।

সূত্র: এসএন এক্সপ্লোরস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ