মঙ্গল গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা নিয়ে চলমান গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যা মঙ্গলে একসময় উষ্ণ পানির উপস্থিতি প্রমাণ করে। এই গবেষণার ফলাফল মঙ্গল গ্রহের প্রাথমিক অবস্থায় বাসযোগ্য পরিবেশ থাকার সম্ভাবনাকে উজ্জীবিত করেছে।
গবেষকরা ২০১১ সালে সাহারা মরুভূমিতে পাওয়া ‘ব্ল্যাক বিউটি’ নামে পরিচিত একটি মঙ্গলীয় উল্কা এনডাব্লিউএ ৭০৩৪ বিশ্লেষণ করেছেন। এই উল্কা মঙ্গল গ্রহের প্রাচীনতার প্রমাণ বহন করে এবং তার মধ্যে ৪৪৫ কোটি বছরের পুরনো একটি জিরকন (যা একটি খনিজ পদার্থ) কণা পাওয়ার পর, তারা তাতে জলসমৃদ্ধ তরলের ভূ-রাসায়নিক চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন।
এই জিরকন কণার মধ্যে জল সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, প্রাচীন মঙ্গলে পানি ছিল এবং এটি মঙ্গল গ্রহের প্রাথমিক ম্যাগমাটিক (অগ্নিমূলক) কার্যকলাপের সময় উপস্থিত ছিল। এ থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে, মঙ্গলে এক সময় এমন এক পরিবেশ ছিল যেখানে পানি ও উষ্ণতা সঠিক পরিমাণে উপস্থিত ছিল, যা পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষক দলের সদস্য আরন ক্যাভোসি জানিয়েছেন, আমরা ন্যানো-স্কেলের ভূ-রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মঙ্গল গ্রহে ৪৪৫ কোটি বছর আগে উষ্ণ জলের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ পেয়েছি।
এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা মঙ্গলের প্রাচীন ভূ-তাপীয় ব্যবস্থা এবং গ্রহটির জীবনের অতীত ক্ষমতাকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলের ভূ-তাপীয় ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে মঙ্গলের উপরিভাগ গঠনের সময়ে পানির অস্তিত্ব ছিল, যা বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরির একটি মূল উপাদান।
গবেষণার ফলাফলে মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠে প্রাচীন উল্কার আঘাতে সৃষ্টি হওয়া পরিবেশের বিভিন্ন দিকও উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে ব্যাপক মাত্রায় উল্কার আঘাত সইতে হয়েছিল, যা গ্রহটির ভূগঠনকে পরিবর্তিত করেছিল। তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও প্রায় ৪১০ কোটি বছর আগে গ্রহটিতে পানি উপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই পানি মঙ্গলের সুপ্রাচীন ভূ-তাপীয় ক্রিয়াকলাপের সময় গড়ে উঠেছিল, যা ভবিষ্যতে গ্রহটির জীবনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করেছিল।
ব্ল্যাক বিউটি’ নামে পরিচিত মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডের একটি নমুনা, ছবি: কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল
এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের উপরিভাগ গঠনের সময় পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। এটি মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এর পাশাপাশি, এই আবিষ্কার মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপন বা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের মহাকাশ অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করার সময় পরিবেশগত পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে পারে।
এছাড়া, এই গবেষণায় কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী দলের পাশাপাশি অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও যুক্ত ছিলেন, এবং এর নেতৃত্ব দিয়েছেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গবেষণা সহযোগী জ্যাক গিলেস্পি। বর্তমানে তিনি সুইজারল্যান্ডের লসান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন।
এই নতুন গবেষণা মানবজাতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং এটি ভবিষ্যতে মঙ্গলে জীবন ধারণের সম্ভাবনা ও প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
