বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৮ ই মার্চ নারীর ক্ষমতায়ন ও সমানাধিকারের প্রতীক হিসেবে বিশ্ব নারী দিবস উদযাপিত হয়। নারী দিবসের গুরুত্ব বহুমুখী। নারীদের সংগ্রাম, অর্জন, সাফল্য, অধিকার, সমতা, সমাজে তাদের অবদান কে সম্মান জানানোর এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার গল্প তুলে ধরার একটি উপলক্ষ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম পালিত হয় ১৯১১ সালে। মূলত, নারীর ভোটাধিকার এবং শ্রম অধিকার দাবি করার জন্য দিনটি পালিত হয়েছিল।আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পারপেল বা বেগুনি রং প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যা নারীর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
নারী দিবসের মাধ্যমে সমাজে লিঙ্গ সমতার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। এ দিবসের মাধ্যমে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দান ও নারীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করণে পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে।
বর্তমানে নারী প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
যেমন, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ক্রীড়া, শিল্প-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে চলেছেন।
একটি সুন্দর সমাজ গঠনের মূল শক্তি নারী শিক্ষা। নারীরা এখন অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
একটা সময় যেসব কাজ কেবল পুরুষদের জন্য মনে করা হতো, সে সব ক্ষেত্রেও নারীরা সাফল্য দেখাচ্ছেন। উদ্যোক্তা, উন্নয়ন, ব্যাংকিং, কর্পোরেট লিডারশিপ, গবেষণা, পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা সায়েন্স এর মতো খাতেও নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের উইম্যান ইন ডিজিটাল, গার্লস ইন আইসিটির মতো বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম নারীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। এছাড়া নারীদের জন্য আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং স্টার্টারগুলো তাদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করছে।
স্থানীয় পর্যায়ে থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিকভাবেও মেয়র, সাংসদ, প্রশাসনিক প্রধান, কূটনীতিক এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে নারীদের ভূমিকা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নারীরা এগিয়ে চলেছেন। ফুটবল, আর্চারি, অ্যাথলেটিক্স, শুটিং সহ বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে এখনো অনেক বাধা আছে।
কর্মক্ষেত্রে সমান বেতন, হয়রানি প্রতিরোধ, মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা, আইনি সহায়তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য আরো বেশি সুযোগ তৈরি করা জরুরী।
বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতি সহিংসতা, বাল্য বিবাহ, শিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থান সংকট এখনো বড় সমস্যা। তবে, নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জগুলো পেরিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে।
নারী দিবস শুধু উদযাপনের জন্য নয়, এটি নারীদের অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্দোলনের প্রতীক। আমাদের সমাজের নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং তাদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, উন্নত সমাজ গঠনে নারী দিবস গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নারী দিবসের অঙ্গীকার হোক “সমান সুযোগ, সমান অধিকার, নারীর হাতেই আগামীর পৃথিবী”