বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা মণি শঙ্কর আইয়ার। খবর পিটিআইয়ের।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে ‘ঠিক’, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটেছে তারা ‘শেখ হাসিনার সমর্থক’ হওয়ার কারণে।
“ওগুলো (হিন্দুদের ওপর হামলার যেসব খবর এসেছে) সত্য, তবে অতিরঞ্জিত। অনেকগুলো ঘটনাই মূলত রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ঘটেছে।”
ষোড়শ এপিজে সাহিত্য উৎসবে অংশ নিতে শনিবার (১১ জানুয়ারি) কলকাতায় গিয়েছিলেন মণি শঙ্কর আইয়ার। সেখানে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে এমন মত প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে সম্প্রতি এক রিপোর্টে বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, তদন্ত করে দেখা গেছে, সংখ্যালঘুদের হামলার ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মাত্র ২০টি সাম্প্রদায়িক। এর মধ্যে ১৬১টি হামলার অভিযোগ ‘ভুয়া’।
অপরদিকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার ১ হাজার ৪৫২টি ঘটেছে ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগের দিনে। এদিকে পুলিশ বলছে, সংখ্যালঘুদের হামলার ক্ষেত্রে ৫৩টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ৪ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং ১০০ জনের বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ৪ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে ১৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৬২টি ক্ষেত্রে। আর ধরা পড়েছে ৩৫ জন। অপরদিকে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপর ২ হাজার ২০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর যে দাবি বাংলাদেশ জানিয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের সাবেক এই মন্ত্রী বলেছেন, “আমার মনে হয়, আমরা সবাই একমত হব যে, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য অনেক করেছেন। তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে আমি খুশি। যত দিন তিনি থাকতে চান, সেটা যদি তার বাকি জীবনও হয়, তাকে সেই আতিথ্য আমাদের দেওয়া উচিত।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা, যার দল আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাকে এখন দিল্লির একটি সেইফ হাউজে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করার সুযোগ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে।
আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গণহত্যা ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। ভারত এর আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি। বরং হাসিনার ভারতবাস দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দিতে তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
গত ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরকে স্বাগত জানিয়ে মণি শঙ্কর আইয়ার পিটিআইকে বলেন, “এই আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার এবং ভারতের উচিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সরাসরি মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক করা।”
এর আগে এপিজে সাহিত্য উৎসবের একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে মণি শঙ্কর আইয়ার বলেন, পাকিস্তানিরা ভারতীয়দের ‘মতই’, কেবল দেশভাগের দুর্ঘটনা তাদের আলাদা রাষ্ট্রের বাসিন্দা করেছে।
“আমি একজন তামিল, আমার স্ত্রী পাঞ্জাবি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে একজন পাকিস্তানি পাঞ্জাবির যতটুকু পার্থক্য আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি পার্থক্য রয়েছে আমাদের মধ্যে।”
নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা আইয়ার বলেন, “আমাদের (পাকিস্তানে) সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সাহস আছে, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে এক টেবিলে আলোচনায় বসার সাহস এই সরকারের নেই “
তার ভাষায়, পাকিস্তান সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে ঠিক, কিন্তু দেশটি সন্ত্রাসের শিকারও হচ্ছে।
“তারা ভেবেছিল তালেবানকে তারা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আনতে পারবে। কিন্তু সেই তালেবানই এখন তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি।’
এ বিষয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রশংসা করে আইয়ার বলেন, এককভাবে তার ‘সবচেয়ে বড় সাফল্য’ ছিল কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পথ তৈরি করা, যার ভিত্তিতে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ চার দফা চুক্তির কথা বলেছিলেন।
মণি শঙ্কর আইয়ারের ভাষায়, মনমোহন সিং দেখিয়েছিলেন, সামরিক সরকারের সঙ্গেও আলোচনা সম্ভব। ভারতের উচিত তার দেখানো পথে কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।