শিশুকে সঠিকভাবে লালন-পালনের জন্য বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলেই শিশুকে উপযুক্তভাবে লালন-পালন করা যাবে, এমনটা হলফ করে বলা যায় না। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও পরিবার, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, শিক্ষার মান ইত্যাদি নানা বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত।
প্রশ্ন জাগতে পারে, পৃথিবীর কোন দেশ শিশুদের লালন-পালনের জন্য সেরা? ইউনিসেফ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে একটি ‘রিপোর্ট কার্ড’ বা তালিকা তৈরি করে। তালিকার প্রথম ৫টি দেশ হলো— জাপান, এস্তোনিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস।
তালিকার প্রতিটি দেশই ধনী। এরমধ্যে বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় শিশুদের লালন-পালনের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধায় প্রথম স্থানে রয়েছে জাপান। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন জাপান সেরা।
শিশুদের সুস্থতার বিষয়ে ইউনিসেফের ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জাপান প্রথম স্থানে রয়েছে। দেশটি মূলত শিশু মৃত্যু ঠেকানো এবং জীবনের প্রথম দিকে স্থূলতা প্রতিরোধ করার দিকে নজর দেয়।
ইউনিসেফের ২০২২ সালের রিপোর্ট কার্ডে পরিবেশের দিক থেকে জাপান দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এর মধ্যে শহরগুলোয় বনায়ন এবং ট্রাফিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
জাপানে শৈশবে স্থূলতার হার সবচেয়ে কম। পাশাপাশি, শিশুমৃত্যুর হার কম, বায়ু ও পানি দূষণের মাত্রাও (যা শিশুদের প্রভাবিত করে) কম।
জাপান যেকোনো পরিবারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা যেমন কম ঘটে, তেমনি যেকোনো দেশের তুলনায় জাপানে খুনের হার সবচেয়ে কম, প্রতি লাখে মাত্র দশমিক দুই জন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ, কানাডায় এক দশমিক আট শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় দশমিক আট শতাংশ।
টোকিওর একসময়ের বাসিন্দা মামি মাকিগ এখন লন্ডনে থাকেন। তিনি জানান, নিরাপত্তা মানে হচ্ছে পরিবারগুলিকে আর উদ্বিগ্ন হতে হবে না, সেইসাথে শিশুরা অবাধে তাদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবে। তিনি বলেন, ছয় বছর বয়স থেকে বাচ্চারা নিজেরাই স্কুলে যেতে পারে৷ স্কুল হাঁটার দূরত্বের মধ্যে না থাকলে তারা একা একাই বাস বা ট্রেনে যেতে পারে।
শিশুরা টোকিওর চারপাশে হাঁটতে পারে এবং নিজে নিজে স্কুলে যেতে পারে। এটি ওই দেশে স্বাভাবিক কারণ সেখানকার পরিবেশ খুবই নিরাপদ। বাচ্চাদের নিয়ে কেউ তেমন দুশ্চিন্তা করে না, কারণ এর প্রয়োজন নেই।
স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ছাড়াও, জাপানে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। ইউনিসেফের উন্নয়ন সহযোগী ‘ওইসিডি’র তথ্য অনুসারে, এর শিক্ষা ব্যবস্থা ৭৬টি দেশ এবং অঞ্চলগুলির মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে।
যেসব বাবা-মা কাজ করেন, কোম্পানিগুলো তাদের পেইড প্যারেন্টাল লিভ বা বেতনভুক্ত ছুটি দিয়ে থাকে। কর্মজীবী পিতা-মাতা ১২ মাসের মধ্যে যেকোনো সময় এই ছুটি নিতে পারেন এবং এই ছুটি কাটানোর জন্য তাদের কোনো বেতন কাটা হয় না। দেশটিতে পুরুষদের ছুটির বিষয়ে আরও ছাড় দেওয়ার কাজ চলছে।
মামি মাকিগের মতে, মজার বিষয় হচ্ছে, জাপানে পরিবারগুলোর জন্য এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, স্থানীয় মানুষরা এতে খুশি নয় এবং তারা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে। তিনি বলেন, আপনি অনেক হতাশার কথা শুনতে পারেন, কারণ আমরা অন্যান্য দেশের ইতিবাচক দিকগুলি দেখি এবং জাপানের সাথে তুলনা করি।
মাকিগ আরও বলেন, এটি একটি সাংস্কৃতিক বিষয়ও। আপনি নম্রতার খাতিরে অতিরঞ্জিত কিছু বলতে চাইবেন না। কিন্তু আমি মনে করি জাপান শিশুদের লালন-পালনের জন্য খুব চমৎকার একটি জায়গা।